চলমান সংবাদ

‘সর্বজনের অধিকার ও পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারীকরণ ’- শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত

-সর্বজনের সম্পদ পতেঙ্গা সৈকত মুনাফালোভী গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে চট্টগ্রাম নগরীকে রক্ষার স্বার্থেই ”

বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলার উদ্যোগে প্রেসক্লাবে ‘সর্বজনের অধিকার – পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারীকরণ ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য রাখছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
‘‘সর্বজনের উম্মুক্ত স্থান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশ উন্নয়নের নামে ইজারাদান ও টিকেট ধার্য করলে – সর্বজনের স্বীকৃত প্রবেশাধিকার হরণ হবে,প্রাকৃতিক সৈকতের বিকৃতি ঘটবে,একই সৈকতে দুই ধরণের বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি হবে।আমার কাছে চট্টগ্রাম ছিল শ্বাস নেবার শহর, প্রাণবৈচিত্র,ভূমিবৈচিত্র্য আর পাহাড় সমতলের অপূর্ব সমন্বয়।গত কয় বছরে এই শহর ক্রমে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে,ঢাকার মতো এক অসুস্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে।উন্নয়নের নামে চট্টগ্রামে একের পর এক প্রকল্প নেয়া হচ্ছে যাচাই বাছাই,পরিণতি বিবেচনা,পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই। এধরণের সর্বনাশা উন্নয়ন প্রকল্পের একটি হলো সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল নির্মাণ,আরেকটি হলো পতেঙ্গা সৈকত বেসরকারি কোম্পানিকে ইজারা।উন্নয়ন মানে আনন্দ,সর্বজনের সমৃদ্ধি,নিরাপত্তা,সুস্থতা।যা দেশকে,জনপদকে বিপন্ন করে মুষ্টিমেয় গোষ্ঠীর মুনাফা ও সমৃদ্ধি ঘটায়,তাকে কখনোই উন্নয়ন বলা যায়না।চট্টগ্রামের মতো সারাদেশেই আজ সর্বজনের সম্পদের উপর এ মুনাফালোভী গোষ্ঠীর আগ্রাসন চলছে।এ বিভীষিকার হাত থেকে চট্টগ্রামকে-দেশকে বাঁচাতে কন্ঠ সোচ্চার,কলম-তুলি সক্রিয় এবং সংগঠিত প্রতিরোধের  বিকল্প নেই।’’
আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে বাসদ(মার্কসবাদী) আয়োজিত একটি সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ এ বক্তব্য রাখেন।
বাসদ (মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে আজ ১৩ মে,বিকাল ৪ টায়,প্রেসক্লাবের এস.রহমান মিলনায়তনে ‘সর্বজনের অধিকার – পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত বেসরকারীকরণ ’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাসদ(মার্কসবাদী) চট্টগ্রাম জেলা আহবায়ক কমরেড মানস নন্দীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন,মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও সিআরবি রক্ষা মঞ্চের সমন্বয়ক ডাঃ মাহফুজুর রহমান,পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সহসভাপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া। মূল আলোচকদের বক্তব্যের পর উম্মুক্ত আলোচনার পর্বে মতামত রাখেন গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি রাজা মিঞা, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, প্রমুখ। সেমিনার সঞ্চালনা করেন দলের জেলা সদস্যসচিব শফি উদ্দিন কবির আবিদ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দলের জেলা সদস্য ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য সোমা।
সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন বলেন,‘‘সাংবাদিক ও কবি আবুল মোমেন বলেন,‘‘চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য,বিশেষত পাহাড়,টিলা ও উপত্যকা নিয়ে গঠিত ভূমি এবং নদী-সমুদ্র-বনানী বেষ্টিত নৈসর্গিক রূপ যুগে যুগে পর্যটকদের মুগ্ধ করেছে।আমাদের শৈশবে পঞ্চাশের দশকের শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর কয়েকটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র বাদ দিলে বাকি শহরটাই ছিল শান্ত,নির্জন প্রকৃতিময় এক জনপদ।১৯৬১ সালে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানে প্রচুর পার্ক ও উম্মুক্ত স্থান রাখা হয়েছিল।কিন্তু এরপর থেকে ‘উন্নয়ন’ এর যে ধাক্কা শুরু হলো,তাতে এ পরিকল্পনার তোয়াক্কা কেউ করেনি,চট্টগ্রামের বিশেষ প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যের কথা কেউ বিবেচনায় রাখেনি।নগরের নানা প্রকল্প নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিশ্ব জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব বিবেচনায় রাখা হয়না।সিআরবি তো প্রায় বেসরকারি হাসপাতালের জন্য দিয়ে দেয়া হলো। তার ফলাফল হলো চট্টগ্রামের আজকের এ ধ্বংসস্তুপের  রূপ।আমাদের শিশুরা এ নগরীতে কিভাবে সুস্থভাবে বেড়ে উঠবে?ফয়েজলেকের মতো পতেঙ্গা সৈকত বিত্তবানদের বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হোক,তা আমরা হতে দিতে পারিনা।তাই আজ ‘পতেঙ্গা সৈকত বাঁচাও’, সর্বোপরি ‘চট্টগ্রাম বাঁচাও’ আন্দোলন করতে হবে।’’
ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন,‘‘লুটপাটকারী মাফিয়া গোষ্ঠীর লোলুপ দৃষ্টি এখন সিআরবির পর পড়েছে পতেঙ্গা সৈকতের উপর।নগর উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র কোন মালিকানা ও অধিকার নেই উন্মুক্ত সৈকতকে ইজারা দেয়ার।’’
প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন,‘‘পতেঙ্গা সৈকত ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের নাগরিকদের কোন অংশের মতামত নেওয়া হলোনা,যা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক।সুশাসন,জবাবদিহিতার অভাব থাকলে এটা হবে।জনগণের স্বার্থে উন্নয়ন করতে হলে,তাকে সর্বজনীন হতে হবে।পরিচ্ছনতা,চেঞ্জিং রুম ইত্যাদির খোঁড়া অজুহাতে পতেঙ্গা সৈকতকে ইজারা দেয়া বন্ধ করতে হবে।আমাদের চাই উম্মুক্ত স্থান,উদ্যান,পার্ক,খেলার মাঠ,সমুদ্র সৈকত।অথচ এসবের উপর চলছে নির্বিচারে হামলা।এসব মূল্যবান সম্পদ রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’’
সেমিনারে বক্তারা আরো বলেন,‘হাইকোর্টের সাম্প্রতিক রায় অনুসারে সমুদ্র সৈকত কোন ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া যাবেনা।জেলা প্রশাসনও বলেছে,তারা এ বিষয়ে অবগত নন। সিডিএ এধরনের বেআইনী অপতৎপরতা পরিচালনার ঔদ্ধত্য কিভাবে দেখাতে পারে?
সিডিএ প্রণীত চট্টগ্রাম শহরের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য প্রণীত মাস্টার প্ল্যান অনুসারেও এর কোন সুযোগ নেই।এতে পতেঙ্গা সি বিচকে ‘পাবলিক ওপেন স্পেস’ অর্থাৎ ‘জনগণের জন্য উম্মুক্ত স্থান’ হিসেবে  বলা আছে।বাস্তবে এর পেছনে আছে নগর উন্নয়নের নামে ইজারা ও কমিশন বাণিজ্য করে শতশত কোটি টাকা লুটপাটের মুনাফালোভী সিন্ডিকেট।পতেঙ্গা সি বিচের জমির মালিকও সিডিএ নয়।মালিক না হয়ে কিভাবে তারা রাষ্ট্রীয় তথা জনগণের সম্পদ সিবিচের জায়গা  ইজারা দিতে পারে ?সিডিএ আজ মিথ্যাচার করছে,পৃথিবীর অনেক দেশে নাকি এমন উদাহরণ আছে।অথচ পৃথিবীর কোন দেশেই পাবলিক বিচে প্রবেশের জন্য নাগরিকদের টাকা দিতে হয়না। বেসরকারি কোম্পানিকে এমন উন্মুক্ত স্থান ইজারা দেয়ার অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। জনগণের জন্য উন্নত বিনোদনের কথা বলে রেল কর্তৃপক্ষ ফয়েজ লেক  বানিজ্যিক কনকর্ড কোম্পানিকে ইজারা দিয়েছিল।সাধারণ মানুষ আর সেখানে ঢুকতে পারেনা।জনপ্রতি ৩৫০ টাকার টিকেট দিয়ে কয়জনের সামর্থ্য আছে?কনকর্ড চুক্তি ভঙ্গ করে ফয়েজলেকে নানা স্থাপনা করার জন্য গাছপালা-টিলা কেটে পরিবেশ ধ্বংস করেছে,লেকের পানি দূষিত করেছে।এছাড়া উন্মুক্ত পতেঙ্গা বিচকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে।বেসরকারী অপারেটরকে ইজারা দিলে সে মানুষগুলোও উচ্ছেদ হবে, জীবিকা হারিয়ে পথে বসবে। অবিলম্বে সিডিএ এ গণবিরোধী সিদ্ধান্ত বাতিল না করলে চট্টগ্রামের জনগণ  বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।“
# ১৩/০৫/২০২২, চট্টগ্রাম #