চলমান সংবাদ

ফাটল না থাকায় বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারে যান চলাচল শুরু

চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল বা স্ট্রাকচারালি কোনো সমস্যা না থাকায় ১২ দিন পর যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার দু’দিন পরেই রোববার (৭ নভেম্বর) সকালে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। তবে সর্বোচ্চ ৮ ফিট উচ্চতার হালকা যান এই র‌্যাম্পে চলাচল করতে পারবে। এর আগে ভারী যান চলাচল রোধে উড়ালসড়কের র‌্যাম্পের তিন মুখে সেইফটি গেট বসিয়েছে চসিক। চসিক’র প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক জানিয়েছেন, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফ্লাইওভারে কোনো ফাটল পাওয়া যায়নি। হালকা ও মাঝারি যান চলাচলের জন্য র‌্যাম্পটি খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশি উচ্চতার ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। বেশি উচ্চতার ও ওভারলোড যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য সেখানে বসানো হয়েছে সেইফটি গেট। ঠিকাদার আবুল কালাম বলেন, ওয়েল্ডিং মেশিন দিয়ে সাড়ে ৮ ফুট উচ্চতার মোট ৬টি সেইফটি লোহার পিলারের উপর ২৬ ফুট প্রস্থের উচ্চতা নিয়ন্ত্রক বার বসানো হয়েছে। ভারী যান চলাচল রোধে এ সেইফটি গেট বসানো হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার রাতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে কোনো ফাটল বা স্ট্রাকচারাল ক্রাক পাওয়া যায়নি। পিলার দুটির ওই অংশটুকুতে বিদ্যমান ফোম সরিয়ে যথাযথভাবে পরিষ্কার করে সে অংশটুকু ‘হাই স্ট্রেংথ থিন কংক্রিট’ ব্যবহার করে ফিনিশিং দিতে বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ফ্লাইওভারের ওই অংশে লাইট ট্রাফিক (হালকা যানবাহন) চলাচল করা যাবে। তাছাড়া সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব না হলেও সময়ে সময়ে ফ্লাইওভারের গুরুত্বপূর্ণ অংশে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর রাতে নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে এম এ মান্নান ফ্লাইওভারের র‌্যাম্পের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাতেই ওই র‌্যাম্পে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ২৬ অক্টোবর দুপুরে ফ্লাইওভারটি পরিদর্শনে গিয়ে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম ফাটল দেখে র‌্যাম্পের নির্মাণ ত্রুটি অথবা নকশাগত ত্রুটি থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন। তবে ফ্লাইওভারটির নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিডিএ’র প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান হালকা যানের জন্য তৈরি র‌্যাম্পে ভারি যান চলায় ফাটল হয়েছে বলে জানান। পরদিন ২৭ অক্টোবর নকশা প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠান ডিজাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (ডিপিএম) কনসালটেন্ট লিমিটেড এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স গ্রুপের বিশেষজ্ঞরা পরিদর্শন শেষে দাবি করেন, ফ্ল্ইাওভারের পিলারে কোনো ফাটল নেই। যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ‘কন্সট্রাকশন জয়েন্ট’। তবে র‌্যাম্পটি হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য নকশা করা হলেও সেটিতে ভারী যানবাহন চলাচল করার বিষয়টি স্বীকার করেন উভয় সংস্থা। প্রসঙ্গত যানজট নিরসনে নগরের শুলকবহর থেকে বহদ্দারহাট এক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত এম এ মান্নান ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারটি কার্যকর না হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আরাকান সড়কমুখী র‌্যাম্প নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। ৩২৬ মিটার দীর্ঘ এবং ৬ দশমিক ৭ মিটার চওড়া র‌্যাম্পটি নির্মাণ শেষে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে হস্তান্তরের পর থেকে এর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় চসিক। প্রথমে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৯১ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে ১০৬ কোটি টাকা করা হয়। ফের সংশোধন করে প্রকল্প ব্যয় ১২০ কোটি টাকা করা হয়। ১৩৩২ মিটার দৈর্ঘ্য ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। চার লেনের বহদ্দারহাট এ ফ্লাইওভারের দুই পিলারের দূরত্ব ১৩০ ফুট।
# ০৭.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #
Write to Pritom Das