চলমান সংবাদ

একের পর এক দুর্ঘটনায় ঝড়ছে প্রাণ ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রাণ হারাল বাবা-ছেলে

ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা করতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে মার্কেটে যাচ্ছিলেন গার্মেন্টস কর্মী আবু সালেহ (৩০)। কিন্তু কিছুদূর যেতেই পেছন থেকে লরির ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন রাস্তায়। আর এসময় কনটেইনারবাহী লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে জীবন প্রদীপ নিভে যায় আবু সালেহ ও তার ৯ মাসের শিশু সন্তান আব্দুল্লাহ আল মোমিনের। শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে এগারটার দিকে মহানগরীর ইপিজেড থানার বন্দরটিলা এলাকায় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। এই ঘটনায় নিহত সালেহের চার বছর বয়সী আরেক ছেলে আব্দুল্লাহ আল মাহিদ আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়। এ ঘটনার পর স্থানীয়রা লরি ভাংচুর করে সড়কে বিক্ষোভ করে। পুলিশ লরি চালক কবির আহমদ শেখকে (২৪) আটক করেছে। ইপিজেড থানার ওসি কবিরুল ইসলাম বলেন, নগরীর পতেঙ্গার স্টিলমিল এলাকার বাসিন্দা আবু সালেহ বাসা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঈদের বাজার করতে রিকশায় করে ইপিজেড এলাকায় যাচ্ছিলেন। বন্দরটিলা এলাকায় পেছন দিক থেকে আসা কনটেইনারবাহী একটি লরির ধাক্কায় রিকশা থেকে ছিটকে লরির চাকার নিচে পড়ে যায় আবু সালেহ ও তার নয় মাস বয়েসী শিশু সন্তানটি। এতে ঘটনাস্থলে দুজনই নিহত হয় ও আরেক ছেলে গুরুতর আহত হয়। তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপর পুলিশ কাভার্ডভ্যানটি জব্দ ও লরি চালককে আটক করেছে। রিকশাটি এতে দুমড়েমুচড়ে যায়। আবু সালেহের স্ত্রী ও রিকশাচালক জখম হননি। ওসি বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা লরি ভাঙচুর করে সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ গিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে। আবু সালেহ’র গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলার পাথরঘাটায়, পরিবার নিয়ে থাকতেন বন্দরটিলা আকমল আলী রোডের মনির বিল্ডিংয়ে বসবাস করতেন। তিনি ইপিজেডের এইচকেডি গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে তিন বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগরীতে দিনের বেলায় সব ধরনের ভারি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন সড়কে কাভার্ডভ্যান, লরি, ডাম্প ট্রাকসমূহ বেপরোয়া গতিতে চলছে। এতে ঘটছে একের পর এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। ট্রাফিক বিভাগ ও নগরবিদদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণসমূহ হচ্ছে- বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, চালকের অদক্ষতা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা, রাস্তায় ফুটপাত না থাকা বা ফুটপাত বেদখলে থাকা, ট্রাফিক আইনের দুর্বল প্রয়োগ। নগরবিদদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সড়ক দুর্ঘটনা তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তেমন কোন তদারকি নেই। সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়ও। বছরের বিভিন্ন সময় হুটহাট অভিযান পরিচালনা করেই দায়িত্ব শেষ করছে তারা। একে অপরের ওপর দায়িত্ব দিয়ে সারছে দায়ও। অন্যদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরও দায়ী চালক অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ায় নিজেদের শোধরাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বুধবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে নগরের কোতোয়ালী থানার লালখান বাজার ফ্লাইওভারের মুখে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। জানা যায়, তিনমাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে বাসায় ফেরার পথে মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী-স্ত্রী আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাইক আরোহী দুজন ছিটকে সড়কে পড়ে যায়। এতে দুজনের মাথা থেঁতলে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।
# ০৯.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #