চলমান সংবাদ

একুশের বইমেলায় হামলার পরিকল্পনা নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসার আল ইসলামের

সরকার উৎখাত করে শরিয়াহ-খিলাফতভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করার লক্ষ্য চট্টগ্রামের একুশের বইমেলায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। পরিকল্পনা অনুযায়ী সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়ামের মেলা প্রাঙ্গণে জড়ো হওয়ার কথা ছিল এই সংগঠনের কয়েকজন জঙ্গির। বইমেলায় হামলা চেষ্টার অভিযোগে গত সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মেলা প্রাঙ্গণ থেকে উগ্রপন্থি এই সংগঠনের সক্রিয় সদস্য মো. রুমেল (২২)কে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এসব বিষয় জানায়। আনসার আল ইসলামের সদস্য রুমেলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা থেকে আসা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট। মো. রুমেলের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালত এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জিজ্ঞাসাবাদে রুমেল জানায়, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন খাম্বা ও পিলার পূজা করার সমতুল্য। আর এই একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যারা বইমেলার আয়োজন করেছে তারা ‘তাগুত’ অর্থাৎ সীমা লঙ্ঘনকারী। তাগুতদের আয়োজিত বইমেলা পন্ড করতেই এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়। আনসার আল ইসলামের লক্ষ্য, গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে শরিয়াহ ও খিলাফতভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জানায়, বইমেলা প্রাঙ্গণের কাছে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার মসজিদের সামনে কয়েকজন জঙ্গি নাশকতামূলক কর্মকান্ডের জন্য অপেক্ষা করছে- এমন খবর পেয়ে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা অভিযান চালান। এসময় রুমেল পালানোর চেষ্টা করলে ধাওয়া করে তাকে আটক করা হয়। দৌড়ানোর সময় পড়ে গিয়ে রুমেল সামান্য আহত হন। এছাড়া আটকের সময় ধস্তাধস্তিতে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্য নায়েক মাইকেল বড়–য়াও আহত হয়েছেন। গ্রেপ্তার রুমেলের কাছ থেকে বেশকিছু উগ্র ও জিহাদী বক্তব্যসম্বলিত প্রচারপত্র, ব্যানার জব্দ করা হয়। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে ইউনিটের একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে নগরীর কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন। গ্রেপ্তার মো. রুমেল নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের কুদ্দুস মিয়ার ছেলে। তিনি থাকেন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও থানার বড়বাড়ি এলাকায়, সেখানে তিনি একটি কারখানায় কাজ করেন। নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আহমেদ পেয়ার বলেন, গ্রেপ্তার রুমেল নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি সংগঠন আনসার আল ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য। বইমেলায় হামলার উদ্দেশ্যেই তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন সহযোগীর এই হামলায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তার কাছ থেকে উস্কানিমূলক বিভিন্ন ধরনের লিফলেট ও জঙ্গি সংশ্লিষ্ট আলামত জব্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮, ৯ (৩), ১১ ও ১৩ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় বুধবার তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। অপ্রচলিত মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে তারা নিজেদের মধ্যে সংগঠনের সব তথ্য আদান-প্রদান করেন। তবে তার সাংগঠনিক যোগাযোগসহ আরও বিস্তারিত জানতে ঢাকায় অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন মামলাটি তারাই তদন্ত করবে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মো. কামরুল হাসান বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের সদস্য মো. রুমেলকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। এদিকে, বইমেলা থেকে ওইদিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি সন্দেহভাজন হিসেবে ২০ বছর বয়সী আরও এক মাদ্রাসা ছাত্রকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল। পরে তাকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে উগ্রপন্থি কর্মকান্ডে যুক্ত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দীন। প্রসঙ্গত, গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম প্রাঙ্গণে একুশের বইমেলা শুরু হয়। মেলার উদ্বোধনের সময় সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে- এমন কোন বই মেলায় রাখা যাবে না বলে জানান। বইমেলার স্টল বরাদ্দের আবেদন ফরমেও বলা হয়, “মেলার স্টলে স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ও পাইরেটেড কোনো বই রাখা যাবে না। এ ধরনের কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এ নিয়ে কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইমেলায় ‘ইসলামী বই বিক্রি করা যাবে না’ এমন গুজব ছড়িয়ে মেলা বয়কটের আহ্বান জানানো হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মেলা উদ্বোধনের সময় মেয়র বলেছিলেন, “ইসলামী ধর্মীয় বই রাখা যাবে না, এটা কোনোখানে বলা হয়নি। জঙ্গিবাদের আশ্রয়দাতা যারা জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে, যে বই পড়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম জঙ্গিবাদে উৎসাহিত হয়- সেসমস্ত বই এই মেলাতে রাখা যাবে না।” # ২৩.০২.২০২২ চট্টগ্রাম #