চলমান সংবাদ

হৃদয় মন্ডলকে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি পরিকল্পিত, অসুস্থ দৃষ্টান্ত- নওফেল

মুন্সীগঞ্জে বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করে এ সংক্রান্ত ঘটনাবলিকে অসুস্থ দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, ‘দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়- একটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক পাঠদানরত অবস্থায় কী আলোচনা হয়েছে, সেটাকে পুঁজি করে পরিকল্পিতভাবে একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কেউ বলেছে, কেউ শুনেছে, এ ধরনের গুজবের ভিত্তিতে একটি মামলা হল। সেই মামলা কিন্তু রেকর্ডও হল! আর এ মামলায় সেই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং জামিন দেয়া হলো না। এ ঘটনা একজন নাগরিকের সুবিচার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথে অন্তরায়। শুধুমাত্র তা-ই নয়, অদূর ভবিষ্যতে এ ধরনের গুজব তুলে কেউ যদি কোনো অভিযোগ করে, তখন সেক্ষেত্রে দেশের বিচার ব্যবস্থা, দেশের পুলিশ প্রশাসনের ওপর একটা চাপ সৃষ্টি হবে। কারণ- একবার এ ধরনের অপপ্রচারের ভিত্তিতে করা অভিযোগ আমলে নিয়ে একজন শিক্ষককে ভুক্তভোগীতে পরিণত করা হয়েছে। এই ধরনের প্র্যাকটিস অত্যন্ত অসুস্থ ঘটনা।” শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম নগরীর জে এম সেন হলে বাসন্তী পূজার মহাসপ্তমীর দিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। যারা গুজব রটায়, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন মন্তব্য করে শিক্ষা উপ-মন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে আলোচনা ও সমাধানের চেষ্টা চলছে। সেখানকার জনপ্রতিনিধির সাথেও কথা বলেছি। কিন্তু পাশাপাশি গুজব সৃষ্টিকালীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন। ধর্মে ধর্মে বিভাজনের নোংরা রাজনীতি, ওয়াজ মাহফিলে ধর্মের মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ উপমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫-এর শক্তির ষড়যন্ত্র চলছে, তাদের লক্ষ্য- পাকিস্তানের মতো কট্টর সমাজব্যবস্থা তৈরি করা। এদের মোকাবিলা করতে হবে। চাপের মুখে মাথানত করা যাবে না। রাষ্ট্রের সব শক্তি প্রয়োগ করে ষড়যন্ত্র পরাস্ত করা হবে, এটা আমাদের ওয়াদা। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা দীর্ঘ সময় ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল তাদের সাম্প্রদায়িক, শ্রেষ্ঠত্ববাদী মানসিকতা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমনভাবে ঢুকে গেছে যে মানবিক আচরণ, মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধ, মমত্ববোধ, ভালোবাসা এখন শুধু পত্রিকার পাতায় সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যতটুকু সম্ভব সব সম্প্রদায়ের জন্য সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সম-অধিকারের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল আরো বলেন, ‘দেশে অনেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কথা বললেও সত্যিকার অর্থে সে আদর্শ ধারণ করে কি না, আবার অনেকে প্রগতিশীলতার কথা মুখে বললেও বাস্তব জীবনে সেটার প্রতিফলন ঘটাচ্ছে কি না, সেটা চিন্তা করার সময় এসে গেছে। দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান, দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান অধিকার, ধর্মচর্চার অধিকার এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে লিপ্ত হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখতে হবে শ্রেষ্ঠত্বের যে শিক্ষা, নিজেকে সর্বোচ্চ- সর্বোত্তম ভাবা, এটা কুশিক্ষা। এটা দীর্ঘ সময় ধরে চলে এসেছে এবং এর পপ্রতফলন আজ সমাজে দেখতে পাচ্ছি। মানুষে মানুষে যে বিভাজন, এটা সমাজে শঙ্কা ও ভীতি তৈরি করছে।’ শুধু শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে এ বিভাজনের পরিবর্তন সম্ভব হবে না মন্তব্য করে শিক্ষ উপ-মন্ত্রী বলেন, ‘সামাজিক আন্দোলনে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামজিক আন্দোলনে নামতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। পিছপা হলে বাংলাদেশ পাকিস্তান হবে, এরপর আফগানিস্তানে রূপান্তর হবে। সব নাগরিকের সমান অধিকার রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, এ বাংলাদেশ সবার, দেশের প্রতি ইঞ্চি মাটির ওপর সবার অধিকার সমান। এ দেশের একজন নাগরিকের ইবাদত করার অধিকার, পূজা করার অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। কিন্তু, একটি সম্প্রদায়ের উৎসব থেকে আরেকটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ করলে, সেটা আসলে অনুভূতিতে আঘাত নয়। সেটা পরিকল্পিত আক্রমণের নির্লজ্জ প্রচেষ্টা। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি শ্যামল কুমার পালিতের সভাপতিত্বে এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রবীর পালের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলার সাবেক সভাপতি ইন্দু নন্দন দত্ত, সাবেক সভাপতি দীলিপ কুমার মজুমদার, সহ-সভাপতি বিজয় কৃষ্ণ বৈষ্ণব, সহ-সভাপতি কাউন্সিলর সুনীল চন্দ্র ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব।
# ০৯.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #