চলমান সংবাদ

ত্রী হত্যার অভিযোগে কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন আবারো নামঞ্জুর

স্স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার অভিযোগে কারাগারে থাকা সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন আবারো নামঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (৫ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে শুনানি শেষে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এদিকে গত ৩০ ডিসেম্বর মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের নিজের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুারো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআিই। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক। আদালত আগামী ৯ জানুয়ারি বাবুলের উপস্থিতিতে এ বিষয়ে শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন। যদিও একই ঘটনায় গত বছরের ১২ মে মিতুর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বাবুল ইতোমধ্যে কারগারে আছেন। আদালতের একটি সূত্র জানিয়েছে, মিতু হত্যা মামলার আসামি এহতেশামুল হক ভোলা ও তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে খুনের সঙ্গে বাবুল আক্তারের জড়িত থাকার তথ্য এসেছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত জামিন নামঞ্জুর করেন। গত বছরের ২১ অক্টোবর আসামি ভোলা ১৬৪ ধারায় আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে নিজের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে খুন করায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। ওই জবানবন্দির পর মিতু খুনের ঘটনায় কারাবন্দি বাবুল আক্তারকে তার দায়ের করা মামলায় আসামি হিসেবে দেখানোর আবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মুক্তিযোদ্ধা ফখরুদ্দিন চৌধুরী জানান, বাবুল আক্তারের জামিন চেয়ে তার আইনজীবী আবেদন করেছিল আদালতে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এর বিরোধিতা করা হয়। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলায় বাবুল আক্তারের জামিনের জন্য দ্বিতীয় দফা আবেদন করা হয়েছিল। এর আগে গত বছরের ১৮ আগস্ট আরও একদফা জামিনের আবেদন করে ব্যর্থ হন বাবুল আক্তার। বাবুল আক্তারের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা মিস কেস করে দ্বিতীয় দফা জামিনের আবেদন করেছিলাম। আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন।’ প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। মিতু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম তার জবানবন্দিতে ‘হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রটি ভোলা সরবরাহ করেছিল’ বলে জানিয়েছিল। এদিকে গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে ২০১৭ সালে নিজেই এই খুনে বাবুলের জড়িত থাকার সন্দেহের আঙুল তোলেন। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার। গতবছরের ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এই মামলায় ওইদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রযেছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। পিবিআই’র দেয়া চার্জশিটের বিষয়ে বাবুল গত বছর আদালতে আপত্তি জানিয়ে অন্য কোন সংস্থার সিনিয়র কর্মকর্তা দিয়ে মিতু হত্যার ঘটনা পুনঃতদন্ত চান। আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য নির্দেশ দেন। পাশপাশি পিবিআই’র দেয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে আদালত। আবার বাবুলের করা নারাজি আবেদনও নামঞ্জুর করেন। অন্যদিকে মামলার অন্যতম আসামি বাবুলের বিশ^স্ত সোর্স মুছা কোথায় কেউ জানে না। তার সন্ধানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বলে তদন্ত সংস্থা একাধিকবার উল্লেখ করলেও সে বিষয়ে কোন অগ্রগতি নেই। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার একাধিবার অভিযোগ করেছে তার স্বামীকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে তার আর খোঁজ নেই। অথচ পুলিশের হিসাবে এখনও সে নিখোঁজ।
# ০৫.০১.২০২২ চট্টগ্রাম #