ফাটল – শাহিন আকতার হামিদ
হাসান সাহেবের কাশিটা একটু বেশিই হচ্ছে। পিয়ন দুবার চা দিয়ে গেল, তাতে তেমন কাজ হচ্ছেনা। ম্যানেজারকে ডেকে বললেন, ‘মিঃ কালাম আপনি একটু দূরেই বসুন, মনে হচ্ছে রাজমাতা আমাকে রেহাই দিবেনা।‘ কালাম বললেন, ‘স্যার বুঝলাম না,’ ‘আরে ওইযে ভাই করোনা না কি, ওটাকে আমি এ নামেই ডাকি, আমার বাচ্চারা হাসে।‘
বাসায় যাওয়ার জন্য অফিসের নীচে নেমে ড্রাইভারকে বললেন, ‘তুই একটু দূরে থাক আমার থেকে, মনে হচ্ছে আমি আক্রান্ত।‘ ঘরে ফিরে তিনি অভ্যাস বসত শোবার ঘরেই গেলেন। যেটা তার একেবারেই ঠিক কাজ হয়নি। বউ বিছানায় আধশোয়া হয়ে ভিডিও চ্যাট করছে বন্ধুদের সাথে। বউ বিলকিস বানু, পরে নাম হয়েছে বিলি, বন্ধুদের বলছে কি কি দিয়ে চা খেতে হবে, কতবার গারগেল করতে হবে, কারো হলে অমানুষ হলে চলবেনা, দূরে থেকে হলেও সেবা করতে হবে, আরও অনেক উপদেশ। হাসান সাহেব খুক করে একটা কাশি দিলেন। বিলি ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, ‘তোমার সমস্যা কি, লুকিয়ে আমার কথা শুনছিলে?’ বন্ধুদের বলল, ‘এই তোরা রাখ, একটু পরে আবার ফোন করব।‘
হাসান সাহেব কেশেই চললেন, বিলি ভয় পেয়ে ছেলেমেয়েদের ডাকাডাকি শুরু করে দিল। ছোট মেয়ে বাবার কাছাকাছি যেতেই মা চিৎকার দিয়ে বলল, ‘কাছে যাসনা,’ মেয়ে থমকে গেল। বড় মেয়ে ও ছেলে বলল, ‘এখনই বাবাকে হাসপাতালে পাঠাও।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘আমি গেস্ট রুমে বা মায়ের ঘরে চলে যাই।‘ বিলি বলল,’ না তুমি মায়ের ঘরে যাবেনা, ওখানে আমার বন্ধুরা আসলে আড্ডা দি, গেস্ট রুমে যাও।’ হাসান সাহেব হাতের ব্রিফকেসটি ফ্লোর থেকে তুলে চলে গেলেন মূল দরজার সাথে লাগোয়া গেস্ট রুমে।
শুরু হয়েছে বাড়িতে কর্মযজ্ঞ। সবার ঘর পরিস্কারের কাজ চলছে। বিলিও বসে নেই, তিন কাজের মানুষ, ছেলে মেয়ে সবাই পালটে ফেলেছে ঘরে কাপড়ের সব কভার। ছেলেমেয়েরা তাদের নিজেদের ঘর মুছছে হারপিক ও ডেটল পানি দিয়ে। প্রতিটা ইঞ্চি, প্রতিটা কণা। সব কাপড় ও কাপড়ের ঢাকনা জাতীয় জিনিসগুলো লন্ড্রিতে পাঠানোর জন্য রান্নাঘরের বারান্দায় রাখা হল। ছেলে বলল, ‘মা কাজের লোককে বিদায় কর,’ মেয়ে বলল, ‘কাজ কে করবে? ওদের সব কাপড় পাল্টে নুতন কাপড় দাও।’ বিলি বলল, ‘আমার পুরোনো সব কাপড় আমি তো রোটারিতে দিই, ওরা গ্রামে পাঠিয়ে দেয়, তোর কিছু থাকলে দে।’ ছোট মেয়ে তার ওয়াড্রোব খুলে দেখল সারি সারি সালোয়ার কামিজ, সেখান থেকে ছয়সেট কাপড় তুলে ওদের দিল। বিলি হা হা করে উঠল, ‘এতো দামের কাপড়গুলো দিয়ে দিলি।’ ছোটমেয়ে টুম্পা, হলিক্রসে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে, দেখতে কিছুটা বাপের মতো, শুধু হাসল।
ড্রাইভারের বউ এ কাপড় পেয়ে মহা খুশি, হাজার টাকা দামের সালোয়ার কামিজ, সারা জীবনেও কিনতে পারবেনা। নিজের পড়ার কাপড়গুলো সাথে বিছানার চাদর বালিশের কভার সব মালিকদের কাপড়ের সাথে বড় বড় ক্যানভাসের ব্যাগে ভরে বারান্দায় রেখে দিল। ভাবলো ‘কাল এগুলো লনড্রিতে পাঠিয়ে দিব, তানা হলে বিলিম্যাম ঘুম থেকে উঠে মত পালটে ফেলতে পারেন , হয়ত বলবেন কাপড় ধুয়ে ছাদে শুকোতে দে’।
হাসান সাহেবের আপাত বাস অতিথি ঘরে কেউই গেলনা। তিনি সেই যে বহুদিন আগের চাদর দেয়া বিছানায় শুয়ে থাকলেন তা আর কেউ খেয়াল করেনি। জুতোটা তিনি খুলেছিলেন, আর কোন কাপড় এ ঘরে নেই, রাতের পাজামার জন্য অনেকবার ডেকেও কাউকে পাওয়া গেলনা। কেউই খাবার পানি বা চা দিলনা। একবার দরজা খুলেছিলেন, বুয়া সাফিয়া বলল, ‘স্যার আপনি আমাদের সবাইকে মারবেন না, ঘরে যান, যা লাগে সময় মত দিমু।‘ হাসান সাহেব দেখলেন বউ বাচ্চাদের ঘরে দরজা সব শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল। তিনি ভাবছিলেন আচ্ছা ওরা ভাল থাক। আমারতো এখনও কোন টেস্ট হয়নি। কদিন ধরেই সর্দি ছিল, এটা তো তার প্রতি বছরই এ সময় হয়।
হাসান সাহেবকে সময়মত আর কিছু দেয়া হয়নি। তিনি টেবিলে একগ্লাস পানিও পান নি। সকালে ড্রাইভার আসতে তিনি বললেন, ‘আমার জন্য কিছু খাবার নিয়ে আয়।’ মাস্ক ও গ্লাফস পরিহিত ড্রাইভার বলল, ‘ম্যাডাম বলছেন আপনাকে ঘরে খাবার না দিতে তারা কাল সারাদিন বসে ঘর পরিস্কার করছে, আপনার হাসপাতালে যাওন লাগবে।’‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘চল যাই,’ তিনি কোট নিলেন না, দামী জুতাটাও পায়ে দিলেন না, একজোড়া স্যন্ডেল দিতে বললেন। তিনি অপরাধীর মত ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলেন।
হাসান সাহেব গাড়িতে বসে থাকলেন, তার কাশি কিছুটা কম। ড্রাইভার তার জন্য রাইফেল স্কয়ার থেকে খাবার নিয়ে এলো, বিরানী, তিনি পেট ভরে খেলেন। বললেন, ‘চল মুগদা পাড়া যাই।‘ যাওয়ার আগে তিনি রাইফেল স্কয়ারে ঢুকে অনেক টাকা বের করলেন কয়েকটা ব্যাংকের কার্ড দিয়ে। টাকাগুলো, ব্যাঙ্কের কার্ডগুলো ব্রিফকেসে রেখে, কোড দিয়ে দিলেন, ফোনটা হাতে রাখলেন। এরপর চলে গেলেন মুগদা হাসপাতালে। তার কথা বললেন তিনি কেন হাসপাতালে ভর্তি হতে চান। প্রথমে রাজি হয়নি কেউ। পরে সবার পকেটে তিনি মুঠো ভর্তি টাকা দিলেন। নেয়া হল ভর্তি করে, দেয়া হল তাকে কেবিন। না তার কোন করোনা টেস্ট হয়নি। হবে বলে মনে হয়না।
রাতে নার্স এসে দূর থেকে খাবার ও প্যারাসিটামল দিয়ে গেল। একটি থার্মমিটার দিয়ে বলল, ‘জ্বর মাপেন, মেপে এখানে লিখুন।‘ আহা কি কর্কশ সে নির্দেশ। নার্স বলল, ‘এটা এখন আপনারই করন লাগবে।’ জ্বর দেখলেন একশত ডিগ্রী। ভাত ও মোরগের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে নিলেন। রাতে কাশির গতি এতো বেশি যে সব বমি হয়ে গেল ও তারমধ্যেই তিনি ঘুমিয়ে থাকলেন, কেউ আসেনি। সকালে কেউ একজন এসেছে, তারপর তিনি তলিয়ে যাচ্ছিলেন পানির নীচে, একবারও দম নিতে পারছেন না। তারপর কি হল জানেন না।
হুশ যখন ফিরল তিনি আর কেবিনে নেই একটা ওয়ার্ডের বিছানায় শুয়ে আছেন, আশে পাশে সব অচেনা মানুষ। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন আমি কোথায়, কেউ একজন বলল, ‘আমরা সবাই কুর্মীটোলা হাসপাতালে। আপনার করোনা হইছে। আপনেতো দুদিন ধইরা খালি ঘুমাইতেছেন।’ হাসান সাহেব বললেন, ‘আপনি কে? পাশের তিনি বললেন, ‘আমি বাস ড্রাইভার,’ আর একজন বলল, ‘আমি সি এন জি চালাই, হালাই প্যাসেঞ্জার আমারে করোনা দিছে, ভাল হইয়া গেছি।’ বাস ড্রাইভার বলল, ‘আপনার ঔষধ পানি খাবার সব নার্স দিয়া গেছে, আপনিতো কিছু খান নাই, দুবার আপনার রক্ত নিছে। নেন খাবার খান।’ সি এন জি ওয়ালা বলল, ‘ নেন ভাইসাব খাবার খান, আমারও করোনা আপানারও করোনা। আমাদের আর হবে না।‘
হাসান সাহেব বললেন, ‘আমার সাথে একটা ব্রিফকেস ছিল সেটা কোথায়?’ একজনে বলল, ‘ওইযে আপনার বিছানার নীচে আমরা কেউ ধরি নাই। এখন আমরা সবাই মরছি, কে কারটা চুরি করবে?’ হাসান সাহেব পাউরুটির সাথে একটি ডিম সিদ্ধ খেলেন। ঔষধ খেলেন, তারপর আবার ঘুমালেন। দুপুর, বিকাল, রাত তিনি নার্স আসলে শুধু একটা কথাই বলেন , ‘খাবার আর ঘুমের ঔষধ দেন আমি শুধু খাব আর ঘুমাব।’ নার্সকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার বাড়ির কেউ এসেছিল,’ নার্স বলল, ‘আপনার বাড়ির মানুষ দেখি নাই, তবে এক লোক এসে বলেছিল সে আপনার ম্যানেজার। মুগদা হাসপাতাল থেকে তারাইতো আপনারে এখানে এনেছে। আমরা ভেবেছিলাম আপনি মারা যাবেন, শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। এখন ভাল আছেন। আপনার মায়ের দোয়া আছে।’
না তার আদরের বিলি আসেনি, বা খবর নেয়নি, আসেনি কোন মেয়ে বা ছেলে। অবশ্য বড় ছেলে মেয়েরা তাকে খুব একটা পাত্তা দেয়না, তারা মায়ের সাথে থাকে, মা ই তাদের সব আবদার মেটায়। বাচ্চারা ভুলে গেছে যে বাবা নামে কেউ একজন আছে যে তাদের টাকা বানানোর যন্ত্র। নানাবাড়ি তাদের প্রিয় জায়গা। নানী অন্ত প্রাণ। দাদিকে সহ্য করতে পারতো না, বলেই এতো পয়সার মালিক হয়েও মাকে গ্রামে রেখে আসতে হয়েছে হাসান সাহেবের। আমার সন্তানদের ভালবাসতে পারেনি আমার মা, কি দরকার তাকে কাছে রেখে, এটাই ভেবেছিলেন হাসান সাহেব। তার চেয়ে স্মার্ট শাশুড়ি কাছে থাকলে বাচ্চাগুলো ভাল থাকে, বিলিও আনন্দে থাকে। প্রথম দিকে হাসান সাহেব তার নিজের মাকে টাকা দেয়ার চেষ্টা করে ছিলেন , কিন্তু মা বলেছে, ‘তোমার বাবার পেনশনের টাকাই আমার ভাল চলে, তোমার টাকা লাগবেনা, তুমি ভাল থেকো।’ ছেলে তখন অহংকারী কন্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার কাজের বুয়া যে টাকা পায় তার অর্ধেক টাকা দিয়ে তুমি কি করবে খাবে না মাথায় দিবে।’ মা হেসে বলেছিলেন, ‘আমাকে গ্রামে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা কর বাবা।‘ এখন এ অর্ধেক হয়ে থাকা মগজের মধ্য থেকে আজ মায়ের জন্য তার মন খারাপ হতে থাকল।
কুর্মীটোলা হাসপাতালের নার্স ও পাশের বিছানার রোগীদের সেবায় ভাল হয়ে গেলেন হাসান সাহেব। কোন ডাক্তারের দেখা তিনি পান নি। তার হাতে একটা ফোন ছিল, সেটার কোন হদিস নেই, কারো ফোন নাম্বারও মনে নেই। নার্সকে বললেন, ‘আমার অফিস থেকে যারা এসেছিল তাদের খবর দিতে পারবেন?’ অফিসের নামটা বললেন, আর বললেন কোথায় অবস্থিত। বাড়ির ঠিকানাও মনে আছে। আজ নার্স এসে বলল, ‘স্যার আপানারা যারা ভাল হয়ে গেছেন তাদের সবার বিছানা ছাড়তে হবে, আমাদের রোগীতে বারান্দা ভরে গেছে। আপনার যারা ভাল হয়েছেন তারা চলে যান, প্লিজ।’ হাসান সাহেব একটি কাগজে সই করে কাউন্টারে গেলেন বিল দিতে, না তার পা চলছিল না, হাত কাঁপছিল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে বললেন ব্রিফকেসের লক নাম্বার, তিনি খুলে দিলেন ব্রিফকেস। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনেক টাকা থেকে দু’মুঠো তুলে তিনি কাউন্টারে রাখলেন, বললেন ,আমার মত যে সব বেওয়ারিশ রোগী এখানে আসে তাদের খাবার দিবেন এ টাকায়।’‘পাশের লোকটির দিকে তাকিয়ে দেখেন সে সি এন জি ড্রাইভার, বললেন, ‘ভায়া আমাকে একটি উবার ডেকে দিতে পারেন।’ কাউন্টারের একটি লোক উঠে এসে বলল, স্যার এখানে বসেন আমি গাড়ি ডেকে দিচ্ছি, আপনি কোথায় যাবেন?’ তিনি বুঝলেন টাকায় কাজ হচ্ছে।
সি এন জি ড্রাইভারকে বললেন, ভায়া আপনিতো আমার অনেক সাহায্য করেছেন, আর একটু করবেন, যাবেন আমার সাথে?’ ড্রাইভার বলল, ‘ভাই আমার সি এনজি চালাতে হবে, বসিলায় বউ তিন বাচ্চা না খেয়ে আছে, ওরাতো ভিক্ষা করতে পারবে না।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘আপনি এখন কেমন করে সি এনজি চালাবেন, শক্তি আছে, তার চেয়ে আমার সাথে চলেন। আপনারও করোনা, আমারও করোনা ভয়তো নেই।‘
উবারে তারা ধানমন্ডি তিনে তার সে বিশাল সিরামিক ইটের বাড়ির সামনে আসলেন, যেখানে একটি ডুপ্লেক্স ফ্লাটে আট বেড রুমের বাসায় হাসান সাহেবের বাস। উবার থামার সাথে সাথে উবারের ড্রাইভার হই হই করে উঠল বলল, ‘এবাড়ি লকডাউন। এখানে করোনা রোগী ছিল।‘ হাসান সাহেব বহু কষ্টে গাড়ি থেকে নামলেন। দারোয়ান দশ হাত দূরে পিছিনে গিয়ে বলল, ‘স্যার আপনি, আপনি না করোনায় মারা গেছেন!’ হাসান সাহেব হেসে বললেন, ‘হ্যা আমি ভুত, তালা খোল।’‘ দারোয়ান বলল, ‘তালা খোলা নিষেধ স্যার, পুলিশ বলেছে এ কথা। আপনার ঘরের সবার টেস্ট হইছে, কারই করোনা পাওয়া যায় নাই। কাল আমাদের সবার টেস্ট হবে, তারপর সরকার যদি বলে তালা খুলব।‘ পার্কিং লটে ও তার উবার ঢুকতে দিচ্ছেনা ড্রাইভার। অনেক ক্ষমতা সম্পন্ন হাসানের আজ মনে হচ্ছে তার চেয়ে গরীব মানুষ ঢাকায় আর একজনও নেই। ভিতরটা ভেঙ্গে গুড়িয়ে যাচ্ছিল। কিছুক্ষণ পরে দারোয়ান এসে দূর থেকে বলল, ‘স্যার আপনার ছেলে কথা বলবে। আমি ইন্টারকম দিয়ে আপনার বাসায় ফোন করেছিলাম। স্যার এ রুমালটা দিয়ে ফোনটা ধরবেন।‘ হাসান সাহেব তার কাছে থাকা টিস্যু ‘দিয়ে ইন্টারকমের ফোন ধরাতে ওপাশ থেকে ছেলের রাগত্ব কন্ঠ, বাবা তুমি কি চাও আমরা মরে যাই, তুমি কিছুদিন দাদীর কাছে গিয়ে থাক।‘ হাসান সাহেব হেসে বললেন, কেন তোর দাদীর মৃত্যুর ভয় নেই বাবা।‘ ছেলে তার মাকে ফোন দিল, বিলি বলল, ‘ তুমি এখান থেকে না গেলে আমি পুলিশ ডাকব, আমাদের জীবনের একটা দাম আছে।‘ আরো কিছু বলল, হাসান সাহেব না শুনেই ফোনটা ছেড়ে দিয়ে হাসতে থাকলেন।
উবারের ড্রাইভার বলল, ‘স্যার আমারে বিদায় দেন।‘ হাসান সাহেব বললেন, তোমাকে আমি ঘন্টা হিসাব করে টকা দিব। তুমি কি মানিকগঞ্জ যাবে?’ ড্রাইভার বলল, যাব স্যার। সি এনজি ওয়ালা বলল, ‘স্যার আমারে ছেড়ে দেন আমি বসিলা যাই, বউ বাচ্চা না খেয়ে আছে।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘চল আমিও যাই।‘
বসিলার বস্তিতে একরুমের একটা ঘরে সি এন জি ওয়ালা হাবিব থাকে। বাসার সামনে এসে হাবিব তার বউকে ফোন করল, বউ দৌড়ে আসল, বলল, তোমার তো করোনা নাই, ঘরে আস।‘ হাবিব বলল না খাবার থাকলে তিনজনের জন্য দাও, আমার সাথে এক বড় সাহেব আছে। ’ হাবিব গাড়ির কাছে এসে বলল, স্যার আমার বাসায় যাবেন, বসার জায়গা আছে।‘ হাসান সাহেব বললেন, না আমরাতো জানিনা, আমাদের ভিতরে ভাইরাস আছে কিনা।‘ এর মধ্যে হাবিবের বউ ভাত দিয়ে ঘরে ডাকল, হাসান সাহেব গেলেন না। হাবিব ও উবার ড্রাইভার ভিতরে গিয়ে খাবার নিয়ে আসল, ভাত, মুরগীর মাংস আর পাতলা ডাল। হাসান সাহেব অনেক ভাত খেলেন।
এরপর বললেন, ‘আমাকে এককাপ চা দিতে বল।‘ হাবিব চা নিয়ে এসে বলল, ‘স্যার আমি থেকে যাই, ড্রাইভার সাহেব আপনি যেখানে যেতে চান নিয়ে যাবে।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘হাবিব তোমার বউকে ডাক।‘ হাবিবের বউ এসে গাড়ি থেকে একটু দূরে দাঁড়াতেই হাসান সাহেব বললেন, ‘আপনি আজ আমাকে যে ভাত খাওয়ালেন তা আমি ভুলব না। আমি হাবিবকে একটা কাজ দিতে চাই ও শুধু আমার সাথে থাকবে। হাসপাতালে সেই আমার খাবার দিয়েছে, ঔষধ খাইয়েছে। এই নিন এমাসের বেতন।‘ বিশ হাজার টাকা হাবিবের বউয়ের হাতে দিলেন। হাবিব বলল, ‘স্যার আপনি দশ হাজার দেন, আমি এতো টাকা রোজগার করি না। আমি সি এন জির ভাড়া দিয়া ঘরে মাত্র পাঁচ হাজার আনতে পারি, দুইহাজার ঘর ভাড় দেই , তিনহাজার টাকায় খাই।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘হাবিব আজ থেকে তুমি আমার সেক্রেটারি।‘
হাসান সাহেব বললেন, ‘ড্রাইভার সাহেব চল আমরা মানিকগঞ্জ যাই। তার আগে চল বসুন্ধরায় গিয়ে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে নি। ড্রাইভার বলল, ‘স্যার সাভার থেকে কিনব, বসুন্ধরা খোলা নেই। ব্লিচ, নানা জাতীয় সাবান, সার্জিকাল মাস্ক আর গ্লাভস কিনলেন। প্যান্ট সার্ট ও অন্যান্য কাপড় কিনলেন। সাভার থেকে সবকিছু কিনে নিয়ে তারা চলে গেলেন মানিকগঞ্জ। এটাই তার পৈত্রিক বাড়ি। দোচালা টিনের ঘর, মা অবাক হয়ে সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে। তার ছেলে আস্তে আস্তে হেঁটে ঘরে আসছে। হাসান সাহেব বললেন, ‘মা আমাকে তুমি ছুঁয়োনা আমার করোনা হয়েছে।‘ মা বলল, ‘তাই তুমি এতো নরম হয়ে গেছ বাবা।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘মা আমাদের দুজনেরই করোনা হয়েছে শুধু ড্রাইভারের হয়নি। তুমি ওর কাছ থেকে কাপড় ও অন্য জিনিসগুলো নাও।‘
মা বারান্দায় রাখা চেয়ারগুলোতে ওদের বসতে বলল। হাসান সাহেব চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখছিল। মা কত সুন্দর করে বাবার বইগুলো গুছিয়ে রেখেছে। বাবা সাহিত্যের শিক্ষক ছিল পরে রাজবাড়ীর একটা কলেজে অধ্যক্ষ থাকাকালীন সময়ে মারা যায়, হাসান সাহেব তখন আমেরিকায় পড়েন। তারপরই দেশে ফিরে ব্যবসা করে আজ তার অনেক টাকা। এখন ব্যবসা ডালপালা মেলে অনেক শাখা প্রশাখায় বিস্তার লাভ করেছে।
সামনের বারান্দায় বইয়ের আলমারি, চেয়ার, ও একটা চকিতে তোসক চাদর বিছান, ঘরের ভিতরে কি সে তা জানেনা। ভাবছে মা হয়তো এখানেই ঘুমায়। পিছনের বারান্দায় কি তাও জানেনা। বিদেশ থেকে আসার পর আর তার বাড়ি আসা হয়নাই। মা মাঝে মাঝে ড্রাইভার সহ আসত । শেষ বারে এসে আর যাওয়া হয়নি কারণ বিলির বাড়ি তারজন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
মা বলল, ‘বিলি ও নাতি, নাতনিরা কেমন আছে, বেয়াইনের কি খবর? হাসান তুমি কি রাতে থাকবে?’ বলল, ‘হা মা থাকব, শরীরে শক্তি ফিরে আসলেই কাজে যাব।‘ ড্রাইভারকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলল, ‘তুমি কাল আবার এসো। হাবিব আমার সাথে থাক।‘
মা সবার জন্য চা ও বিস্কুট দিল। ড্রাইভার বলল, ‘স্যার আমাকেও আপনে হাবিবের মত একটা চাকরি দ্যান। আমি প্রতিদিন আপনার কাছে আসব।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘কাল আসার সময় নবীনগর থেকে অনেক ফল নিয়ে আসবে, যা পাওয়া যায়।‘ ড্রাইভার মানিক চলে গেল।
রাতে মা একটা তোষক এনে বইয়ের আলমারির সামনে বিছিয়ে দিলেন মশার কয়েল দিয়ে বললেন, ‘একটা মশারি আছে হাসান তুমি এটা টানিয়ে নাও অনেক মশা আছে।‘ হাবিব কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাল হাসানকে মশারি টানিয়ে দিয়ে ঘুমের ব্যবস্থা করে দিল। বহু বছর হাসান সাহেব মশারির নীচে ঘুমান নাই। অসুবিধাতো হলনা, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে হাবিব তখন ও ঘুমায়। মা বারান্দায় টেবিলের উপর খাবার দিয়ে রেখেছে, ভাত, মাছ, কচুর শাক ও ডাল। খেয়ে হাসান সাহেব আবার ঘুমিয়ে গেলেন। মানিকের আনা ফল মা কেটে টেবিলে দিয়ে গেল।
হাসান উঠে বাথরুমে যাবে , তাই মায়ের কাছে জানতে চাইল কোথায় যাবে, মা বলল, পিছনের বারান্দায় যাও, মা বলল বাবা বাথরুম পরিস্কার কিন্তু তোমার বাসার মতো সুন্দর না।‘ হাসান সাহেবের কোন কষ্টই হলনা। ঘরে মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি দেখলেন এখানে একটা চকি আছে কিন্তু কোন তোশক নেই, পাটির উপর বালিশ দেয়া আছে। স্বার্থপর হাসান একবার ও ভাবেনি মা কিভাবে কাল রাতে ঘুমিয়েছে।
মা বলল, ‘তোমরা থাক আমি একটু মানিকগঞ্জের বাজারে যাই, মাছ মাংস কিনতে হবে।‘ মানিক বলল আমি যাই আপনার সাথে, গাড়ি আছে। ৭৭ বছরের মা বলল, ‘আমার গাড়ি লাগেনা, চলেন হেঁটে যাই।‘ হাসান অবাক চোখে মাকে দেখছিল, এতো শক্তি এ বোকা, শান্ত, মহিলার কোথা থেকে এলো।
হাসান সব সময় বাবার কাছে শুনত মা বোকা। ম্যাট্রিক পাশের পরেই তার বিয়ে হয়ে যায় গ্রামের মেয়েটির তাদের এলাকার কলেজের অংকের মাস্টারের সাথে। এরপর কলেজে পড়তে পড়তেই হাসানের জন্ম। মায়ের সাথে হাসানের বয়সের পার্থক্য আঠার বছর। বাবা সব সময় মাকে বলত বোকা, অশিক্ষিত মহিলা। হাসানের তার বাবার সাথেই ভাল সম্পর্ক ছিল। ইন্টারমিডিয়েট পাশের পরে বাবা তাকে আমেরিকায় পাঠিয়ে দেয় অর্থনীতির উপর পড়তে। মায়ের সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হত। মা কখনও খুব আবেগ প্রকাশ করতেন না। কিছু বললে বলতেন, ‘বাবার কাছ থেকে জেনে নাও।‘ তারপর একদিন হাসান সাহেব টুপ করে চলে গেলেন ওপারে। বাবা নানা জায়গায় সম্পত্তি কিনে রেখেছিলেন, হাসান সাহেব সব বিক্রি করে ব্যবসা শুরু করেন ও মাকে সাথে রাখেন। এরপর তার ভাগ্য খুলতে থাকে। বিয়ে করেন ঢাকা শহরের পয়সাওয়ালা আর এক ফ্যমিলির মেয়েকে এক বন্ধুর মাধ্যমে। মাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনও মনে করেননি। হাসান সাহেব জানতেন উপন্যাস পড়া, গ্রাম্য বোকা মহিলা কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। বাবা থাকলে অন্য কথা ছিল।
বিয়ের সব অনুষ্ঠান করা হয়েছে স্থানীয় একটি হোটেলে। বিয়ের পরের দিন থেকেই হাসান সাহেব তার শাশুড়ির খুব ভক্ত ছিলেন। সুন্দর মর্ডান ফ্যামিলি। যে কোন অনুষ্ঠানে তিনি বউয়ের সাথে শাশুড়িকে নিয়ে যেতেন, মাকে নেয়ার প্রশ্নই উঠতনা।
তিনদিন মায়ের কাছে খুব যত্নে ছিলেন হাসান সাহেব। নানা জাতীয় খাবার রান্না করে মা খাওয়াতে থাকলেন। যখন তখন ফলের রস , ফল বা স্যুপ দিতেন। মা কখনো হাসান সাহেব বা হাবিবের কাছে আসতেন না। বারান্দার অন্যদিকে আর একটা চকি কিনলেন। হাবিবের জন্য বিছানা করা হল। মা ড্রাইভার মানিক কে নিয়ে দুটো মশারি কিনিয়ে আনালেন।
তিনদিন পরে হাসান সাহেব বললেন, ‘মা আমি কাল অফিসে যাব, ফিরতে না পারলে হোটেলে থাকব।‘ মা বললেন, ‘তোমার কি বউমার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেছে বাবা।‘ হাসান সাহেব কোন উত্তর দিলেন না। মা আবারো বললেন, ‘বাচ্চাদের দায়িত্ব পালন কর। আর একটা কথা বাচ্চাদেরকে মায়ের কাছ থেকে আলাদা করবেনা। তোমার বাবা আমার কাছ থেকে তোমাকে আলাদা করে আমাকে ও তোমাকে দুজনকেই এতিম করে দিয়েছিলেন। তুমি কোনদিন আমাকে ভালবাসতে পারনি। এ কষ্ট তুমি অন্য কোন মাকে দিওনা।‘ হাসান সাহেব বললেন, ‘আমাদের ডিভোর্স হয়নি।‘
দুদিন পরে হাসান সাহেব ফিরে আসলেন মায়ের কাছে, বললেন, ‘আমি বাড়িতে একটা বিল্ডিং করতে চাই।‘ মা বললেন, ‘কেন তুমি থাকবে?’ হাসান সাহেব বললেন, ‘হ্যা এসে মাঝে মাঝে থাকব, তা ছাড়া তুমিও থাকবে।‘ মা বললেন, আমি এঘরেই অভ্যস্ত বাবা, তুমি বানিয়ে রাখ তোমার জন্য, এ বাড়িতো তোমার।‘ হাসান সাহেব মায়ের কষ্ট আর বাড়াতে চান নি তাই বিল্ডিং বানান থেকে বিরত থাকলেন।
হাসান সাহেব এখন বারিধারায় বাসা ভাড়া নিয়েছেন। অফিসের লোকেরাই সব গুছিয়ে দিয়েছে। হাবিব ও মানিক সারাক্ষণই তার সাথে থাকে। তিনি মানিক কে একটা জীপ কিনে দিয়েছেন। হাবিব সব রান্না করে বাজার করে।
প্রায় দুমাস হয়ে গেল হাসান সাহেব তার বাসায় যান নি। ছেলেমেয়েরা অফিসে এসে দেখা করে গেছে। ছোট মেয়ে বলেছিল, ‘বাবা তুমি বাসায় যাবেনা, হাসান সাহেব বলেছেন করোনা কাল শেষ হউক মা, তখন যাবো।‘ আমি অফিসে আসি, সভা সমতিতে যাই আবারোতো করোনা হতে পারে। ছোট মেয়ে বলল, সেদিনের ঘটনার জন্য সরি বাবা।‘
রাত হলেই বিলির জন্য তার মন খারাপ হয়, কিন্তু না বিলির শাস্তি হওয়া দরকার। বিলি অসুখ সম্পর্কে সব জানে, সে জানে কিভাবে আইসোলেসনে থাকতে হয়, তারপরও ওরা সবাই পাগল হয়ে গিয়েছিল। অফিসের অনেকেরই করোনা হয়েছিল, তাদের কারো ফ্যমিলি এমনটা করেনি। আমি ওদের খরচ দিব কিন্তু একসাথে আর থাকব না।
আজ দুদিন হল হাসান সাহেব মায়ের কাছে । মা যখন রান্না করে তখন পাশে একটি চেয়ার টেনে বসে মায়ের সাথে অনেক গল্প করে। মাকে কোন টাকা তিনি দিতে পারেন না তবে, বাজার করে দিলে মা এখন আর তেমন আপত্তি করেনা। ঘরে দুটো ফ্যান লাগাতে পেরেছেন অনেক বুঝিয়ে।
আজ খাওয়ার পরে বারান্দায় বসে মায়ের কাছ থেকে দাদাবাড়ির গল্প শুনছেন হাসান সাহেব, বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন মেয়ে পুরুষ মিলিয়ে কয়েকজন মানুষ বাড়ির দিকে আসছে। মা বলল, ‘কারা আসে?’ বাইরে গিয়ে দাঁড়ালেন, বললেন, ‘আরে বউমা, কেমন আছ? ইস আমার নাতি নাত্নিরা কত বড় হয়ে গেছে, ঘরে এস মা।‘ চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ‘বস।‘ বড় নাতনি বসলনা, নাতি খুব গম্ভীর হয়ে আছে। ছোট মেয়েটা এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরল, বলল বাবা তোমায় আমরা নিতে এসেছি।
বিলি বলল, ‘মা পাড়ায় আমাদের সম্মান থাকছেনা। আপনার ছেলেকে আপনি আলাদা বাসা নিতে বলেছেন কেন।‘ মা হেসে বললেন বউমা এমন দুর্মতি যেন আমার না হয়। আমি চাইনা আমার একটা মাত্র সন্তানের জীবনে কস্ট আসুক। তুমি এসব কি বলছ! তোমরা বস ও নিজেদের সমস্যার সমাধান কর আমি চা বানাই।‘ বড় নাতনি বলল আমরা কিছু খাব না, শুধু বাবাকে নিয়ে চলে যাব। ছোট নাতনি বলল, ‘আমি খাব।‘ মা ছেলেকে বললেন তোমরা চলে যাও হাসান, আমি আশা করব, বউ বাচ্চাকে তুমি দূরে ঠেলে দিবেনা।‘ বিলি বলল, মা আপনি চাইলে আমাদের সাথে থাকতে পারেন।‘ মা হাসলেন, বললেন না মা, সে কোনকালে ষোল বছর বয়স থেকে আমি পরাধীন হয়ে ছিলাম, তারপর কতকাল গেছে, এখন আমি স্বাধীন। তোমরা ভাল থাক।‘ মা কঠিন কন্ঠে বললেন, ‘হাসান রাত হওয়ার আগে তোমার বউ বাচ্চা নিয়ে চলে যাও। এ রাস্তায় রাতে ট্রাক চলে ও অনেক এক্সিডেন্ট হয়।‘
হাসান সাহেব তৈরি হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে রাস্তার পাশে রাখা নিজের জীপে উঠলেন। বাচ্চাদের বললেন আমি তোমাদের বাবা আবার বাবা নই, তোমরা ফ্রী। বিলিকে বললেন বিলি তুমি সম্পুর্ন স্বাধীন, আমার জীবনে আর ঢোকার চেষ্টা করবেনা। আমার সব সম্পত্তির ভাগিদার তোমার বাচ্চারা, কিন্তু তোমাকে আমি ফেলে দিলাম জীবন থেকে। তুমি একটু লজ্জা নিয়ে বেঁচে থাক, মানুষকে ভাল না বাসার লজ্জা। ‘
জীপ টি আগে আগে গেল, পিছনে বউয়ের দামী গাড়ী। গাবতলী পার হয়ে একটা গেল বারিধারার দিকে অন্যটি ধানমন্ডি।