চলমান সংবাদ

পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণে শামিল হয়েছে চট্টগ্রামবাসীও

আনন্দ-উচ্ছাসে, বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রেখেছে চট্টগ্রামবাসীও। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ায় বাঁধভাঙা উৎসব ও বর্ণাঢ্য এই আয়োজনে শামিল হয় চট্টগ্রামের আপামর মানুষ। মিছিল-শোভাযাত্রা, বড় পর্দায় উদ্বোধনের অনুষ্ঠান দেখার উন্মুক্ত আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজনে চট্টগ্রামের মানুষ দিনভর উচ্ছ্বাসে মেতে ছিল। আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অফিস এবং নানা সংগঠনের উদ্যোগে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। শনিবার (২৫ জুন) সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস, ট্রাকসহ নানা যানে নগরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে নগরবাসীকে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের কথা জানান দেন। পরে সেখান থেকে বাদ্য বাজিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। শোভযাত্রাটি নগরের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে জেলা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে এসে শেষ হয়। পরে স্টেডিয়ামে বড় পর্দায় সেতুর উদ্বোধন দেখার পাশাপাশি দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ নেন হাজারো মানুষ। এতে জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সেতু উদ্বোধনের পর মিষ্টিমুখ করেন অংশগ্রহণকারীরা। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শনিবার (২৫ জুন) সকালে এলইডি স্ক্রিনের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন স্পটে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা করে। আনন্দঘন মুহূর্তটিকে প্রাণবন্ত করতে নগরীর কাজির দেউড়িতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, দেশি-বিদেশি নানা চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করে বাঙালির আত্মমর্যাদা সমুন্নত রেখেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক চাপগুলো রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় উড়িয়ে দিয়েছেন। আজ থেকে বাঙালি জাতি এবং শেখ হাসিনা এক অনন্য উচ্চতায় আসীন হলেন। চসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী নেতা এবং চসিকের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু : বাংলাদেশের সাহসিকতার প্রতীক শীর্ষক’ আলোচনা সভা, প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সকালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্রশাসক এম এ সালাম, জেলা পুলিশ সুপার এস.এম রশিদুল হক, নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, শিল্পপতি সুফী মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক’শ মানুষ অংশ নেন। তারা বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। বিকেলে একইস্থানে উন্মুক্ত কনসার্ট এবং সন্ধ্যায় আতশবাজি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নগরীর ৮টি পয়েন্টে বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখার ব্যবস্থা করে। হাজার হাজার মানুষ এসব পয়েন্টে উপস্থিত হয়ে সেই মাহেন্দ্রক্ষণে শামিল হন। নগরীর নিউমার্কেট মোড়, আগ্রাবাদ মোড়, বহদ্দারহাট মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, আন্দরকিল্লা মোড়, জামালখান, পুরাতন রেলস্টেশন ও বড়পুল মোড়ে বড় পর্দায় পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানো হয়। এ সময় তুলে ধরা হয় দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির চিত্র। বিকেলে নগরের পুরোনো রেলস্টেশনে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তাদের আলোচনায় উঠে আসে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতার কথা। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ঐতিহাসিক আনন্দক্ষণ উদযাপনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি’র উদ্যোগে বর্ণিল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শনিবার সকালে বেলুন উড়িয়ে শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর। সিএমপি’র পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের সদস্যগণ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে নগরের হালিশহর পুলিশ লাইন থেকে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে শোভাযাত্রা বের হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন থানা থেকে শোভাযাত্রা বের করা হয়। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের সামনে থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে শহীদ মিনার ও জয় বাংলা চত্বর প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ম্যুরালে এসে শেষ হয়। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সেলিনা আখতার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সজীব কুমার ঘোষ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পদ্মাসেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের আয়োজনে শনিবার (২৫ জুন) সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে আলোচনা সভা, খতমে কুরআন ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, পদ্মাসেতু চালু হবার ফলে পণ্য পরিবহনে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হবে যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ত্বরান্বিত করবে। এছাড়া মোংলা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থল বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সক্ষমতার প্রতীক।