বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (৫১)

– বিজন সাহা

বাংলাদেশে আবার শিক্ষক অপমানিত হলেন। শুধু তাই নয় একজন শিক্ষক খুন হলেন দশম শ্রেণির ছাত্রের হাতে। আমেরিকার স্কুলে কিছুদিন পর পর সন্ত্রাসীদের হাতে ছাত্র ও শিক্ষক খুন হওয়ায় সেখানে পুলিশি পাহারা, শিক্ষকদের হাতে অস্ত্র দেওয়া ইত্যাদি কথা উঠছে অস্ত্র বিক্রি কড়াকড়ি করার আইন করার কথার পাশাপাশি। আমাদের দেশে এসব অবশ্য আর সন্ত্রাসবাদীরা করছে না। ছাত্র ও জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অজুহাতে কারও গলায় পরাচ্ছে জুতার মালা, কাউকে কান ধরে ওঠবস করাচ্ছে। করছে প্রকাশ্য দিবালোকে, অনেক সময় পুলিসের সামনে। ধর্মীয় অনুভূতি শিখণ্ডীর মত রাষ্ট্র যন্ত্রের সামনে এসেছে দাঁড়াচ্ছে আর আরও বেশি লোকের অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে সেই ভয় প্লাস ভোটের হিসাব নিকাশের গোলক ধাঁধাঁয় ঘূর্ণিপাক খাওয়া সরকার ও প্রশাসন চোখে ঠুলি এঁটে সব সহ্য করে যাচ্ছে। হয়তো বা এতে কেউ কেউ খুশিই হচ্ছে। কারণ এসব শিক্ষকদের বেশির ভাগ সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক, বিধর্মী। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা যে এতে করে করে জমি জায়গা, টাকা পয়সা ইত্যাদি ইহজাগতিক লাভই হচ্ছে না, বিধর্মী মেরে যে পুণ্য অর্জন করা গেল সেটা ভাঙ্গিয়ে পরকালেও স্বর্গরাজ্যে অন্তত এক রুমের একটা বাসা ভাড়া নেয়া যাবে। শত হলেও এতগুলো হুরপরী। তাদের নিয়ে তো কোথাও বসতে হবে। নিজের ঘরের একটা মজাই আলাদা।

সমস্যা হল ইতিহাস থেকেই কেউই শিক্ষা নেয় না। আমরা তো একেবারেই না। তাহলে কেন প্রথম ইনিংসের ভুল দ্বিতীয় ইনিংসেও করব? তবে আমরা একা নই। যদি বাহান্ন থেকে শিক্ষা নিত ইউক্রেন সহ বিভিন্ন দেশ তাদের জনগণের এক অংশকে মাতৃভাষা থেকে বঞ্চিত করে বিপদ ডেকে আনত না। শুধু ভাষা নয় যেকোনো ক্ষেত্রেই জনগণের এক অংশের অধিকার হরণ এক সময় সমস্ত জাতির জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনে। জাতির প্রতিটি প্রতিনিধি শরীরের একেকটা অংশ। কোথাও পচন ধরলে এক সময় সেটা সারা শরীরেই ছড়িয়ে পড়ে। তাই সচেতন মানুষ যেমন শরীরের প্রতিটি অঙ্গের যত্ন নেয় দেশপ্রেমিক সরকার তেমনি জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় সচেতন হয়। তা না হলে যে পচন শুরু হয় একদিন তা সমস্ত সমাজকে গ্রাস করে।

এক সময় আমরা জনসংখ্যার আধিক্যের কথা বলতাম। এটাকে অভিশাপ মনে করতাম। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা বাড়লেও উন্নত দেশগুলোয় তা নিম্নগামী। তাই সেসব দেশে দক্ষ শ্রমিকের কদর বাড়ছে। আজ দেশে যে অর্থনৈতিক উন্নতি সেটা মূলত এই অতিরিক্ত মানুষের বিভিন্ন দেশে কাজ করার কারণেই। তাই জনসংখ্যা আজ আর অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ। আসল কথা এটা সঠিক ভাবে কাজে লাগানো। আর এর জন্যে দরকার শিক্ষা। শুধু পেশাদার শ্রমিক হিসেবেই নয় সত্যিকারের মানুষ করে গড়ে তোলাই হবে এই শিক্ষার মূল কথা।

যদিও পাকিস্তান গড়ে উঠছিল ধর্ম ভিত্তিক দ্বিজাতি তত্ত্বের মধ্য দিয়ে আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ ব্যাপক ভোট দিয়ে পাকিস্তানের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার পথ উন্মুক্ত করেছিল, তবুও স্বাধীনতার ছয় মাসের মধ্যেই দেখা গেল, ধর্ম ছিল রাজনৈতিক হাতিয়ার, এক হয়েও ধর্ম পাকিস্তানের দুই অংশের মানুষকে সমান করতে পারেনি। সেই থেকে শুরু জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। জন্ম বাংলাদেশের যার মূলনীতি ছিল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র। বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ যেখানে হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃস্টান সবার থাকবে সমান অধিকার। সবাই মিলে সবার জন্য একটা স্বাধীন দেশ গড়ে তুলবে। আমাদের ভুলে যাওয়া উচিৎ নয় যে পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল জনগণের একাংশকে তার  অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য। এই বঞ্চনার ফল  সমস্ত দেশের উপরই নেমে আসে, দেশ ভাঙ্গে, আজও পাকিস্তানের মানুষ সেটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি, আজও সেখানে বিভিন্ন রকম বঞ্চনার গল্প – তা সেটা সেক্টেরিয়ান হোক আর জাতিগত হোক। অসুখ একবার ঢুকলে সহজে বেরুতে চায় না, ক্যানসারের মত ধীরে ধীরে সমস্ত দেহকে অচল করে দেয়। কোথাও দ্রুত, কোথাও বা ধীরে ধীরে।

একথা সর্বজন বিদিত যে দেশ সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য দরকার শিক্ষিত মানুষ তা সে একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হোক আর জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষিত হোক। ব্রিটিশরা এ কারণেই এদেশের মানুষকে তাদের মত করে শিক্ষিত করে তোলে আর হিন্দুরাই প্রথমে সেটা গ্রহণ করতে এগিয়ে আসে। আর একারণেই দেশভাগের পর পর যখন প্রচুর হিন্দু দেশত্যাগ করে তখন শিক্ষকের অভাব দেখা দেয়। এখন যখন বিদেশে কাজ উন্মুক্ত হবার ফলে প্রচুর মানুষ বাইরে যাচ্ছে আর সেজন্যে প্রয়োজন পড়ছে মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার তখন এখনও থেকে যাওয়া হিন্দু জনগোষ্ঠীর এক উল্লেখযোগ্য অংশ সেই কাজটা নিতে পারত। হ্যাঁ তারা বিশেষ করে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কাজ করে নিজেরাও যেমন সম্মানের সাথে বাস করতে পারত তেমনি দেশের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। দেশে তো বিভিন্ন রকমের কর্ম বিভাজন আছেই। কেউ মাছ মারে, কেউ চুল কাটে, কেউ কামার, কেউ কুমার। মানে জন্মসূত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে একই পেশায় কাজ করা নতুন কিছু নয়। আমি বলছি না যে হিন্দু হলেই তাকে মাস্টার হতে হবে, তবে হিন্দু জনগোষ্ঠী শিক্ষা ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারত। আর এর মধ্যে দিয়ে সবাই লাভবান হত। আমাদের ছোটবেলায় গ্রাম গঞ্জের স্কুলগুলোয় হিন্দু শিক্ষকের সংখ্যা অনেক ছিল। সেটা এখন অবশ্য দিন দিন কমছে বিভিন্ন কারণেই। যদিও পৃথিবীর ইতিহাস বলে জাতিতে জাতিতে, দেশে দেশে, রাজায় রাজায় লড়াই অর্থ আর ক্ষমতার জন্য। তারপরেও এতে ধর্মের স্থান একেবারে নগন্য নয়। বিভিন্ন সময় ধর্মকেই ব্যবহার করা হয়েছে নিজেদের আর্থিক ও ক্ষমতার লোভ মেটানোর জন্য। এখনও হচ্ছে।

বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে চোখ রাখলে অনেক পোস্ট দেখা যায় যেখানে অনেকেই লিখেছে যে তারা নিজেদের শিক্ষকদের সম্মান করে চলতেন। নানা জনে নানা ভাবে বর্তমান অবস্থার ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছে। আমার মনে হয় এ জন্যে বর্তমান উন্নয়ন কিছুটা হলেও দায়ী। খুব দ্রুত বিত্তশালী হওয়া যায়, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা হওয়া যায় না। আজকাল গ্রামে গঞ্জে বিত্তশালী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সমাজে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে তারা স্কুল কলেজের বিভিন্ন কমিটিতে ঢুকছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজ ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে দেশে রাজনীতিহীনতার অথবা অপরাজনীতির সুযোগে অনেকেই সেটা ব্যবহার করছে নিজেদের ক্ষমতা দেখাতে। আর এ কারণেই বিভিন্ন ভাবে শিক্ষকগণ আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। অনেকে বলার চেষ্টা করে যে এতে শিক্ষকদের দোষ আছে। তারা ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট পড়ান, নিজের ছাত্রদের বেশি বেশি মার্ক দেন ইত্যাদি। তবে এটা মনে হয় মূল সমস্যা নয়।

বেশ কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত মস্কোয় আমাদের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে দেশে এমনকি চৌকিদারের চাকরি পেতে লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। সেটা যদি সত্য হয়, বুঝতে হবে স্কুল কলেজও আজ পয়সার জায়গা যেখানে অনেক রুই কাতলা মারা যায়। যার ফলে অনেক আক্রমণের পরে শোনা যায় কিছু কিছু শিক্ষক এতে জড়িত আর সেটা কখনও প্রাইভেট পড়ানো নিয়ে, কখনও অন্য কোন আর্থিক কারণে। তবে ইদানীং কালে যাদের নাম উঠে এসেছে – যেমন শ্যামল কান্তি, লতা সমাদ্দার, হৃদয় মন্ডল, আমোদিনী পাল, স্বপন বিশ্বাস, সঞ্জয় সরকার, উমেশ রায়, মিল্টন তালুকদার, উৎপল সরকার, অরুণ কুমার বসাক – এরা সবাই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক। তাই এখানে সাম্প্রদায়িকতার কথা উঠবেই। তবে এটা পিওর সাম্প্রদায়িকতা নাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের নিজস্ব দুর্বলতা, তাদের প্রতি সরকার, প্রশাসন ও দেশের বিরাট অংশের মানুষের বিমাতা সুলভ মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিছু প্রভাবশালী মানুষের নিজেদের কাজ হাসিল করার পথ সেটাও মাথায় রাখতে হবে।

যেসব মানুষ এসব ঘটনাকে একান্তই সাম্প্রদায়িক হিসেবে দেখতে চায় তারা আবার দুই ধরণের। একদল নিজেরা সংখ্যালঘু আর তাই তারা এটা এভাবে দেখে অস্তিত্বের সংকট থেকে। আরেকদল সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রতিনিধি যারা এটা সমর্থন না করলেও যেহেতু তাদের এমন অবস্থায় পড়ার কারণ নেই তাই এসব ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক ভেবে পাশ কাটিয়ে যায়। এরা মূলত শিক্ষক সমাজের অন্তর্গত যারা পেশাগত ভাবে দায়বদ্ধ শিক্ষকদের উপর আক্রমণের প্রতিবাদ জানাতে। যদিও দু এক জায়গায় এর প্রতিবাদে মানব বন্ধনের কর্মসূচী পালিত হয়েছে সেটা একেবারেই অপ্রতুল। অনেকেই অভিযোগ করেছে যে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরণের শিক্ষক সমিতি নিশ্চুপ। সেটা কী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কী স্কুল শিক্ষক সমিতি। এখানে অনেকেই শিক্ষক সমাজকে দায়ী করেছে নিষ্ক্রিয়তার জন্য। আমার মনে হয় এটাও রাজনীতির বাই প্রোডাক্ট। আগে যখন স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি – এসব জায়গায় সুস্থ ছাত্র রাজনীতি ছিল, ফলে যারা সক্রিয় ভাবে ছাত্র রাজনীতি করত তারা তো বটেই, যারা এর বাইরে ছিল তারাও এক বিশেষ পরিবেশে মানুষ হত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখত। কিন্তু আজ এসব রাজনীতি নেই বললেই চলে। অনেক ছাত্র সংগঠনই অর্থ আর ক্ষমতার ভাগাভাগিতে ব্যস্ত। পরবর্তীতে এরাই বিভিন্ন ভাবে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায়। এসব শিক্ষকদের অনেকেই যত না শিক্ষক তার চেয়ে বেশি শিক্ষকবেশী দলীয় প্রতিনিধি। যাদের জীবনের লক্ষ্যই ছিল অর্থ আর ক্ষমতা তাদের কাছ থেকে ন্যায়ের জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার আশা করা বৃথা।

শিক্ষা – এটাও এক ধরণের সেতু যা অতীতের সাথে ভবিষ্যতের সংযোগ ঘটায়। শিক্ষাই আমাদের শেখায় কিভাবে অতীতে লব্ধ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে হবে, সব সময় প্রচলিত তত্ত্বের সঠিকটা ও কার্যকারিতার প্রতি প্রশ্ন রেখে নতুন পথ খুঁজতে হবে। কিন্তু আমরা যদি অতীতে ফিরে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করি তাহলে শিক্ষার আর কি দরকার। যদি আমরা ধর্মগ্রন্থকেই সমস্ত জ্ঞানের উৎস মনে করি, মনে প্রাণে সেটা বিশ্বাস করি তাহলে প্রশ্ন করতে শিখে কি হবে? এছাড়া আমাদের বেশির ভাগ মানুষের কাছেই তো শিক্ষা মানেই অর্থ উপার্জনের মাধ্যম মাত্র। তাই আমরা যদি শিক্ষাঙ্গনে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। কিন্তু অতিরিক্ত ধর্মীয় অনুভুতিপ্রবণ জাতি সেটা পারবে কি? অপরাধ প্রমাণিত হবার আগেই কাউকে শাস্তি দেয়া, তা সে গলায় জুতার মালা পরানো হোক, মারধোর করা হোক বা হত্যা করাই হোক – এ সবই পাবলিক লিঞ্চিং। এটা আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া, এটা রাষ্ট্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো –  রাষ্ট্রদ্রোহিতা। তবুও রাষ্ট্র নীরব। ফেসবুকে একজন প্রশ্ন রেখেছে
শিক্ষামন্ত্রী, আপনার একজন শিক্ষককে মেরে ফেলল আর আপনি নিশ্চুপ?
উত্তর দেবার জন্য যে ধরণের সততা, স্বচ্ছতা, রাজনৈতিক পরিবেশ থাকতে হয় সেটা আজ আর নেই। তাই তারা চুপ এই ভেবে যে বোবার শত্রু নেই। কিন্তু ইতিহাস বলে বোবারও শত্রু আছে। বোবার সবচেয়ে বড় শত্রু বোবা নিজে।
মনে হতে পারে এই সমস্যা শুধু ভুক্তভোগী শিক্ষকদের বা তাদের পরিবারের, হিন্দু সম্প্রদায়ের বা শিক্ষক সমাজের। আসলে এটা জাতীয় সমস্যা। কেন? মাত্র কয়েক দশক আগেও দেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল অতি নগণ্য। জনগণ ও সরকারের সার্বিক প্রচেষ্টায় আমরা সেটা বাড়াতে পেরেছি। এখনও দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে, বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে। প্রতি বছর দেশ থেকে মেধাবী ছেলেমেয়েরা বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এটা শুধু স্বচ্ছল জীবনের জন্যই নয়, নিরাপত্তা জনিত কারণেও। আর সেটা করছে হিন্দু মুসলমান সবাই। শিক্ষকদের উপর আক্রমণ ভবিষ্যতে অন্যদের এই পেশা গ্রহণে অনাগ্রহী করে তুলবে। মনে রাখবেন শিক্ষক আর ছাত্র পরস্পরের সম্পুরক। উভয়ে উভয়ের উপর নির্ভরশীল। ছাত্রকে যেমন শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতে হবে, শিক্ষককেও তেমনি ছাত্রকে স্নেহ করতে হবে। আর এই সম্পর্ক যাতে গড়ে ওঠে তার জন্য চাই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। শিক্ষক যখন ছাত্রদের সামনে অপমানিত হন ছাত্ররা কি তাঁকে শ্রদ্ধা করতে পারবে অথবা সেই শিক্ষক কি ছাত্রদের ভালবাসতে পারবেন, লজ্জিত বোধ করবেন না? অনেকেই লিখেছেন তারা ছাত্রজীবনে শুধু শিক্ষকদের শ্রদ্ধাই করতেন না, এখনও তাদের খোঁজ খবর নেন। আমরাও কখনও কোন শিক্ষক বিপদে পড়লে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছি। তাই আজ বিশেষ করে প্রয়োজন ছাত্রদের শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানো। শুধু ছাত্ররাই নয় তাদের অভিভাবকদেরও শিক্ষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই সব শিক্ষকদের ভালোমন্দের উপরে। নিজের জন্য, নিজের সন্তানের জন্য, দেশের জন্য সবাই শিক্ষকদের পাশে দাঁড়ান, প্রতিবাদ করুন, সরকার, বিরোধী দল সবাইকে বাধ্য করুন শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনতে। আপনার উপর নির্ভর করছে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ, দুবনা
শিক্ষক, গণ মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়, মস্কো, রাশিয়া