স্বাস্থ্য

কখনো একটি মাত্র ফুসফুস ২

-মিলন কিবরিয়া

ছেলে না মেয়ে? গর্ভ ধারণের পর এই কথাটিই সবচেয়ে বেশি ঘুরপাক খায়। পুত্র না কন্যা? সন্তান জন্মের পর এই প্রশ্নটিই সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়। বাবা-মার সাথে সাথে সন্তানের অন্যান্য নিকট আত্মীয়দেরও সবার আগে এই প্রশ্নের এর জবাব দিতে হয়। এই জিজ্ঞাসার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। নবজাতক সুস্থ কিনা, স্বাভাবিক কিনা, জন্মগত কোন ত্রুটি আছে কিনা!?
সন্তান ছেলে না মেয়ে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সন্তান সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক কিনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে প্রতি একশত নবজাতকের ছয় জনই জন্মগ্রহণ করে ত্রুটি নিয়ে, সংখ্যাটা নেহাত কম নয় । আর প্রতি বছর প্রায় ৩ লক্ষ নবজাতক জন্মগত ত্রুটির কারণে মারা যায়। অবশ্য মৃত সন্তান প্রসবের বিষয়টি এই হিসাবে নেয়া হয়নি। আবার ত্রুটিযুক্ত অনেক ভ্রূণের গর্ভপাত হয়ে যায়, প্রসব পর্যন্ত অগ্রসরই হয় না।
ত্রুটিযুক্ত অপূর্ণাঙ্গ শিশু বাবা-মা তো বটেই , পরিবারের সবার জন্যই মর্মান্তিক। গুরুতর জন্মগত ত্রুটির শীর্ষে আছে হৃৎপিণ্ড ও স্নায়ু তন্ত্রের ত্রুটি। এই ধরণের ত্রুটি জীবন সংশয়ের কারণ হয়, স্বাভাবিক জীবন যাপনকে মারাত্মক ভাবে ব্যহত করে। আবার অনেক ছোটখাট জন্মগত ত্রুটি নিয়ে মানুষ অনায়াসে জীবন পার করে দিতে পারে।
ফুসফুসের ক্ষেত্রেও কি এমনটি হতে পারে!?
হ্যা, তাও পারে। এমনকি দুইটি ফুসফুসের একটি বা উভয়ই জন্মগত ভাবে নাও থাকতে পারে। অর্থাৎ ফুসফুস তৈরিই হয়নি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম এজেনেসিস অফ লাং বা পালমোনারি এজেনেসিস ( Agenesis of Lung/ Pulmonary Agenesis)। তবে মন্দের ভালো হচ্ছে জন্মগত ভাবে ফুসফুসের এই অনুপস্থিতির হার কম, এক লক্ষে প্রায় এক জন।
একটি ফুসফুস যদি জন্ম থেকেই না থাকে তা হলে কি বেঁচে থাকা সম্ভব?
তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর। সাধারণত একটি জন্মগত ত্রুটি একাধিক ত্রুটি থাকার শঙ্কার কারণ হয়। সে ক্ষেত্রে অন্যান্য ত্রুটির কতটা মারাত্মক তার উপর নির্ভর করে শিশুর অসুস্থতার মাত্রা ও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা। কেবল মাত্র একটি ফুসফুস ভিন্ন অন্য কোন জন্মগত ত্রুটি না থাকলে জীবন ধারণ সম্ভব। মজার বিষয় হচ্ছে জন্মগত ভাবে এক ফুসফুসের অধিকারী ব্যক্তির ফুসফুস অনুপস্থিত ফুসফুসের অভাব পূরণ করতে গিয়ে বড় হয়। ফলে কোন অসুস্থতায় আক্রান্ত না হলে এবং পরীক্ষা না করলে বোঝার উপায় নেই যে তিনি এক ফুসফুস নিয়েই দিব্যি স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আসছিলেন।
তবে যেহেতু ফুসফুস একটি, তার যত্ন নেয়া ও সতর্ক থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ফুসফুস জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য। একটি মাত্র ফুসফুস যা জীবনকে চালিয়ে নিচ্ছে তার অকার্যকারিতা মানেই জীবন সংশয়।
বলা বাহুল্য, জন্মগত ভাবে উভয় ফুসফুসের অনুপস্থিতির অনিবার্য পরিণতি মৃত্যু।
মিলন কিবরিয়া চিকিৎসক ও গল্পকার