চলমান সংবাদ

ধর্মঘটের ৩য় দিনেও পণ্য ডেলিভারি হয়নি বন্দরে কন্টেইনার জটের শংকা

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চলমান পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রাম বন্দরে তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ ছিল ডেলিভারি কার্যক্রম। হাতেগোনা দুয়েকটি ছাড়া রোববারও (৭ নভেম্বর) বন্দরে পণ্য ডেলিভারির কোনো গাড়ি প্রবেশ কিংবা বের হয়নি। এছাড়া ধর্মঘটের প্রথমদিকে বন্দর থেকে বিভিন্ন ডিপোতে আমদানি-রপ্তানি পণ্য আনা-নেওয়া হলেও বর্তমানে শ্রমিকদের বাধায় সেটিও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের কারণে দেশের প্রায় ৯২ ভাগ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দরে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে বন্ধ রয়েছে ডেলিভারি কার্যক্রম। বন্দরে ইয়ার্ডে বর্তমানে কনটেইনার জমা রয়েছে ৩৮ হাজার টিইইউসেরও (২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে একক) বেশি। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান না হলে সংকটের আশঙ্কা করছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, পণ্যপরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। কন্টেইনার জট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্দরের জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় বাড়ছে। এতে করে পরিবহন ব্যয়ও বাড়ছে। সবমিলিয়ে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যার প্রভাব পড়বে জনগণের ওপর। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘হঠাৎ করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াটাও উচিৎ হয়নি, আবার ধর্মঘট আহ্বান করাটাও উচিৎ হয়নি। ব্যবসায়ী এবং জনগণের স্বার্থে দ্রুত এ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিৎ।’ বন্দর সচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে হাতেগোনা কিছু পণ্য ডেলিভারি হয়েছে। এমনিতেই রোববার ডেলিভারি হওয়ার কথা ছিল কয়েক হাজার কনটেইনার। কিন্তু শ্রমিকরা বন্দরে কোনো গাড়ি প্রবেশ কিংবা বের করতে না দেওয়ায় সেগুলোও ডেলিভারি দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া ডিপো থেকে বন্দরে তেমন একটা মালামাল আনা-নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বন্দরে আর মাত্র কয়েক হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখা যাবে। দ্রুত ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে জট তৈরি হতে পারে।’ এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে গণপরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর রোববার সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল করেছে। তবে যাতায়াতের জন্য দ্বিগুন-তিনগুন ভাড়া গুনতে হয়েছে যাত্রীদের। নগরীর অক্সিজেন, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, জিইসি, কাজির দেউড়ি, নিউমার্কেটসহ বেশকিছু এলাকা রোববার সকালে ঘুরে দেখা যায় গণপরিবহন চলাচল করছে। তবে তা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম। এসব গণপরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ, তিনগুণ এমনকি চারগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অন্যদিকে নগরের অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচল করলেও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার সব বাস ছাড়ে নগরের দামপাড়া, বিআরটিসি মোড়, অলংকার ও একে খান মোড় থেকে। শুক্রবার সকাল থেকে বাসের সব কাউন্টার বন্ধ। কাউন্টারের সামনে ও রাস্তায় যাত্রীদের ভিড়। যদিও রাতে দু-একটি গাড়ি চালালেও ভাড়া ছিল দ্বিগুণ। দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যাত্রীরা। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি মো. মুছা বলেন, আমাদের দাবি ডিজেলের দাম কমানো। যদি গাড়ির ভাড়া বাড়ানো হয়, সে ক্ষেত্রে শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে। যার দায় সরকার বা মালিকপক্ষ কেউ নিবে না। তাই আমাদের একটাই দাবি, ডিজেলের দামে ভর্তুকি দেওয়া হোক। চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের লস হচ্ছে বলে আমরা গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছি। কেউ গাড়ি চালাতে চাইলে বাধা দেওয়া যাবে না। কোন ধরনের পিকেটিং করা যাবে না। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলে দেয়া হয়েছে।
# ০৭.১১.২০২১ চট্টগ্রাম #