চলমান সংবাদ

মেয়রের বাসার সামনে কোমর পানি, বাসার ভেতরে হাঁটু পানি!

মেয়রের বাসভবনের সামনের চিত্র

টানা বৃষ্টিপাতে বন্দরনগরীর শুধু নিচু এলাকায় নয়, পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়িও। নগরীর বহদ্দারহাটের বহদ্দার বাড়ির (মেয়রের বাড়ি) সামনের সড়ক থেকে বাড়ির উঠান পর্যন্ত কোমরসমান পানি। আর সেই পানি মেয়রের বাসায় ঢুকে নিচতলার হাঁটুপানি। জলাবদ্ধতার কারণে ঘরে আটকে পড়া মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল সোমবার নগরের টাইগারপাসে অস্থায়ী নগর ভবনে যেতে পারেননি। গলিতেও ছিল কোমর সমান পানি। নগরীর তুলনামূলক উচুঁ এলাকা ছাড়া বন্দরনগরী এখনো বৃষ্টি পানিতে প্লাবিত। জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের পৃথক পৃথক সভা ছিল। কিন্তু পানির কারণে মেয়র ঘর থেকেই বের হতে না পারায় সভাগুলো স্থগিত করা হয় বলে জানান মেয়রের একান্ত সচিব (পিএস) মুহাম্মদ আবুল হাশেম। মেয়রের বাসার নিরাপত্তা কর্মী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, মেয়র দোতলায় থাকেন। মেয়রের গাড়িটি বাসার সামনেই পানিতে রয়েছে। বাড়ির উঠান ও সামনের রাস্তায় পানি জমে আছে। নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় মেয়রের বাসভবনসহ আশপাশের বাড়িঘরগুলোও পানিতে থৈ থৈ করছে। অন্যদিকে পানি ডিঙিয়ে দুপুর ১টায় বাড়ি থেকে বের হন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাসার নিচতলায় পানি ঢুকেছে। আমার শয়নকক্ষেও পানি প্রবেশ করেছে। যে কারণে উপরের তলায় দুটি ঘর আছে। সেখানে থাকতে হচ্ছে আমাদের।’ মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছে। খালের কিছু কিছু বাঁধ কেটে দেয়া হয়েছে। তবে খালের বাঁধ কাটলেও মাটিগুলো সরানো হয়নি। যে কারণে খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি বের হতে পারছে না। খালের মাটি পরিষ্কার করার দায়িত্ব কার? এমন প্রশ্নে সিটি মেয়র বলেন, যারা জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ করছেন, খাল থেকে মাটি সরিয়ে নেয়ার দায়িত্বও তাদের। মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় নগরবাসীকে কিছুটা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাজ শেষ হলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রেহাই পাবেন নগরবাসী। রবিবারের সারারাতের বিরামহীন ভারি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভয়াবহ জলজটে চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চল একাকার। তলিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অলি-গলি। ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা ও নোংরা পানি এখন সড়কে। গত ৩ দিনের বৃষ্টিতে অধিকাংশ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে ব্যবহার করতে হচ্ছে নৌকা। ড্রেনেজ ব্যবস্থা অচল থাকায় পানি সরতে না পেরে অনেক ঘর ও দোকানপাটের ভেতর পানি ঢুকে গেছে। এতে আসবাবপত্র ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস নষ্ট হচ্ছে। জ্বলছে না চুলা। বাণিজ্যিক এলাকা চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভিজে গেছে বেশ কিছু পণ্য। রাতভর টানা বৃষ্টিতে নগরীর মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা, হালিশহর, মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, খাজা রোড, মিয়াখান নগরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যরাতের টানা বর্ষণে বাসায় পানি ঢুকে অনেকের ফার্ণিচার, আসবাবপত্র, ফ্রিজ, পানির পাম্প, বালিশ, তোশকসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে। রিকশা-ভ্যানে চড়ে নারী-শিশুসহ সব বয়সী মানুষ চলাচল করছেন। সড়ক জলমগ্ন হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এমনকি জলমগ্ন পানিতে অনেককে জাল দিয়ে মাছ ধরতেও দেখা গেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সোমবার (২০ জুন) বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬২ দশমিক ৮ মিলিমিটার, বেলা ১২টা পর্যন্ত গত ১৭০ দশমিক ২ মিলিমিটার এবং এর আগে সকাল নয়টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩৬ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রের্কড করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বৃষ্টিপাতের পরিমান অনেকটা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। # ২০.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #