চলমান সংবাদ

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন নালা-খাল পরিষ্কারে সিডিএ’র কাছে ১’শ কোটি টাকা চাইলেন মেয়র

চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় শেষ হওয়া খাল-নালার রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মেটাতে জলাবদ্ধতা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ’র কাছ থেকে ১০০ কোটি টাকা চেয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। কাজ শেষ হওয়া নালা-খাল রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব নিতে রাজি নন মেয়র। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে বুধবার (৬ এপ্রিল) চসিক-সিডিএ’র সমন্বয় সভায় এ কথা জানান চসিক মেয়র। চসিক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সভায় মেয়র রেজাউল করিম বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল কাজের কিছু সিডিএ ও কিছু করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ৩৪ বিগ্রেড। এই প্রকল্পের অধীনে নগরীর ওয়ার্ডগুলোতে বেশ কিছু ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব খাল-নালা পরিষ্কারের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। কিন্তু খাল-নালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও রক্ষনাবেক্ষণে চসিক’র কোন বরাদ্দ নেই। এসব খাল পরিষ্কার করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। বর্তমানে কর্পোরেশনের ফা-ের অবস্থাও ততো ভালো না। এই পরিস্থিতিতে নালা-খাল রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব কর্পোরেশনের পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। কারণ কর্পোরেশনে ফা- ও প্রয়োজনীয় জনবলের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্প থেকে ১০০ কোটি টাকা চসিককে দেওয়া হলে চসিক খালের দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত। যদি সিডিএ নালা-খাল পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কাজে কোন বরাদ্দ দিতে না পারে সে ক্ষেত্রে আমাদের বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। সভায় সিডিএ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়াম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, জলাবদ্ধতা প্রকল্পের চলমান চার বছরের কাজের মধ্যে এখনো দুই বছরের কাজ বাকি। এখনই শতভাগ ফলাফল পাবো এটা মনে হয় না। তবে এবার জলাবদ্ধতা অন্যান্যবারের মতো হবে না বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শুধু খাল খনন করলে হবে না, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংও প্রয়োজন। ড্রেজিং করা না হলে কোনোভাবেই প্রকল্পের সুফল মিলবে না।এ বিষয়ে প্রয়োজনে পানি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া যেতে পারে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বলেন, আসন্ন বর্ষার পূর্বে চলতি এপ্রিল মাস পর্যন্ত আমরা কাজ করতে পারবো। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খালগুলোতে ১৭৬ কিলোমিটারের মতো রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসন কাজে এটা বড় অগ্রগতি বলা যায়। পাশাপাশি অনেক এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানও চালাতে হচ্ছে। পুরো প্রকল্পের কাজ সমানতালে করা সময় সাপেক্ষ। কারণ এখানে বহু প্রতিবন্ধকতা আছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন এলাকায় ব্রিজের নিচ দিয়ে ওয়াসা ও কর্ণফুলী গ্যাসসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সংযোগ লাইনের কারণে জলাবদ্ধতা হচ্ছে। সংযোগ লাইনের সাথে বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা আটকে গিয়ে পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হয়। শাহ আলী বলেন, শহরের পানি খালে নিতে আমরা মোট ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ২২টি পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে যা দিয়ে শহরের পানি নদীতে গিয়ে পড়ে। আমাদের প্রকল্পাধীন ৭টি খালের কাজ শেষ হয়েছে। জুনের মধ্যে ১৮টি খালের রিটেইনিং ওয়ালের কাজ শেষ হবে। এছাড়া আরও অনেক খালের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আমরা শেষ করতে পারছি না। লে. কর্নেল শাহ আলী জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে ২৩ খালের স্লুইচ গেইট নির্মাণ ও ১২টি খালের রেগুলেটর নির্মাণ ও রক্ষনা বেক্ষনের কাজ সম্পন্ন না হওয়াকে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই সব কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা লাগবে। তবে মে মাসের মধ্যে পাম্প বসানের কাজ সম্পন্ন হবে। এজন্য প্রশিক্ষিত লোকবল নিয়োগ করা গেলে জলাবদ্ধতা নিরসনের সুফল কিছুটা দৃশ্যমান হবে। তবে পুরোপুরি সুফল পেতে আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রকল্প পরিচালক রিটেইনিং ওয়ালের কাজের সহায়তার জন্য কর্পোরেশনের কাছ থেকে হুইল হল এস্টেভেটর দেয়ার অনুরোধ জানান। মেয়র এ ব্যাপারে কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। সভায় জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পের আওতাভূক্ত ৮ দশমিক ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ পৃথক সাতটি খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়া এলাকার কাউন্সিলরগণও উপস্থিত ছিলেন। তারা তাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যার কথা প্রকল্প পরিচালকের নিকট তুলে ধরেন। তাদের বেশির ভাগের বক্তব্য ছিলো বর্ষার পূর্বে খালের মাটি ও বাঁধ অপসারণ, নালার স্লোভ ঠিক করা ও প্রকল্পের কাজের সাথে কাউন্সিলরদের সমন্বয় করা ইত্যাদি। সভায় উপস্থিত ছিলেন-প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমদ মঞ্জু, মো. মোবারক আলী, মো. ইসমাইল, আবদুল মান্নান, সালেহ আহমদ চৌধুরী, জিয়াউল হক সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, মো. মোর্শেদ আলম, মো. কাজী নুরুল আমিন, পুলক খাস্তগীর, আবদুস সালাম মাসুম, আবুল হাসনাত বেলাল, এম. আশরাফুল আলম, মো. নুরুল আলম, হাজী নুরুল হক, মো. নুরুল আমিন ও ওয়াসিম উদ্দিন প্রমুখ। # ০৬.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #