চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি বাবুলের ভোলার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিনে থাকা হত্যা মামলার আসামি ভোলাকে নি¤œ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ভোলা আদালতে হাজির না হয়ে সময়ের আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাফুর রহমানের আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এদিকে স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার ঘটনায় নিজের করা মামলায় পিবিআই’র দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার। যিনি নিজেই এখন নিহত মিতুর বাবার করা মামলায় বাদি থেকে আসামি হয়ে কারাগারে আছেন। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে বাবুল আক্তারের পক্ষে আবেদনটি করা হয়। বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, বাবুল আক্তারের করা নারাজি আবেদন আদালত গ্রহণ করেছেন। আগামী ২৭ অক্টোবর বাবুল আক্তারের উপস্থিতিতে আবেদনের ওপর শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন আদালত। নারাজির আবেদনের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাবুল আক্তারের করা মামলায় ৫১ জনের বেশি সাক্ষীর ১৬১ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। কোনো সাক্ষী বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার বিষয়ে কোনো অভিযোগ করেননি, কোনো বক্তব্য দেয়নি। মামলায় দু’জন আসামি জবানবন্দিতে বলেছেন- মুছার নির্দেশে তারা মিতুকে খুন করেছেন। সেই মুছাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াই তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্ববর্তী তদন্ত কর্মকর্তারা সফটওয়্যারের মাধ্যমে মোবাইলের কললিস্ট পর্যালোচনা করেছেন। কিন্তু কোথাও বাদির (বাবুল আক্তার) সঙ্গে মুছার যোগাযোগের প্রমাণ পাননি। পাঁচ বছর পর এসে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মোবাইল কললিস্টের সূত্র ধরে বাবুল আক্তারকে ফাঁসানো হয়েছে বলে বাদির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই তিনি আদালতে নারাজি আবেদন দাখিল করেছেন। তিনি বলেন, বাবুল আক্তার মহলবিশেষের ষড়যন্ত্রের শিকার। ইতিপূর্বে তিনি স্বর্ণের চোরাকারবারি ও কালোবাজারিদের ধরেছেন, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ করেছেন। আমরা মনে করি, একটি বিশেষ মহল এবং এই সিন্ডিকেট এরা সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে। মহানগর পিপি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, হাইকোর্ট ভোলাকে চার সপ্তাহের আগাম জামিন দেন। জামিনের মেয়াদ শেষে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি আজকে আত্মসমর্পণ না করে বরং সময়ের আবেদন করে। তার এই আবেদনে আমরা তীব্র বিরোধিতা করি। ভোলা হাইকোর্টের নির্দেশনা পালন না করায় আদালত সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। প্রসঙ্গত ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও কুপিয়ে খুন করা হয় বাবুলের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রী খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দফতরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন প্রথম দিকে জামাতার পক্ষে কথা বললেও পরে নিজেই সন্দেহের আঙুল তোলেন। মিতুর বাবা অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাইয়ের ‘যোগসাজশ’ রয়েছে বলে তার ধারণা। মামলা তদন্তের দায়িত্ব প্রথমে নগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র কাছে থাকলেও ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তদন্তভার পড়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআই’র ওপর। এরপর ধীরে ধীরে জট খুলতে থাকে এই মামলার। গত ১১ মে বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তদন্তে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় ১২ মে ওই মামলার তার বিরুদ্ধে ৫৭৫ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় পিবিআই। একইদিন (১২ মে) দুপুরে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার বাকি সাত আসামি হলেন- মো. কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, এহতেশামুল হক প্রকাশ হানিফুল হক প্রকাশ ভোলাইয়া, মো. মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, সাইদুল ইসলাম সিকদার সাক্কু এবং শাহজাহান মিয়া। এই মামলায় ওইদিনই বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও শেষপর্যন্ত তিনি তা দেননি। এরপর থেকে বাবুল আক্তার কারাগারে রযেছেন। গত ২৯ মে বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।

# ১৪.১০.২০২১ চট্টগ্রাম #