চলমান সংবাদ

থানা নয় তেতুলতলা মাঠে খেলাধুলাই হবে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা

তেঁতুলতলা মাঠ
সেখানে সীমানা প্রাচীর তৈরির কাজ চলছিল গতকাল।

ঢাকার কলাবাগান এলাকায় একটি খেলার মাঠে পুলিশের থানা ভবন নির্মাণের বিরুদ্ধে টানা কয়েকদিন প্রতিবাদ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাঠে কোন ভবন নির্মাণ হবে না এমন সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।

সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, জায়গাটি যেভাবে ব্যবহার করা হতো, সেভাবেই ব্যবহৃত হবে। খেলার মাঠই থাকবে। কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে আর কোনও নির্মাণকাজ হবে না।

মাঠ রক্ষার জন্য যারা কয়েকদিন ধরে টানা প্রতিবাদ করে গেছেন তাদের একজন সেখানকার বাসিন্দা মো: রাকিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, “প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানার পর এলাকাবাসী মাঠকে ঘিরে আনন্দ মিছিল করেছে। অনেকে মাঠে জড়ো হয়েছে। আমরা গতকাল থেকেই এমন কিছু শুনতে পাচ্ছিলাম।”

যদিও মাঠটির চারপাশে সীমানা দেয়াল তৈরির কাজ বুধবার রাতের মধ্যেই শেষ করে ফেলা হয়েছে। সেই দেয়ালের উপরে এলাকাবাসীরা সাদা কালিতে লিখে রেখেছেন “থানা নয় মাঠ চাই।”

গত রবিবার সকালে পুলিশের একটি দল তেঁতুলতলা মাঠে নির্মাণ কাজ শুরু করে। সেখানে কলাবাগান থানার ভবন ওঠার কথা ছিল।

বছর-খানেক যাবত এই মাঠটিতে থানা ভবন না তোলার জন্য এলাকাভিত্তিক একটি আন্দোলন চলছিল।

তেঁতুলতলা মাঠ
কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠে আর কোনও নির্মাণকাজ হবে না, জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

সেই আন্দোলনের একজন সংগঠন সৈয়দা রত্নাকে ফেসবুকে লাইভে এসে প্রতিবাদ করার সময় তাকে এবং তার ছেলেকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর এরপর থেকেই আলোচনায় রয়েছে এই খেলার মাঠ। রবিবার দিবাগত রাতে মুচলেকা নিয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়।

কিন্তু এলাকাবাসী মাঠ রক্ষায় সোচ্চার হয়ে ওঠে।

গত কয়েকদিন যাবত প্রতিদিনই ঢাকার কলাবাগানে অবস্থিত তেঁতুলতলা মাঠে মানববন্ধন হয়েছে।

এলাকার বাসিন্দা, নাগরিক সংগঠন, পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কর্মীরা তাতে অংশ নিয়েছেন।

এলাকার একজন বাসিন্দা ফিদা হাসান বলছিলেন, “এখন কোন স্কুলেও খেলার মাঠ নেই। আমাদের বাচ্চারা তাহলে কোথায় খেলবে? আমাদের কাছ থেকে এই মাঠটা নিয়ে নেয়া মানে আমাদের শিশুদের খেলার সুযোগ নিয়ে নেয়া, তাদের বিকাশ নিয়ে যাওয়া।”

তেঁতুলতলা মাঠ
তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে আন্দোলন শুরুর পর সেখানে প্রহরায় পুলিশ।

যে মাঠ নিয়ে এত আন্দোলন সেটি একটি অর্পিত সম্পত্তি। তাই বহুদিন যাবত খালি পড়ে ছিল।

সেখানে খেলাধুলা করে বড় হয়েছেন, পেশায় দর্জি এমন একজন বলছেন, “আমি কুড়ি বছর ধরে এই এলাকায় বাস করি। এইখানে খেলে বড় হয়েছি। এখানে নানা টুর্নামেন্ট হয়। জুম্মার নামাজ, ঈদের জামাত, জানাজা হয়। যায়গাটা এর আগে অনেকবার দখল করে নেবার চেষ্টা হয়েছে। একবারতো ঘর তুলে ফেলেছিল। প্রত্যেকবার এলাকাবাসী সেটা প্রতিহত করেছে।”

তিনি বলছেন, “আমার দোকানে এখনও সূর্যের আলো আসে। কিন্তু ভবন উঠলে সেই আলো বন্ধ হয়ে যাবে। আর তাছাড়া একটা মাঠ থাকলে সেটা দেখতেও সুন্দর লাগে।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে গতকাল গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে যে মাঠ দখল করে নয়। তারা সকল আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, সরকারের কাছ থেকে ২৭ কোটি টাকায় এই জমিটি কিনেছেন।

ভবনটি নির্মাণে তাই তাদের আইনি কোন বাধা নেই। তবে সরকার নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বললে তারা সেভাবেই করবেন।

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা