মতামত

রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা জরুরি

– দীপ্সিতা ধর

দীপ্সিতা ধর একজন ভারতীয় ছাত্রনেত্রী এবং ভারতের ছাত্র ফেডারেশন এর সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক। তিনি ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে বালি আসনে থেকে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) এর একজন প্রার্থী ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশ সফরে এলে প্রগতির যাত্রী’র পক্ষ থেকে টেলিফোনে সংক্ষিপ্ত একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। সার্বিক সহযেগীতায় ছিলেন যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক যুবনেতা খান আসাদুজ্জামান মাসুম। সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেন ফজলুল কবীর মিন্টু ও রবীন গুহ।

প্রগতির যাত্রীঃ হ্যালো, নমস্কার।

দীপ্সিতা ধরঃ নমস্কার।

প্রগতির যাত্রীঃ আপনি দীপ্সিতা ধর বলছেন?

দীপ্সিতা ধরঃ হ্যা, আমি দীপ্সিতা ধর বলছি।

প্রগতির যাত্রীঃ প্রথমেই প্রগতি’র যাত্রীর পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম। আপনার পড়ালেখাতো আশুতোষ কলেজে? দীপ্সিতা ধরঃ ধন্যবাদ, আপনাদেরও শুভেচ্ছা। হ্যা, পড়ালেখা আশুতোষ কলেজেই।

প্রগতির যাত্রীঃ তো ছাত্র রাজনীতিতে কীভাবে যুক্ত হলেন?

দীপ্সিতা ধরঃ ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া কলেজে পড়ার সময়। যেহেতু বাড়িতে একটা রাজনৈতিক পরিবেশ সব সময় ছিল- রাজনৈতিক চর্চা হতো। বাড়ির সবাই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। ফলে রাজনীতি সম্পর্কে একটা ধারণা আগে থেকেই ছিল কিন্তু স্কুল পর্যন্ত সেভাবে রাজনীতি করা হয়নি। আমি আশুতোষ কলেজে ভর্তি হই ২০১০ সালে। সে সময় দেশের পরিস্থিতি খুবই তাল-মাতাল ছিল। সরকার বদলের সম্ভাবনা, শিল্প উন্নয়ন ব্যবস্থাদি। এ সকল পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন আমার মনে হয়েছিল এখনই রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার সঠিক সময়। এই সময় নিজের রাজনীতির প্রতি, নিজের আদর্শের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা খুবই জরুরী। মূলত সেই দায়বদ্ধতার কারনেই সেই সময় থেকেই আশুতোষ কলেজে পড়া অবস্থায় ‘এসএফআই’ এর সাথে যুক্ত হই। বলতে পারেন এভাবেই আমার ছাত্র রাজনীতির পাঠ শুরু হয়।

প্রগতির যাত্রীঃ জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার মাধ্যমে আপনি সর্বভারতীয় ছাত্র আন্দোলনে লাইম লাইটে আসেন। ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করতে গিয়ে আপনি কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন?

দীপ্সিতা ধরঃ চ্যালেঞ্জ বলতে আসলে ঐ সময় আমরা ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম তাদের উপর বিজেপি, আরএসএফ এর আক্রমনতো ছিলই। আক্রমনটা দুইভাবে পরিচালিত হতো। প্রথমত আক্রমন ছিল রাষ্ট্রীয় মেকানিজম বা State Machinery’র মাধ্যমে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন দমন ও নিপীড়নমূলক কার্যকলাপ। অন্যদিকে বেসিক গণতান্ত্রিক কার্যক্রমে আমাদের অংশগ্রহণ রুখে দেয়ার চেষ্টা এবং একই সাথে বিজেপি-আরএসএফের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বাম পন্থীদের সম্পর্কে নেতি বাচক ধারণা সৃষ্টি করা – বামপন্থী মাত্রই সে দেশদ্রোহী, বামপন্থী মাত্রই সে টেরোরিস্ট, সে দেশকে ভাংতে চাই, সে দেশের অখন্ডতা চায়না ইত্যাদি নানবিধ অপ্প্রচার ছিল। যার ফলশ্রুতিতে ঘৃণা এবং অপ্প্রচারের শিকার হতে হয়েছে প্রচুর। সেটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

প্রগতির যাত্রীঃ আপনিতো ছাত্ররাজনীতি থেকে এসে বৃহত্তর পরিসরে রাজনীতি করছেন? ছাত্ররাজনীতির কোন শিক্ষাটা আপনাকে আজকের এই বৃহত্তর পরিসরে দাঁড় করিয়েছে বলে আপনি মনে করেন?

দীপ্সিতা ধরঃ আমাদের ছাত্ররাজনীতি কিংবা আদর্শগত রাজনীতির মূল শিক্ষাটা হচ্ছে আদর্শগত জায়গা থেকে। আমাদের শিক্ষাটা হচ্ছে – পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মানুষ মানুষের দ্বারা শোষিত হন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যে মানুষ কাজ করেন তিনি ভাল থাকেন না, তিনি সুস্থ্য থাকতে পারেন না, তার হাতে অর্থ থাকেনা।সুতরাং এই ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। আমি যখন ছাত্র রাজনীতি করেছি তখন সেটা বুঝেছি। সকল ছাত্রদের যদি পড়াশোনার সঠিক অধিকার দিতে হয়, তাহলে যে ব্যবস্থা শিক্ষার মধ্য থেকে মুনাফা তৈরি করে, যে ব্যবস্থা চায় দেশের বেশীর ভাগ মানুষ অশিক্ষিত থাকুক যাতে তাদেরকে কম পয়সায় মজুর তৈরি করা যেতে পারে, সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার কারনে আমাদের সে লড়াই আরো ব্যাপকতা লাভ করেছে। অর্থাৎ আমাদের এ লড়াই সংগ্রাম শুধু আমাদের নয় – কৃষক, শ্রমিক এবং অন্যন্য পেশার মানুষকেও সমাজ বদলের এই লড়াইয়ে যুক্ত করা খুব প্রয়োজন। ছাত্র রাজনীতি করতে গিয়ে আবেগকে রাজনীতিতে কীভাবে সঠিক ব্যবহার করতে হয় তা আমরা শিখেছি। বৃহত্তর রাজনীতি্র ক্ষেত্রে অনেক ধরণের হিসাব-নিকাশ থাকে। এটা করলে –এটা সঠিক হবে। আমার মনে হয় ছাত্র রাজনীতি থেকে আসার কারনে সে হিসাব-নিকাশ, ইমোশান বা আদর্শের প্রতি অনেক বেশী দায়বদ্ধ থাকার শিক্ষা আমাকে আজকের বৃহত্তর পরিসরে দাঁড় করিয়েছে।

প্রগতির যাত্রীঃ ভারত বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির ব্যাপক উত্থান পরিলক্ষিত হচ্ছে। মৌলবাদী শক্তির এ উত্থান মোকাবেলায় বামপন্থীদের কী ভূমিকা পালন করা উচিৎ?

দীপ্সিতা ধরঃ সাম্প্রদায়িকতা দুই বাংলাতেই – অর্থাৎ দুই দেশেই আগের চেয়ে অনেক বেশী মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ধর্মের নামে, জাতির নামে মানুষ, মানুষকে খুন রাহাজানি ইত্যাদি অনেক ব্যাপকতা লাভ করেছে। আমাদের মনে হয় সমাধান একটাই, তা হচ্ছে শ্রেণি রাজনীতি শক্তিশালী করা। গরীব মানুষ সে মুস্লিম হোক কিংবা হিন্দু হোক, তার অধিকারের প্রশ্নে, তার বেঁচে থাকার প্রশ্নে, তার জীবন জীবিকার প্রশ্নে তাদেরকে সংগঠিত করতে হবে। ফলে যারা ধর্মের নামে জাতির নামে বিভক্ত করে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে তাদের ষড়যন্ত্র বিফল করে দিয়েই বামপন্হীরা ভূমিকা রাখতে পারে।

প্রগতির যাত্রীঃ আজ এই পর্যন্তই। আপনাকে ধন্যবাদ।

দীপ্সিতা ধরঃ প্রগতির যাত্রীকেও ধন্যবাদ।