চলমান সংবাদ

চট্টগ্রামে নানা আয়োজনে অটিজম সচেতনতা দিবস পালিত

নানা আয়োজনে চট্টগ্রামে পালিত হয়েছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এসব কর্মসূচিতে বক্তারা বলেছেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এসব শিশুদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আচরণ, যোগাযোগ ও ব্যবহারগত পরিবর্তনের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল¯্রােতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাদের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে হলে তাদেরকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করায় প্রয়োজনীয় শিক্ষাসহ সব ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে অটিজম আক্রান্তদের পাশে সমাজের সকলকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানানো হয়। বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০২২ উপলক্ষে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের উদ্যোগে শনিবার সকাল ১০টায় একটি র‌্যালি বের করা হয়। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয়ের মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘এমন বিশ্ব গড়ি, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির প্রতিভা বিকশিত করি’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়–য়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) হাসান শাহরিয়ার কবীর। প্রধান বক্তা ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব জাকিয়া পারভীন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসক মোহাম্মদ নুরুল হায়দার। এদিকে, দিবসটি উপলক্ষে নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশন নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক ও কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরীকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের মহাব্যবস্থাপক মাহফুজা আক্তার। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন দাশের সঞ্চালনায় অটিজম দিবসের আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শ্রী প্রকাশ বিশ্বাস, পিএইচপি গ্রুপের পরিচালক এম জহিরুল ইসলাম, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক ওয়াহিদুল আলম, প্রবীণ সাংবাদিক এম নাসিরুল হক প্রমুখ। এতে অটিজম বৈশিষ্টপূর্ণ শিশু-কিশোরেরা নাচ-গান-আবৃত্তিসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেয়। প্রসঙ্গত জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হিসেব অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলায় এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ১৪ হাজার ১৮৪ জন। এরমধ্যে অটিজম ৪৫৬১ জন, বুদ্ধি প্রতিবন্ধীতা ৫৯৮৮ জন, সেরিব্রাল পালসি ৩৩১৪ জন এবং ডাউন সিনড্রম ৩১২ জনের। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ৭টিসহ মোট ১৪টি বিশেষায়িত স্কুল পরিচালিত হয়। নিষ্পাপ অটিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরী বলেন, অটিজম হচ্ছে শিশুর মস্তিস্কের স্নায়বিক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা। যার লক্ষণ জন্মের এক থেকে তিন বছরের মধ্যে প্রকাশ পায়। যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সমাজের মূল¯্রােতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, তাদের জন্য প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা বা ইনডিভিজুয়াল এডুকেশন প্ল্যান (আইইপি)। এ পদ্ধতিতে ১:১ বা ১:২ ব্যবস্থায় তাদের প্রশিক্ষিত করতে হয়। এজন্য প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট ও শিক্ষক প্রয়োজন। চট্টগ্রামে সব মিলিয়ে থেরাপিস্ট আছেন ৫০ জন, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী ঝুলন দাশ বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিশেষ যোগ্যতা আছে। তারা প্রত্যেকে কোনো না কোনো বিশেষ কাজে পারদর্শী। একারণেই তারা বিশেষ। সেই প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর সুযোগ করে দিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে শিশু মনোবিকাশ কেন্দ্র চালু করে অটিজম শনাক্ত করা, অটিজম স্কুলের পেশাদার কর্মী ও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ঘোষণা, সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের অটিজম বিষয়ে প্রশিক্ষণ চালুর তাগিদ দেন তিনি।
# ০২.০৪.২০২২ চট্টগ্রাম #