চলমান সংবাদ

জাহাজভাঙা শ্রমিকদের ১২ দফা দাবি কেএসআরএম’র বিরুদ্ধে শিল্পমন্ত্রাণালয়ের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগ

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন জাহাজ ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরামের নেতৃবৃন্দ

জাহাজভাঙা কারখানায় সংঘটিত সাম্প্রতিক দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১২টি দাবিনামা দিয়েছে জাহাজ ভাঙা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম। এই দাবির সমর্থনে আগামী ১০ এপ্রিল প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন ও শ্রমিক সমাবেশের ডাক দিয়েছে সংগঠনটি। শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জাহাজ- ভাংগা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ৬ বছরে ইয়ার্ডে মোট ৯৭ জন দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ১২৭ জন এটিসহ সাম্প্রতিক সব দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, ঈদে উৎসব বোনাস দেওয়া, নূন্যতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা বাস্তবায়নসহ ১২ দফা দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। শিল্পমন্ত্রাণালয়ের নির্দেশ অমান্য করে কেএসআরএম বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদশন করে ইয়ার্ড চালু রেখেছে বলে অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের আহবায়ক তপন দত্ত বলেন, বিগত ১ ফেব্রুয়ারী রাত্রিবেলায় কেএসআরএম মালিকানাধীন কবির স্টিল শিপ ইয়ার্ডে কর্মরত অবস্থায় লোহার পাত পড়ে সুজন নামে ১ জন শ্রমিক নিহত হন । ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে সুস্পষ্টভাবে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ থাকলেও কবির স্টিল শিপ ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য নানামুখি অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। কোন ধরণের পূর্ব তদন্ত ছাড়া কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের এমন বয়ান মালিক পক্ষের অপতৎপরতাকে সমর্থন করে । এ ধরনের বক্তব্য ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টের সাথেও সাংঘর্ষিক। একটি রিপোর্টে দেখা যায় কেএসআরএমা’র ইয়ার্ডে বিগত ৬ বছরে ২২ টি দুর্ঘটনায় ১২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছে । এমন তথ্য কেএসআরএম ইয়ার্ড কর্মক্ষেত্র হিসাবে কতটুকু নিরাপদ তা প্রশ্নবিদ্ধ । তিনি বলেন, কেএসআরএম এ সংগঠিত দুর্ঘটনায় শ্রমিক নিহতের বিষয়ে বিগত ১৪ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে । অতীতের মতই এবারো তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক পক্ষের কোন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি । এমনকি গঠিত তদন্ত কমিটি শ্রমিক পক্ষের কোন প্রতিনিধির সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা করেনি । অন্যদিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হলেও অদ্যাবধি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি । ফলে তদন্ত রিপোর্ট নিয়েও শ্রমিকদের মাঝে এক ধরণের হতাশা এবং সংশয় তৈরি হয়েছে । তিনি বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় বঙ্গপোসাগরের উপকূলে ফৌজদার হাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে এদেশের একমাত্র জাহাজ – ভাঙ্গা শিল্প । ১৫০ টির বেশি ইয়ার্ডের রেজিস্ট্রেশন থাকলেও সক্রিয় ইয়ার্ডের সংখ্যা ৫০ থেকে ৬০ টি ।এই শিল্পের সাথে সরাসরি প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক জড়িত এবং আরো প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে । দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ শিল্পের ব্যাপক অবদান থাকলেও এ সেক্টরের কর্মরত শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে । ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে দুর্ঘটনায় মোট ৯৭ জন শ্রমিক নিহত এবং ১২৭ জনের অধিক শ্রমিক মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে । দুর্ঘটনা ঘটার পর প্রতিবারই দুর্ঘটনার কারন , নিহত ও আহত শ্রমিকদের সংখ্যা এবং আহতদের অবস্থান নিয়ে মালিক পক্ষের লুকোচুরি খেলা চলছে। বছরের পর বছর জাহাজ – ভাঙ্গা শিল্পে দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের ঘটনা ঘটলেও দায়ী মালিকদের বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়না । এ যাবৎ দুর্ঘটনায় শ্রমিক আহত – নিহতের জন্য দায়ী মালিকের বিরুদ্ধে একটিও মামলা হয়নি । এক ধরণের অঘোষিত ইন্ডেমনিটি পেয়ে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্পের মালিকেরা ক্রমশঃ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে । ফলে হতভাগ্য শ্রমিকদের দুর্ঘটনায় আহত – নিহতের মিছিল কোনভাবেই থামছেনা । দেশে এবং বিদেশে জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প খাতের ইমেজ সংকট তৈরি হয়েছে। যার দায় মালিক পক্ষ , সংশ্লিষ্ট সরকারী দপ্তর তথা শিল্প মন্ত্রণালয় এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার সমূহ নিশ্চিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কোন ভাবেই এড়াতে পারেনা । সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন ফোরামের যুগ্ন আহবায়ক মু. শফর আলী ও এ এম নাজিম উদ্দীন, ফোরামের সদস্য ও ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রামের সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খানসহ শ্রমিক নেতারা।

# ০২.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #