চলমান সংবাদ

সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকার প্রতিশ্রুতি

চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাম্প্রদায়িক হামলা প্রতিরোধে এবং সম্প্রীতি পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক দলের নেতারা। সারাদেশে সনাতন সম্প্রদায়ের মঠ-মন্দির-পূজামন্ডপে হামলা-ভাংচুর, বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, হত্যাসহ সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে আয়োজিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পুনরুদ্ধার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) নগরীর নন্দনকানন চত্বরে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন), চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি। সমাবেশে চট্টগ্রামের উত্তর-দক্ষিণ, মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি নগর বিএনপির নেতা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. অনুপম সেন বলেন, এদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সাল থেকেই। একাত্তরের পরাজিত শক্তি হিন্দু-মুসলিম অনৈক্য ঘটানোর জন্য সজাগ আছে। রাষ্ট্রধর্মের মাধ্যমে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হয়েছে মন্তব্য করে অনুপম সেন বলেন, রাষ্ট্রের কোন বিশেষ ধর্ম থাকতে পারে না। সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম বাদ দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘যারা সাম্প্রদায়িক অপরাধ করবে, তাদের ট্রাইব্যুনাল করে দ্রুত বিচার করতে হবে। আইনের মাধ্যমে এমন শাস্তি দিতে হবে, যাতে মানুষ মনে রাখে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড চাই। যারা হামলার সঙ্গে জড়িত শুধু তাদের নয়, যারা হামলার চক্রান্ত করেছে তাদেরও চাই। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার এই বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের দেশ নয় রাজনৈতিক দলের নেতারা একটি কথা বলতে অভ্যস্ত। বাংলাদেশে যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি আছে তা পৃথিবীর কোন জায়গায় নাই। ৭৫’র পর রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে সংবিধানকে সাম্প্রদায়িকীকরণ করে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ খ্রিষ্টানে ভাগ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করেছে। প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কোন রাজনীতিবিদদের ওপর আমাদের আস্থা নাই। বর্তমান আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর ৭১’র আওয়ামী লীগ কিনা জানি না। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, আওয়ামীলীগ ক্রমশ ১৯৪৮ সালের আওয়ামী মুসলিম লীগের দিকে চলে যাচ্ছে। সরকারি দলের ভেতরেও সরকার বিরোধী সাম্প্রদায়িক লোক আছে। আমরা সরকারি দলের মধ্যে একটা আত্মশূদ্ধি চাই। নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। সমাবেশে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সারাদেশে যে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে এটা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, এটা আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত, সরকারের ওপর আঘাত। দুষ্কৃতিকারীদের কোনো ধর্মপরিচয় নেই, সন্ত্রাসী হিসেবে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। সংখ্যালঘু শব্দটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী। বাংলাদেশের মালিক সবধর্মের মানুষ। এখানে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলতে কিছু নেই। চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। নগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমার দল বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে একজন মুসলমান, খ্রিস্টানের, বৌদ্ধের যে অধিকার হিন্দুদেরও একই অধিকার। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সমান নিরাপত্তা পাবার অধিকার আপনাদের আছে। আসুন সকলে মিলে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। তিনি বলেন, ‘হামলার ঘটনার সাথে যারা জড়িত, বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তাদের শাস্তি দিতে হবে। অনর্থক লোক ধরে এনে লোক দেখানো বিচার আমরা চাই না। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় আপনাদের মতো আমিও ব্যথিত। কিন্তু প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালে কেউ সুযোগ পাবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য বসে আছে। যেখানে সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, স্বৈরাচার এরশাদ এদেশে একটি ঘৃণ্য কাজ করে গেছেন। তিনি রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছেন। অথচ রাষ্ট্রের কোনো ধর্ম নেই। যারা পবিত্র কোরআন শরীফকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে ঘৃণ্য হামলা করেছে, তাদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার দাবি করছি।’ সকাল থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে সনাতনীরা সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ইসকনের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য সমাবেশ শুরু হয়। বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, জাসদ’র ইন্দু নন্দন দত্ত, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, ইসকন চট্টগ্রামের বিভাগীয় সম্পাদক চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, শংকর মঠ ও মিশনের আচার্য শ্রীমৎ তপনানন্দ গিরি মহারাজ, তুলসীধামের মোহন্ত মহারাজ দেবদ্বীপ মিত্র পুরী মহারাজ, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের উপাধ্যক্ষ ড. জিন বোধি ভিক্ষু, পাথরঘাটা ক্যাথলিক চার্চের ফাদার মিস্টার লেনার্ড। সঞ্চালনা করেন ইসকন সদস্য গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী ও বিপ্লব পার্থ। সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব চত্বরে সমাপ্ত হয়। ইসকন-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারুচন্দ্র দাশ বলেন, ‘একাত্তর পরবর্তী এদেশে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো বিচার হয়নি। প্রশাসনের গাফেলতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ফোন করেও পুলিশ পাওয়া যায়নি। আমাদের মনে হয়, প্রশাসনের মধ্যে তারা ঘাপটি মেরে আছে। পরে এসে বলছে- বিএনপি জামায়াত এটা করেছে। আমরা বলেছি যে-ই করুক, শনাক্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।

# ২৮.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #