চলমান সংবাদ

মাটির ‘মটকা’র ওপর তৈরি ৩শ’ বছরের পুরানো ভবন ‘প্রত্ন সম্পদ’ হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ

চট্টগ্রামে প্রায় তিনশ বছরের পুরনো স্থাপত্য রীতির বাড়িটি ‘প্রত্ন সম্পদ’ হিসেবে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। নির্দেশ পাওয়ার পর বাড়িটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাড়ির মালিকদের নিয়ম অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন করেই বাড়িটি ‘প্রত্ন সম্পদ’ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নগরীর পাথরঘাটায় ১১৮ নজু মিয়া লেইনে হাজী শরিয়ত উল্ল্যাহ সওদাগর নির্মিত প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো দ্বিতলের সমান একটি ভবন ভাঙার পর দেখা যায়, ভবনের মেঝের নিচে উপুড় করে রাখা সারি সারি মাটির ‘মটকা’। অর্থাৎ মাটির তৈরি ‘মটকা’র ওপর ৩০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে ছিল হাজার বর্গফুটের এই ভবনটি। মটকার ওপর ২২ ইঞ্চি ইট-সুরকির আস্তর, এর ওপরই ছিল ভবনটি। ভবনটির দেয়ালও ২২ ইঞ্চি পুরু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমে ঘর ঠান্ডা রাখাসহ বহুমুখী উপযোগীতার কারণে এটি এ অঞ্চলের একটি অনন্য স্থাপত্য রীতি। মটকা হচ্ছে মাটি থেকে তৈরি করা একপ্রকার বিশালাকৃতির পাত্র, যা দেখতে অনেকটা কলসের মতো মনে হয়। গত শনিবার (১০ জুলাই) চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার কামরুল হাসান, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের পক্ষে চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক আহমেদ আবদুল্লাহ ওই বাড়ি পরিদর্শন করেন। চট্টগ্রামের ডিসি মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, প্রতœতত্ত্ব আইনে বলা আছে, ৭৫ বছরের পুরনো কোনো স্থাপনা যদি থেকে থাকে, যেখানে প্রত্নতাত্তিক মূল্য রয়েছে, তাহলে সরকার তা অধিগ্রহণ করে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নির্দেশনা দিয়েছেন বাড়িটি সংরক্ষণ করার জন্য। গবেষণার কাজে ব্যবহারের জন্য। বাড়িটি সংরক্ষণ করতে ইতিমধ্যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞরাও দেখে গেছেন। বাড়িটি এখন যে পর্যায়ে রয়েছে, ওই অবস্থায় আমরা সংরক্ষণ করব। তিনি বলেন, দু-তিনশ বছর আগেও চমৎকার নির্মাণ শৈলী দিয়ে গরমের সময় ঘর ঠান্ডা রাখার কৌশল আমাদের পূর্ব পুরুষরা প্রয়োগ করেছেন। এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে- আর্কিওলজিস্ট, প্রকৌশল বিদ্যা ও স্থাপত্যের শিক্ষার্থীরা যাতে দেখে জ্ঞান আহরণ করতে পারেন, গবেষণা করতে পারেন, সেজন্য সংরক্ষণ করা হবে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির মালিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বসান করা হবে। ভবনটির বয়স নির্ধারণের বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। চট্টগ্রাম জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, বাড়িটির নির্মাণ শৈলী, কাঠামো, ব্যবহৃত ইটের কাঠামো এবং মাটির অবস্থা দেখে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, এটি আড়াইশ থেকে তিনশ বছরের পুরনো একটি স্থাপনা। একই ধরনের কাঠামো পাওয়া গিয়েছিল মোগল আমলের সোনাকান্দা দুর্গে (মুন্সিগঞ্জে), সেটা হয়েছিল আওরঙ্গজেবের সময়কালে মির জুমলা যখন সুবেদার ছিলেন তখন। এটা হয়েছে আরও কিছু পরে। ইটের সাইজসহ সব একই রকম। এটা ব্রিটিশ পিরিয়ডের প্রথম দিককার স্থাপনা বলে ধারণা করছি। ভবনটির বর্তমান মালিকদের দাবি, তাদের দাদার বাবা হাজী শরিয়ত উল্ল্যাহ সওদাগর বাড়িটি নির্মাণ করেন। তিনি জাহাজে করে রেঙ্গুনের (মিয়ানমার) সাথে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়ার ব্যবসা করতেন। রেঙ্গুন থেকে নির্মাণ শ্রমিক ও পোড়া মাটির এসব কলস (মটকা) এনে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ভবনটির বয়স তিনশ বছর বলে তাদের দাবি। ছয় গন্ডা জমির উপর নির্মিত বাড়িটির বর্তমান মালিক আট ভাই ও এক বোন। এর মধ্যে একাংশের তিনটি থাকার কক্ষ এবং একটি বসার ঘর ভাঙা হচ্ছিল। দুটি থাকার ঘরের মেঝের নিচে কলস পাওয়া গেছে। ভবনের অন্য অংশের নিচেও কলস দেখা যাচ্ছে।

# ১১.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #