চলমান সংবাদ

বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী প্রকল্প বন্দরের সক্ষমতা ৩-৪ গুণ বাড়াবে

বে টার্মিনাল ও মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে বন্দরের সক্ষমতা ৩-৪ গুণ বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। রোববার (২৪ এপ্রিল) চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়ামে ‘প্রচার মাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা’য় তিনি এ মন্তব্য করেন। ২০২৫ সালের মধ্যে তিনটি কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং চলতি বছরের জুলাই মাসেই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হবে বলে আশা করেন বন্দর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর বহিনোঙ্গর থেকে কাপ্তাই ড্যাম পর্যন্ত ‘ডিটেইল হাইড্রোলজিক্যাল অ্যান্ড হাইড্রোলিক স্টাডি ইন কর্ণফুলী রিভার’ শীর্ষক কাজ শেষ করার জন্য ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান ‘এইচআর ওয়ালিংফোর্ড, ইউকে’ আমরা নিয়োগ দিয়েছি। এই স্টাডি চলমান আছে। স্টাডি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সহসা আমরা বন্দর জেটিতে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়াতে পারব। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, বে-টার্মিনাল প্রকল্প, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়বে। বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বেশি গভীরতা ও বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ রাত-দিন ভেড়ানোর সুযোগ থাকবে। ২০২৫ সালের মধ্যে মাল্টিপারপাস কনটেইনার ও দুটি কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ শেষ হবে। পাশাপাশি চলতি বছরের জুলাই মাসেই পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালটি চালু হবে। এখানে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ৫১ লাখ কিউবিক মিটার ড্রেজিংয়ের লক্ষমাত্রায় এখন পর্যন্ত ড্রেজিং হয়েছে ৩৪ লাখ কিউবিক মিটার। কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২৯৫ কোটি টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ড্রেজিং চলবে। মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. মোস্তাফিজুর রহমান, সদস্য (অর্থ) কামরুল আমিন, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রগমান। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের সকল বিভাগীয় প্রধান ও সিবিএ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বলা হয়, ১৫শ’ মিটার দৈর্ঘ্যর মাল্টিপারপাস টার্মিনাল এবং ১ হাজার ১২৫ ও ৮শ’ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনালটি নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বাকি দুটি টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে বরাদ্দ দেয়ার কথা রয়েছে। বে-টার্মিনাল প্রকল্পের জন্য গত বছরের অক্টোবর মাসে ৬৭ একর জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। আরো প্রায় ৮০৩ একর জমি পেতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমানে জোয়ারের সময় গড়ে চার ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের এবং সর্বোচ্চ ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে জাহাজ বন্দরের জেটিগুলোতে ভিড়তে পারে। প্রস্তাবিত বে-টার্মিনালে বেশি গভীরতা ও বেশি দৈর্ঘ্যরে জাহাজ দিন-রাত ভিড়ানোর সুযোগ থাকবে। বে-টার্মিনালের বাইরে বছরে সাড়ে ৪ লাখ টিইইউ’স কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের লক্ষ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের নির্মাণকাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে ১ হাজার ২২৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পটি চালু হবার সম্ভাবনা আছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ৬০০ মিটার জেটিতে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের তিনটি কনটেইনারবাহী এবিং ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ডলফিন জেটিতে একটি তেলবাহী জাহাজ ভিড়ানো যাবে। তাছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ২৮৩ দশমিক ২৭ একর জমি গত ৩০ মার্চ কক্সবাজার জেলা প্রশাসন চট্টগ্রাম বন্দরকে বুঝিয়ে দিয়েছে। বন্দর নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষ্যে সহসা দরপত্র আহ্বান করা হবে। মাতারবাড়ী টার্মিনাল হলে ডিপ ড্রাফট ভ্যাসেল অর্থাৎ ১৬ মিটার বা তার বেশি গভীরতা সম্পন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ গমনাগমন করতে সক্ষম হবে। বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপের পথে সরাসরি শিপিং সার্ভিস চালু আরএমজি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে সমুদ্রপথে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি হয়েছে। ‘এমভি সোঙ্গা চিতা’ ৯৫২ কনটেইনার পণ্য নিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি বন্দর ছেড়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে ইউএসএ রুটেও সরাসরি জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। তিনি জানান, বেসরকারি আইসিডিতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে নানা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। বন্দরের ১ নম্বর জেটি গেটের কাছে মাল্টি স্টোরেড কার শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। বিপজ্জনক, তেজষ্ক্রিয় ও রাসায়নিক পণ্য নিরাপদে আমদানি রফতানির সুবিধার্থে স্টেট অব আর্ট ক্যামিকেল শেড গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে এক দশকে ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গমিটার ইয়ার্ড তৈরি করায় কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৫৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। পোর্ট লিমিট ৭ নটিক্যাল মাইল থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইলে উন্নীত করা হয়েছে। পোর্ট লজিস্টিক সক্ষমতা বাড়াতে কান্ডারী ৬ ও ১২ নামের ২টি টাগবোট, ২টি মুরিং লঞ্চ, ২টি সাইট স্ক্যান সোনার, ২টি ইকো সাউন্ডার,১টি সমুদ্রগামী হারবার টাগবোট সংগ্রহ করা হয়েছে। গত এক দশকে শিপ টু শোর কি গ্যান্ট্রি ক্রেন, মোবাইল হারবার ক্রেন, রাবার টায়ারড গ্যান্ট্রি ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের ৩৯০টি কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ ১৪ হাজার টিইইউস, প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।
# ২৪.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #