চলমান সংবাদ

বৃষ্টি হলেই ডুবছে চট্টগ্রাম, মেগা প্রকল্পের ধীরগতি আগামী তিনদিন ভারী বৃষ্টি, চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের শঙ্কা

বন্দনগরীতে টানা বৃষ্টিপাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্ষার প্রথম দিন থেকেই সারাদেশসহ চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কোথাও হালকা আর কোথাওবা মাঝারি ধরনের। শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল থেকে মাঝারি তেকে ভারি বর্ষণ শুরু হলে নগরীর বিভিন্ন নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। এদিকে আগামী ৩-৪ দিন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় মাঝারী থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কোথাও কোথাও অতি ভারী বর্ষণেরও সম্ভাবনা রয়েছে। ভারী বর্ষণের ফলে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে পূর্বাভাসে। পাহাড় ধসের আশংকা থেকে প্রাণহানি রোধে করনীয় নির্ধারণে এই প্রতিবেদন তৈরির সময় (সন্ধ্যা ৭ টা) পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সভা চলছিল। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার প্লাবন কুমার বিশ্বাস। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ ও পূর্বাভাস কর্মকর্তা শেখ হারুন অর রশীদ বলেন, চলমান বৃষ্টিপাত আরো ৩-৪ দিন অব্যাহত থাকবে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্ষাজুড়েই এমন আবহাওয়া থাকবে। আকাশ মেঘলা থাকতে পারে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় বাতাসের গতিবেগ ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে। সেইসঙ্গে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাসের সাথে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষনও হতে পারে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে বৃষ্টি হলেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে নগরীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, অলি-গলি তলিয়ে যায়। বাকলিয়া, ২নং গেইট, মুরাদপুর, ইপিজেড, সল্টগোলা ক্রসিং, বেপারী পাড়া, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজম রোডসহ অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকতে দেখা যায়। জলাবদ্ধতার কারণে বেড়েছে যানজটও। সবমিলিয়ে বড় ধরনের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ছুটির দিন হওয়ায় চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগ না হলেও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছিলেন বিপাকে। নগরীর আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় পানি উঠে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন রোগী, স্বজন, চিকিৎসকরা। নগরবাসীর অভিযোগ, জলাবদ্ধতা নিরসন মেগা প্রকল্পের ধীরগতি ও নানা অসঙ্গতির কারণে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হয়নি। অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যাচ্ছে নি¤œাঞ্চলের মূল সড়কে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম শহরে কাগজে-কলমে ৬৩টি খালের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে অনেক খালের অস্তিত্বই নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও দখলে-দূষণে রীতিমতো ধুঁকছে। কমেছে গভীরতা, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ। অথচ বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানি যাওয়ার প্রধান পথই ছিল এসব খাল। সরকারি তথ্যমতে, একসময় নগরীর ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রায় সবগুলো খালের দৈর্ঘ্য ছিল ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এখন তা কমে ৩ থেকে ৫ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। আর প্রস্থ ২০ মিটার থেকে কমে হয়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট। নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, নগরীর ড্রেনেজ সিস্টেমে গলদ রয়েছে। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেমই বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ। সিডিএ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জলাবদ্ধতা নিরসনে যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেই প্রকল্পের কাজ এখনো ৩০-৪০ ভাগ শেষ হয়নি। বছরের পর বছর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জনগণেরও দোষ আছে। সাধারণ মানুষের অসচেতনতার কারণে এ সমস্যাটা আরও প্রকট হয়েছে। যত্র-তত্র প্লাস্টিকের বর্জ্য বা ময়লা ফেলার কারণে ড্রেন জ্যাম হয়ে থাকে। যার ফলে পানি বের হতে পারে না। # ১৭.০৬.২০২২ চট্টগ্রাম #