মতামত

আমি সিরাজুল আলম খান বলছি – পাঠক প্রতিক্রিয়া – ২

– অপু সারোয়ার

নিউক্লিয়াস

সিরাজুল আলম খানের বয়ানে তিন জন প্রাক্তন ছাত্রনেতার চক্র বা উপদল নিউক্লিয়াস । সিরাজুল আলম খান , আব্দুর রাজ্জাক , কাজী আরেফ আহমেদ ছিলেন এই চক্রে। আবুল কালাম আজাদ নিউক্লিয়াস এর সদস্য ছিলেন। আবুল কালাম আজাদের নিউক্লিয়াস থেকে ছিটে পড়া নিয়ে জনাব খান ও আব্দুর রাজ্জাক পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। সিরাজুল আলম খান আবুল কালাম আজাদের বাদ পড়ার বিষয়কে ‘ পারিবারিক ‘ কারণ হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন।  আবুল কালাম আজাদ  বাদ পড়ার কারণ হিসেবে গুরুতর নৈতিক অভিযোগ আনেন আব্দুর রাজ্জাক।  আব্দুর রাজ্জাকের ভাষায় ” আবুল কালাম আজাদ স্কুলপড়ুয়া একটা নাবালিকাকে বিয়ে করলে আমরা তাকে বহিষ্কার করি। ” ( দৈনিক প্রথম আলো ৪ জুন ২০১৯) । দুঃখজনক সত্য ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ এর দশকের এই অঞ্চলের অধিকাংশ মহিলারা বাল্য বিবাহের শিকার। অধিকাংশের বিয়ে হয়ে থাকবে ১৪/১৬ বছরের মধ্যে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে এই বয়স কালকে   নাবালিকা বলা হয়। যুদ্ধত্তোর বাংলাদেশে তুলনা মূলক ভাবে নারীরা শিক্ষা দীক্ষায় অনেক  এগিয়ে আসতে পেরেছে। তবে এখনো রাষ্ট্রীয় ভাবে বেঁধে দেওয়া মেয়েদের বিয়ের বয়স চিকিৎসা বিজ্ঞান নির্ধারিত গন্ডি যা নাবালিকা রয়ে গেছে। নানা ভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় ধর্মীয় রাজনীতির চর্চার কারণে নারীদের বিয়ের বয়স নাবালিকাতেই হোঁচট খেয়ে স্থিতি হয়ে রয়েছে।

নিউক্লিয়াস চক্রে দেশব্যাপী যাঁরা যুক্ত হয়েছিলেন তাঁদের বা তাদের প্রতিনিধিদের কোন কালে মিলিত ভাবে আলোচনা সভা বা প্রতিনিধি সম্মেলন হয় নাই। ৫/৭ জনের সেল – ছিল। এক সেলের সাথে অন্য সেলের কোন যোগাযোগ ছিল না। যেহেতু কোন প্রতিনিধি সভা বা আলোচনার সুযোগ ছিলনা সেই হেতু এই চক্রের নিচের দিকে যারা ছিলেন তাঁরা হুকুম বাদের বাহক ছিলেন। সচরাচর সৃজনশীল  কাজের বড় বাধা হচ্ছে হুকুমবাদ  । কিন্তু তৎকালীন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কাজ দেখে বুঝা যায় সেখানে স্বতঃস্ফূর্ত বুদ্ধিবৃত্তিক অংশ গ্রহণ ছিল। স্বতঃস্ফূর্ত বুদ্ধিবৃত্তিক অংশ গ্রহণে বঙ্গবন্ধু  উপাধি ,জয়বাংলা স্লোগান বা জাতীয় পতাকার মত বিষয় গুলির উৎপত্তি হয়েছে। জনাব খানের বয়ানে জয়বাংলা স্লোগানের উৎপত্তি ” ১৭ সেপ্টম্বর ‘ শিক্ষা দিবস ‘ যৌথভাবে পালনের কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা চলছিল। সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আহুত সে সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে। … ছাত্রলীগ নেতা আফতাব উদ্দিন আহমেদ ‘ জয় বাংলা ‘ স্লোগানটি উচাররণ করে। সভা চলাকালে অনেকটা আকস্মিক ভাবেই সে [ আফতাব ] সকলকে চমকে দিয়ে চিৎকার করে জয় বাংলা স্লোগানটি দেয়। ( পৃষ্ঠা ১১০ )  ।      সিরাজুল আলম খান ছাত্রলীগের মধ্যে ছাত্র বুদ্ধিজীবিদের স্বতঃস্ফূর্ততার একটি প্ৰাঞ্জল বর্ণনা দিয়েছেন। এই স্লোগান সৃষ্টিতে  নিউক্লিয়াসের কোন পরামর্শ ও ভূমিকা ছিল না।   বঙ্গবন্ধু উপাধিও নিচের দিক থেকে ছাত্র বুদ্ধিজীবীদের লেখায় এসেছে প্রথম। উপরের নেতারা পরবর্তী সময়ের এই ধারণাকে লুফে নিয়েছে। জাসদের উত্থান পতন : অস্থির সময়ের রাজনীতি বইয়ের ভাষ্য ” ১৯৬৮ সালের কথা। ছাত্র সংসদের নির্বাচনী প্রচার উপলক্ষে ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগ নভেম্বর মাসে চার পাতার একটা প্রচার পত্র প্রকাশ করে। …………………এতে ছাত্র সংসদের কর্মকান্ডের একটা ফিরিস্তি ছিল। দ্বিতীয় কলামে ছিল ছয় দফা কর্মীসূচির বর্ণনা ছিল ।  শিরোনাম ছিল : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক প্রস্তাবিত পূর্ব বাংলার ‘ মুক্তি সনদ ‘ ছয় দফা। -( পৃষ্টা ২৪)

পতাকার ডিজাইনের বিষয়টি নিচের দিক থেকে এসেছে। মহিউদ্দিন আহমেদের জাসদের উত্থান পতন বইয়ে পতাকা সৃষ্টির পিছনের কাহিনী বর্ণনা করছেন – “১৯৭০ সালের জুনের ৫-৬ তারিখে মতিঝিলের হোটেল ইডেনে আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে ছাত্রলীগের সমাজতন্ত্রী গ্রুপটি একটা শোডাউনের পরিকল্পনা করে। এ উপলক্ষে ‘জয় বাংলা বাহিনী ‘ নামে একটা দল তৈরী করে কুচকাওয়াজের মহড়া দেওয়া হয়। এর আগে সার্জেন্ট জহুরুল হকের স্মৃতির প্রতি সন্মান জানিয়ে ছাত্রলীগের সিরাজ গ্রুপ ‘ জহুর বাহিনী ‘ তৈরী করে। এটাই পরে ‘জয় বাংলা বাহিনী ‘ নাম পরিচিতি পায়। ……………………….৬ জুন সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হয় জয় বাংলা বাহিনীর একটা পতাকা তৈরির , যাতে থাকবে গাঢ় সবুজ জমিনের ঠিক মাঝখানে একটা লাল বৃত্ত। ” ( পৃষ্টা ২৯ )  । পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে মনিরুল ইসলাম, কাজী আরেফ আহমেদ, সিরাজুল আলম খানদের সম্পৃক্ততা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষতা যুক্ত হয়েছে।      

১৯৭২ সালের আগে নিউক্লিয়াসের নাম কেউ শুনে নাই।  নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব নিয়ে সমসাময়িক ছাত্রনেতারা প্রায় সকলেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। নিউক্লিয়াসের কৃতিত্ব বলে যা চালানো হয় তা তৎকালীন ছাত্রলীগের কৃতিত্ব। জাসদ সৃষ্টি অতীত আন্দোলনের ধারাবাহিকতা ও ব্যাক্তি সিরাজুল আলম খানকে মহিমান্তিত্ব করতে  নিউক্লিয়াস তত্ত্বের সৃষ্টি। জাসদ গবেষক হিসেবে খ্যাত মহিউদ্দিন আহমেদের ভাষায় ” কিন্তু চোখ আটকে গেল অন্য একটি বাক্যে, ‘১৯৬২ সাল থেকেই ছাত্রলীগের ভেতরে একটি নিউক্লিয়াস বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিল।’………নিউক্লিয়াস শব্দটি চাউর হতে থাকল। জানতে পারলাম, এটি ছিল তিনজনের একটি চক্র বা সেল। ………সাধারণ মানুষকে একটা ধারণা দেওয়া হতো, তিনি প্রচারবিমুখ। এখন অবস্থা পাল্টেছে। অনেক বছর ধরেই তিনি তাঁর নিউক্লিয়াস-তত্ত্ব প্রচার করছেন, নিজে লিখছেন না। তবে ডিকটেশন দিয়ে অন্যদের দিয়ে লেখাচ্ছেন। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তাঁর উদ্যোগে ও প্রশ্রয়ে ছাপা হয়েছে অগুনতি বই, বেশির ভাগই আধা ফর্মা বা এক ফর্মার, সেখানে তুলে ধরা হচ্ছে ‘নিউক্লিয়াসের’ বিবরণ। এসব পুস্তিকায় তাঁর বয়ানটি পড়ে মনে হয়, এটা শুধু একটা প্রক্রিয়া ছিল না, এটা বাস্তবিক অর্থেই ছিল একটি সংগঠন, গোপন রাজনৈতিক দলের ভ্রূণ।  ( দৈনিক প্রথম আলো ৪ জুন ২০১৯ )

মহিউদ্দিন আহমেদ জাসদ গঠনের শুরুতেই যুক্ত ছিলেন। ১৯৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিএলএফ- মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিল। তিনি নিউক্লিয়াস এর নাম শুনলেন ১৯৭২ সালে! মহিউদ্দিন আহমেদ এদিক সেদিক সিরাজুল আলম খানের সমালোচনা করলেও মৌলিক ভাবে সিরাজ পন্থী । মহিউদ্দিন আহমেদের বর্ণনা থেকে সিরাজুল আলম খানের প্রতি আস্থার বিষয়টি ফুটে উঠেছে ” …. সিরাজুল আলম খান নিজে যেটুকু বলবেন বা অন্যকোনো চাক্ষুষ সাক্ষীর বয়ান থেকে যা জানা যাবে, সেটুকুই ইতিহাসের উপাদান হতে পারে। (প্রতিনায়ক -পৃ.৩৩৭) । কেন শুধু সিরাজুল আলম খানকে প্রশ্নাতীত ভাবে বেছে নিতে হবে এর কোন ব্যাখ্যা মহিউদ্দিন আহমেদের কোন বই থেকে পাওয়া যায় না।

সিরাজুল আলম খানের ভাষ্যে  ”  ১৯৬৭-৬৯ মধ্যে  নিউক্লিয়াস ( বিএলএফ ) এর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার সদস্য প্রতিদিন নিয়মিতভাবে আমাদের কাজে অংশ নিত। বাড়িঘর ও বাবা-মার্ সঙ্গে এদের সম্পর্ক ছিল না বললেই চলে। এই সদস্যদের স্তর ভেদ ছিল। আর সে অনুযায়ী তাদের কষ্ট সহ্য করার বিশেষ ধরণের ট্রেনিং দেওয়া হতো। যেমন রেল লাইন ধরে সাত -আট মাইল হাঁটা ও ফিরে আসা ; রাত জেগে থাকা ; খাবার এমনিতেই জুটতো না , তার পরেও কম খাওয়া এবং পানি ছাড়া কিছুই না খেয়ে ২/৩ দিন থাকার ট্রেনিং ছিল বাধ্যতামূলক। ( পৃষ্ঠা ১৪৩) ।

১৯৬৭-১৯৬৯ সাল। তিন বছর সময় কাল। একবছরে ৩৬৫ দিন হিসেবে প্রায় হাজার দিনের রাজনৈতিক কর্মকান্ডের খতিয়ান উঠে এসেছে জনাব খানের এই বক্তব্যে সাবলীল ভাবে। তবে জনাব খানের এই বক্তব্যের সমর্থনে কোন বক্তব্য বা লেখা চোখে পড়ে না। নিউক্লিয়াসের প্রধান কর্মস্থল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  মহিউদ্দিন আহমেদ বা শামসুদ্দিন পেয়ারা যুদ্ধ পূর্ব কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এই দুই জন এই জাতীয় বক্তব্যের সর্মথনে বলা থেকে বিরত থেকেছেন। কে বা কাহারা  এই সময় এই সব কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছিল তা বলা থেকে বিরত থেকেছেন সিরাজুল আলম খান । ” প্রায়  এক হাজার সদস্য প্রতিদিন নিয়মিতভাবে ” ভাবে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নিয়ে থাকলে বিষয়টি অন্যদের চোখে না পড়ার কোন কারণ নেই। সেই সময়ে পূর্ব পাকিস্থান ছাত্রলীগের নিয়মিত ভাবে সভা-সমাবেশ – মিছিলে অংশ নিয়ে আসছিল। জনাব খান কি অভিবক্ত ছাত্রলীগের সমষ্টিক অংশ গ্রহণকে নিউক্লিয়াস এর কাজ হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন?

নিউক্লিয়াসের আরেক সদস্য কাজী আরেফ আহমেদের একটি বই লিখেছেন। বইটির শিরোনাম ” নিউক্লিয়াস – বিএলএফ -স্বাধীনতা বাঙালীর জাতীয় রাষ্ট্র ” । সিরাজুল আলম খান এই বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন। জনাব খানের ভূমিকা আবেগী ও প্রাঞ্জল। জনাব খান লিখছেন ” কথা ছিল আমরা তিন জন [ সিরাজ ,রাজ্জাক , আরেফ ] মিলেই লিখবো। কাজী আরেফ আহমেদ ” বাঙালী জাতীয় রাষ্ট্র ” শীর্ষক বইটিতে যা লিখেছেন তা আব্দুর রাজ্জাকেরও কথা , আমার ও কথা। ” এই বইয়ে কাজী আরেফ আহমেদ নিউক্লিয়াস ও তৎকালীন রাজনীতি নিয়ে অনেক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তবে ১৯৬৭-১৯৬৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে সিরাজুল আলম খান বর্ণিত নিউক্লিয়াস সদস্যদের  প্রতিদিন হাজার মানুষের অংশ গ্রহণের বর্ণনা বা ইঙ্গিত নেই।  রেল লাইন ধরে ৬/৭ মাইল হাঁটার  বা হাজার খানেক ছেলে নিউক্লিয়াস এর জন্য বাবা-মা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার কোন হদিস নেই কাজী আরেফ আহমেদের বইয়ে ।

জাসদের জন্ম ও বিকাশের সাথে নিউক্লিয়াস ঢোল মাদলের আওয়াজ প্রসারিত হয়েছে ১৯৮০ এর দশক পর্যন্ত। এর পর নিউক্লিয়াস ঢোল মাদলের আওয়াজ প্রায় বন্ধ ছিল। কারণ ১৯৮২-১৯৯০ সময় কালে সিরাজুল আলম খান সামরিক শাসক এরশাদ পন্থী ছিলেন। সারা দেশের মানুষ যখন এরশাদ বিরোধী সেই মুহূর্তে নিউক্লিয়াস প্রোপাগান্ডা হালে পানি পাওয়ার কোন সম্ভবনা ছিল না। ১৯৯৭ সালে জাসদ -আরেফ -ইনু অংশের সাথে সামরিক শাসন এর সহযোগী জাসদ -রব এর ঐক্যের হয় । এই ঐক্য সিরাজুল আলম খান ও আসম রবদের রাজনৈতিক ভাবে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ দেয়। এর পর থেকে নিউক্লিয়াস ঢোল মাদল বেজে চলছে। নিউক্লিয়াস পন্থীদের বয়ানে ভাসানী-মুজিবের চেয়েও সিরাজুল আলম খানকে বেশি সক্রিয় দেখানোর প্রবণতা রয়েছে। সিরাজুল আলম খান নিজেও এই অতিকথনের অংশীদার। আমি সিরাজুল আলম খান বলছি বইয়ের ভাষ্য ”  ১৯৭০ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে আমি ও আব্দুর রাজ্জাক মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে বৈঠকে নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ গঠন এবং সাংগঠনিক বিস্তৃতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করি। নিউক্লিয়াস সম্পর্কে তিনি আগে থেকে অবগত ছিলেন না। ( পৃষ্ঠা ১৩৭ ) । কিন্তু আব্দুর রাজ্জাক লেখক মহিউদ্দিন এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেছেন ” মুজিব ভাইকে সামনে রেখেই আমরা এটা শুরু করি। তিনিই আমাদের নেতা। এ ব্যাপারে তাঁকে আমরা কিছুটা জানিয়েছিলাম ১৯৬৬ সালে। ১৯৬৯ সালে তাঁকে ডিটেইল জানানো হয়। “ (  দৈনিক প্রথম আলো ৪ জুন ২০১৯ )

কাজী আরেফ আহমেদের ” বাঙালী জাতীয় রাষ্ট্রে” বইয়ের ভূমিকায় ‘ আমি সিরাজুল আলম খান বলছি ‘বইয়ে  বর্ণিত বয়ানের স্ববিরোধিতা করে জনাব খান লিখছেন ” ৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্তিলাভের পর পরই বঙ্গবন্ধুকে নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ সম্পর্কে অবহিত করা হয়। ……………এমনকি ১৯৬৯ সালের আগে বঙ্গবন্ধুও নিউক্লিয়াস ও বিএলএফ এর কর্ম তৎপরতা সম্পর্কে জানতেন না। ” প্রসঙ্গত শেখ মুজিবর রহমান সহ আগরতলা মামলার আসামীরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। জনাব খান নিজের আত্ম জীবনীতে সুনিদৃষ্ট ভাবে লিখছেন শেখ মুজিবর রহমানকে নিউক্লিয়াস সম্পর্কে জানানো হয় ১৯৭০ সালের নভেম্বর  মাসে। অর্থাৎ মুক্তযুদ্ধ শুরুর পাঁচ মাস পূর্ব পর্যন্ত শেখ মুজিবর রহমান ছাত্রলীগের মধ্যে কি হচ্ছিল সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না !

জনাব খান সম্মানিত মানুষ। বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়ের ইতিহাসের সাথে ছাত্রলীগ ও সিরাজুল আলম খানের নাম নিবিড় ভাবে জড়িত। সিরাজুল আলম খান যখন লিখছেন বা কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছেন সেই সব লেখায় নূন্যতম মান প্রত্যাশা অতি সাধারণ চাওয়া। আমি সিরাজুল আলম খান বেশি বইটি সেই প্রত্যাশা পূরণে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে  । অতিকথনের প্রধান শত্রু ছাপার হরফ ও তথ্য প্রযুক্তি। একটা সময় ছিল বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত তথ্য সহজেই অন্য কোন তথ্যের সাথে যাচাইয়ের সুযোগ কম ছিল। ছাপার হরফ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রসার সিরাজুল আলম খানদের রহস্য ও হেঁয়ালির পিছনে লুকানোর পথকে প্রায় সংকুচিত করে ফেলেছে।

আরো পড়ুনঃ আমি সিরাজুল আলম খান বলছি – পাঠক প্রতিক্রিয়া – ১

অপু সারোয়ার: লেখক ও ফ্রীলান্স সাংবাদিক