মতামত

আইন মেনেই বলছি 

-উত্তর পুরুষ

ছোট বেলায় সব কিছুতেই তিরস্কার করা হত। এটা কেন করেছিস, ওইটা কেন ভেঙ্গেছিস, ঐ দিকে কেনো গিয়েছিস, এটা কেন খেয়েছিস এইসব প্রশ্ন আর সাথে তিরস্কার। মাঝে মাঝে তিরস্কারের জ্বালায় খাটের নিচে গিয়ে লুকিয়ে থাকতাম। কি একটা অবস্থা ভাবেন তো? আর পুরস্কার? হুমম। সেটা কখনো কপালে জুটেনি। স্কুলে, পাড়ায় কত রকমের না প্রতিযোগিতা হত। একশ মিটার, দুইশ মিটার দৌড়, হাই জাম্প, লং জাম্প থেকে ফুটবল খেলা-সব কিছুই হত  স্কুলে। আর পাড়ায় হত ব্যাডমিন্টন, গান,নৃত্য থেকে শুরু করে মার্বেল খেলার প্রতিযোগিতা। কিন্তু জীবনে কখনো কোন পুরস্কার মেলেনি। দেখেন, আপনারা আবার ভাববেন না যে আমি আমার দুঃখের কাহিনী বলতে এসেছি। ছোট করে বলে রাখি কেউ যেন না জানতে পারে, একটু দুঃখ তো আছেই। থাকবে না? যারা পুরস্কার পায় না তাদের একটু এইসব দুঃখ দুঃখ ভাব থাকেই। আর এই ফেব্রুয়ারী মাসে দেখেন দেশে সব বড় বড় পুরস্কার পাচ্ছেন লোকজন। একুশে পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার। যারা পাচ্ছেন তাদের প্রশংসায় চারদিক  সয়লাব। তাদের লেখার গুণগান। যেন পুরস্কারের পর সবাই বুঝতে পেরেছেন উনাদের লেখা ভাল, লেখায় সমাজের কথা থাকে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেন ভাই উনারা তো লম্বা সময় ধরে লিখছেন। আপনারা কি জানেন না কি ধরনের লেখা উনাদের, লেখার মান কি? যাকগে এই সব কথা বললে মাইন্ড করবেন। আমি বাবু ঝামেলায় নাই। দরকারটা কি, বলেন? একবার দুঃখটা এক বন্ধু কে বলেছিলাম। সে তো হেসেই অস্থির। যাকগে, সে হেসে যে উত্তর দিয়েছিল তা নাই বা বললাম।

থাক, কথায় কথা বাড়ে শেয়াল লেজ নাড়ে। তো কথাটা হল। আমাদের বিরোধী দলীয় নেত্রীর কথা বলছিলাম। উনি একেতো অসুস্থ। আগে উনার সুনাম ছিল কথা কম বলেন তাই। এখন তো আর কথা শোনা যায়না। অবশ্য উনার বিরুদ্ধ পক্ষ বলেন- উনি কম জানেন, তাই কম বলেন। যাকগে- উনি বেশি জানেন কি কম জানেন এইসব আমার মত আম-জনতার দরকার কি? উনি কম বলেন এটাই সত্য। অসুস্থ অবস্থায় আছেন তার উপর একটার পর একটা মামলায় জর্জরিত । বন্দী হয়ে জেলে আছে দীর্ঘদিন । এই সময়ে  একটা সুখবর নিয়ে আসলেন উনার শিষ্য, তথা অনুচর তথা পশ্চাদনুসারীরা । না না আমাকে ভুল বুঝবেন না গুগলে গিয়ে ফলোয়ার এর বাংলা দেখলাম এগুলো সব। তাই চিন্তা করলাম ইংরেজীতে না লিখে বাংলায় লিখি। আসল কথায় আসি। সুখবরটা কি? উনি মাদার অফ ডেমোক্রেসী পুরস্কার পেয়েছেন। খুব আনন্দের সংবাদ। বাহ। আমাদের দেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী মাদার অফ ডেমোক্রেসী পুরস্কার পেয়েছেন এটাতে খুব খুশি লাগছে। ইচ্ছে করছে একটা কেক কেটে উদযাপন করি। থাক থাক, কেক কাটতে গেলেই আবার সবাই বলবেন ১৫ আগষ্ট উনার জন্মদিন পালনের কথা। সাথে সাথে বলবেন উনার কয়টা জন্মদিন গো? এই সব কথা বার্তা । বাদ দেন, আমার কেক কাটার দরকার নাই। খামাক্কা আবার কোন ভেজালে যাই। আবার কথা হল গিয়ে এটা আবার তিন বছর পুরান। ২০১৮ সালের। তো কেন এতদিন লুকিয়ে রাখলেন ? উনার পশ্চাদনুসারীরা বললেন-উনি জেলে, উনি অসুস্থ তাই বলি নাই। ভাইরে, একটা পুরস্কার বলে কথা, আপনারা লুকিয়ে রাখলেন? কেমন শিষ্য আপনারা বলেন তো? বুঝি না ভাই, বড়র কেরামতি সব। আমাদের পক্ষে বুঝা কি সম্ভব। এক শিষ্য বললেন উনিতো স্বৈরাচার বীরোধী আন্দোলনে আপসহীন ভুমিকা পালন করেছিলেন, আবার বর্তমান সরকারের সময় ও আপসহীন , তাই এই পুরস্কার। বেশ ভাল কথা। তা উনার সরকারের সময় গণতন্ত্র কেমন ছিল? থাক থাক, সব কথা জানতে নাই, প্রশ্ন করতে নাই। সেটা সরকারী দলের কাছে হোক বা বিরোধী দলের কাছে হোক। সবাই তো ক্ষমতার লোক তাই না। আমার মত আম- জনতার কারো কাছে প্রশ্ন করার অধিকার কি আছে? তিন বছর আগের পুরস্কার এখন ঘোষনা দেন, উনি ক্ষমতায় থাকা কালীন সময় বাদ দিয়ে গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী থাকেন , এইসব বিষয় নিয়ে আমার কি বলার আছে। রাজনীতিতে তো আর তিরস্কারের ব্যবস্থা নাই । 

ভাই, এইসব পুরস্কার, গণতন্ত্র এইগুলো নিয়ে কথা বলে কি হবে বলেন। এইগুলো সব দুঃখের কথা। নিজের কথা না বলে চলেন সবাই মিলে দুখের গান শুনি-কারে দেখাব মনের দুঃখ গো আমার বুক চিরিয়া/ অন্তরে তুষেরই আগুন জ্বলে রইয়া রইয়া।।