চলমান সংবাদ

দেশে ডেঙ্গু বাড়ছে, ১২ দিনে শনাক্ত আড়াই হাজারের বেশি

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছে, তার চেয়ে বেশি হয়েছে চলতি আগস্টের ১২ দিনেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথ্য বলছে, এ বছরের জানুয়ারিতে ৩২ জন ডেঙ্গুতে শনাক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল। জুনে এটা ১৭২ জনে ওঠে। জুলাই মাসে সেটিই হয়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৮৬ জন। তাতে সব মিলিয়ে এ বছরের প্রথম সাত মাসে ডেঙ্গুতে মোট শনাক্ত দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৮ জন। জুলাই থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হতে শুরু করে। আগস্টে এসে চিত্রটি আরও উদ্বেগজনক হয়ে পড়েছে। এ মাসের প্রথম ১২ দিনে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৭৭৬ জন। একই সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২৪২ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, গত এক দিনে ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালগুলোতেই ভর্তি হয়েছে ১২১ জন। অন্য বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি ২১ জন। চলতি বছর এ নিয়ে ডেঙ্গু শনাক্ত হলো ৫ হাজার ৪৩৪ জনের শরীরে। এসব রোগীর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ৪ হাজার ৫১৬ জন। বর্তমানে ভর্তি রয়েছে ৮৯৪ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার ৪১টি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮২৪ ডেঙ্গু রোগী। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, ডেঙ্গু উপসর্গ নিয়ে চলতি বছর ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর এই বিস্তার নিয়ে উদ্বেগে সরকার। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র এডিস মশা নির্মূলে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন। নগরীর বিভিন্ন ভবনে অভিযান চালিয়ে এডিস বিস্তারের পরিবেশ থাকায় জরিমানা করা হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে প্রচারও চলছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু রোগে ১৭৯ জনের মৃত্যু ও লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যায়। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড মহামারির মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য জটিলতা বেশি। আগামীতে এ ধরনের রোগী বাড়লে পরিস্থিতি মারাত্মক হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আমল বলেন, ডেঙ্গু নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত মার্চ মাসে সিটি করপোরেশনগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে তার কোনো কাজ হয়নি। ডেঙ্গু যেন না হয় তার ব্যবস্থা নিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ডেঙ্গু হলে নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে ডেঙ্গু যেন না হয়, সে জন্য সিটি করপোরেশনকে কাজ করতে হবে।’ এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞা বলেন, ‘করোনা এবং ডেঙ্গু একসঙ্গে ভয়াবহ হতে পারে। দুইটা যখন একসঙ্গে থাকবে, তখন কিছু জিনিস বেড়ে যেতে পারে, যদি কেয়ারফুল না হওয়া যায়। মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায় দুইটা একসঙ্গে হলে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে রোগী দেরিতে হাসপাতালে আসে। রোগীদেরও তাদের নিজেদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সন্দেহ করতে হবে। আমরাও ম্যানেজ করার চেষ্টা করব।’ ডা. টিটো মিঞা বলেন, ‘কোনো কোনো ডেঙ্গুতে কোনো বিপদ থাকে না। কারণ সব ক্ষেত্রে ডেঙ্গু রোগীর ব্লিডিং হয় না। তবে যদি ব্লিডিং থাকে আর যদি করোনা থাকে, তবে ব্লাড স্ন্যাপ ব্যবহারের দরকার নেই। প্লাটিলেট কমে গেলে ভীত হওয়া যাবে না, যতক্ষণ না ব্লিডিং হয়।’ তিনি জানান, কেউ একসঙ্গে করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে করোনা আক্রান্ত হিসেবেই মৃত্যু নথিভুক্ত হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। শহরের মানুষ ঈদের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। ঢাকা শহরের সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা এখন লকডাউনের কারণে বন্ধ। এগুলো এডিস মশার প্রজননের বড় ক্ষেত্র।’
# ১২.০৮.২০২১ #