চলমান সংবাদ

অনুদান নির্ভর দুই হাজার ৪৬৩ কোটি টাকার প্রথম বাজেট ঘোষণা করলেন মেয়র রেজাউল

২০২১-২২ আর্থিক বছরের বাজেট ঘোষণা করছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম

অনুদান নির্ভর দুই হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার প্রস্তাবিত প্রথম বাজেট ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-চসিক’ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত এই বাজেটে এবার উন্নয়ন অনুদান খাতে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঘোষিত বাজেটের ব্যয়ের খাতে বকেয়া দেনা পরিশোধে সর্বোচ্চ ৮৩৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। রোববার (২৭ জুন) দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে চসিক’র বর্তমান (ষষ্ঠ) পর্ষদের মেয়র হিসেবে নিজের প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তিনি। এছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরের ১ হাজার ১ কোটি ৩৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকার সংশোধিত বাজেটও উপস্থাপন করেন মেয়র রেজাউল। বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০২০ সালের ৪ আগস্ট দেয়া দুই হাজার ৪৩৬ কোটি ৩০ লাখ টাকার বাজেট থেকে রেজাউলের ঘোষিত বাজেট বেড়েছে ২৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বাজেটের আকার বাড়লেও বর্তমান মেয়রও পূর্বের ন্যায় অনুদান নির্ভর বাজেট ঘোষণা দিয়েছেন। বাজেট অধিবেশনে সিটি মেয়র রেজাউল করিম বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানেই সমগ্র দেশের উন্নয়ন। বাণিজ্যিক রাজধানী নামে খ্যাত চট্টগ্রামের উন্নয়নে যে-কয়টি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে তার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসীর আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোর প্রত্যাশা ও নগরীকে পরিবেশগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ও বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট নগরবাসীর সামনে উপস্থাপন করলাম। সরকারের কাছ থেকে সবকিছু নিয়ে নগর উন্নয়ন সম্ভব নয়। নগরবাসীর সহযোগিতা, চিন্তা-চেতনা, মেধা ও সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়নে সবসময় সচেষ্ট থাকব। চসিক’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে ও প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের সঞ্চলানায় অধিবেশনে বাজেট বিবরণী উপস্থাপন করেন অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মো. ইসমাইল। উপস্থিত ছিলেন প্যানেল মেয়র আবদুস সবুর লিটন, মো. গিয়াস উদ্দিন ও আফরোজা কালাম, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, অতিরিক্ত প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও ওয়ার্ড কাউন্সিলররা। বাজেটে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্প, মহানগরীর যানজট নিরসনে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প, ঠান্ডাছড়ি পার্ক উন্নয়ন, মহানগরীর আউটার রিং রোডের পাশে সি সাইটে ওশান পার্ক ও স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন স্মার্ট সিটি প্রকল্প, এয়ারপোর্ট রোড সম্প্রসারণ ও অবকাঠামো উন্নয়ন, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, মাস্টার প্ল্যানের সুপারিশমতে প্রস্তাবিত নতুন সড়ক নির্মাণ, মুরাদপুর, ঝাউতলা, অক্সিজেন ও আকবর শাহ রেলক্রসিং-এর ওপর ওভারপাস, ঢাকামুখী, কক্সবাজারমুখী, ও হাটহাজারীমুখী বাস টার্মিনাল নির্মাণ, ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ ও ওভারপাস/আন্ডারপাস নির্মাণ, স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণ, নগরীর কাঁচাবাজারগুলো আধুনিকায়ন, চান্দগাঁও এলাকায় আধুনিক স্লটার হাউস-নির্মাণ করার প্রস্তাবনা করা হয় বাজেটে। ২০২১-২২ অর্থবছরে পৌরকর ও ট্রেড লাইসেন্স শতভাগ অনলাইনে আদায়/প্রদান করা সম্ভব হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, যান্ত্রিক শাখার সব কার্যক্রম সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরিচালনার লক্ষ্যে ট্রান্সপোর্ট পুল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম পণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদ্যমান গাড়িগুলোর সব তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে। ইতোপূর্বে প্রণীত স্টোর ম্যানেজমেন্ট ও ফুয়েল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে এ সফটওয়্যারের ইন্টিগ্রেশন করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের মাধ্যমে করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চসিক’র হোল্ডিং মালিক ও ব্যবসায়ীদের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হোল্ডিং ট্যাক্স, ট্রেড লাইসেন্স ফি, ভূমি হস্তান্তর কর, রিকশা লাইসেন্স ফি, বিজ্ঞাপন কর, মার্কেটের দোকানভাড়া ইত্যাদি চলতি আর্থিক সালের মধ্যে অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আদায়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মেয়র বলেন, ১৯৮৮ সালে সরকার অনুমোদিত চসিক’র ৩ হাজার ১৮০টি পদের জনবল কাঠামো রয়েছে। ১৯৮৮ সালের অনুমোদিত একটি জনবল কাঠামো থাকলেও তার বিপরীতে কোনো নিয়োগবিধি না থাকায় নিয়োগ ও পদোন্নতিতে স্থবিরতা দেখা দেয়। প্রায় ৩১ বছর পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় ২০১৯ সালের ১৬ এপ্রিল লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে চসিক কর্মচারী চাকরি বিধিমালা ২০১৯ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা ২০১৯ সালের ১১ জুলাই এসআরও (নম্বর-২৪৩-আইন/২০১৯) মূলে গেজেটভুক্ত। সম্প্রতি অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৬টি পদ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। চসিকের কর্মপরিধি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় ৯ হাজার ৬০৪ জনের একটি পূর্ণাঙ্গ জনবল কাঠামো অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

# ২৭.০৬.২০২১ চট্টগ্রাম #