চলমান সংবাদ

লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে ফাঁকা সড়ক, তৎপর প্রশাসন

 কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন চট্টগ্রাম নগরের প্রধান সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা ছিল। ছুটির দিন শুক্রবার হওয়ায় খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া সড়কে নামেনি কোনও যানবাহন। লোকজনও তেমন বের হননি প্রথম দিনের মত। রাস্তায় যানবাহনের চাপ যেমন কম ছিল, তেমনি লোকজনের আনাগোনাও ছিল কম। নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট, জিইসি, ওয়াসা, টাইগার পাস এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় অফিসে যাওয়ার তাড়া ছিল না, ছিল না চিরায়ত কর্মব্যস্ততা। সকাল থেকে অনেকটা ফাঁকা ছিল নগরের পথঘাট। কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া তেমন কোন যানবাহন ছিল না। মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট ছিল। দ্বিতীয় দিনেও চট্টগ্রামে রাস্তাঘাটে মানুষ বের হলেই আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। শুক্রবার (২ জুলাই) ভোর থেকে নগরের বিভিন্ন প্রবেশপথে তল্লাশি শুরু করে সেনাবাহিনী। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর ৬টি টিম কাজ করছে। এছাড়াও বিজিবির ৬টি টিম নগরজুড়ে টহল দিচ্ছে। মাঠে আছে পুলিশও। সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের ১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্বে আছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনাররা (ভূমি)। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে নগরীর প্রবেশ ও বাহিরসহ মোট ২০টি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে সড়কে চলাচলকারী প্রাইভেট যানবাহন ও রিক্সা ভ্যানে তল্লাশি অভিযান চালায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি। শুক্রবার নগরীর টাইগার পাস চেকপোস্টে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের নেতৃত্বে তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করেন সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ। এসময় সড়কে চলাচলকারী কিছু কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেল ও রিক্সা যাত্রীকে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। অভিযানে দু’জন আরোহী নিয়ে চলাচলকারী বেশকিছু মোটরসাইকেল থামিয়ে একজন করে নামিয়ে দিয়ে জরুরি প্রয়োজনে ‘ওয়ান বাইকার ওয়ান মোটর সাইকেল’ নিশ্চিত করা হয়। একইসাথে করোনা মোকাবেলায় মাস্ক বিতরণসহ চালক-যাত্রী প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেয়া হয়। সিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ বলেন, কঠোর লকডাউনে সব ধরণের যান্ত্রিক গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে যে সকল গার্মেন্টস, কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে ঐসব প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে গাড়ির ব্যবস্থা করে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আনয়ন করবে। করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরিধান ও শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আমরা সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে চাই। প্রথম দিন বৃহস্পতিবার যেখান সিএমপি ৮৮টি মামলা, ৫৪ গাড়ি জব্দ ও ২১ জনকে আটক করেছিল, সেখানে দ্বিতীয় দিন শুক্রবার সরকারি আদেশ অমান্য করে বের হওয়ায় ১০টি মামলা আর ৪টি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। সিএমপি’র সহকারী উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) আরাফাতুল ইসলাম জানান, শুক্রবার সড়কে মানুষের আনগোনা খুবই কম ছিল। এদিন বিকেল ৫টা পর্যন্ত ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ৫টি ও ডবলমুরিং থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ৫টিসহ মোট ১০টি মামলা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে এদিন জব্দ করা হয়েছে ৪টি গাড়ি। এদিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে দোকানপাট খোলা রাখা ও বিনা প্রয়োজনে ঘোরাঘুরির দায়ে ২৯ জনকে জরিমানা করে উপজেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ২৯ মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৪০ টাকা। শুক্রবার (২ জুলাই) সকালে বটতলী মোটর স্টেশন, আধুনগর খাঁন হাট, বড়হাতিয়া মনুফকিরহাট, সেনেরহাট এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী। অভিযানে সহায়তা করেন সেনা সদস্যরা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, লকডাউনে লোহাগাড়া এলাকার বেশিরভাগ এলাকায় দোকানপাট, মার্কেট ও সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কোথাও কোথাও আইন অমান্য করে দোকান খোলা রাখতে দেখা গেছে। খবর পেলেই প্রশাসন অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দিচ্ছে। আদায় করছে জরিমানাও। এছাড়া বিনা প্রয়োজনে কেউ বের হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় সরকার ঘোষিত লকডাউন (বিধিনিষেধ) অমান্য করে খোলা রাখায় হার্ডওয়্যার ও কসমেটিকসের দুটি দোকান সিলগালা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। শুক্রবার (২ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহার নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উপজেলা প্রশাসন জানায়, লকডাউন বাহমশবায়নে সকাল থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ সময় নিয়ম অমান্য করে খোলা রাখায় দুটি দোকান সিলগালা করা হয়েছে। একই সঙ্গে সকাল ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া, মাস্ক না পড়া ও মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহনসহ নানা অনিয়মের দায়ে মোট ১২ মামলায় ১০ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

# ০২.০৭.২০২১ চট্টগ্রাম #