চলমান সংবাদ

শ্রমিকদের কল্যাণে বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের দাবিতে স্কপের বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দের প্রশ্ন

-উৎপাদনের কারিগর শ্রমিকদের সুরক্ষায় রাষ্ট্রের কি কোন ভুমিকা থাকবে না?

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর মানববন্ধন

২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে শ্রমিকদের জন্য রেশন, আবাসন, চিকিৎসা, পেনশন নিশ্চিত করতে সুনির্দ্দিষ্ট বরাদ্দের দাবিতে আজ ১৬ জুন ২০২১, বুধবার, সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ – স্কপের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর যুগ্ম সমন্বয়ক সহিদুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে আহসান হাবিব বুলবুল এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন স্কপ নেতা মেজবাহ ঊদ্দিন অহমেদ, সাইফুজ্জামান বাদশা, রাজেকুজ্জামান রতন, কামরুল আহসান, চৌধুরী আশিকুল আলম, শামীম আরা, আজিজুন নাহার, ফিরোজ হোসাইন ও রফিকুল ইসলাম রফিক।

শ্রমিক সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটে শ্রমজীবী মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটেনি। করোনা দুর্যোগের মধ্যেও দেশের কৃষি, শিল্প, সেবাখাত, রেমিটেন্সে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার প্রধান অবদান দেশের শ্রমজীবী মানুষের। ৬ কোটি ৮২ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের সুরক্ষায় কোন পদক্ষেপের প্রতিফলন না থাকলেও তাদের পকেট থেকে অর্থ হাতিয়ে রাষ্ট্রের পকেট ভরার পরিকল্পনা প্রস্তাবিত বাজেটে আছে। বাজেটের সবচেয়ে বড় আয় আসবে পরোক্ষ কর থেকে আর এই ভ্যাট-ট্যাক্সের একটা বড় অংশ বহন করবে শ্রমজীবী মানুষ। বাজেট প্রণয়নের পূর্বে সমাজের অনেক অংশের সাথে মতবিনিময় করলেও শ্রমজীবী বিশাল জনগোষ্ঠিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। শ্রম আইন ও শ্রম অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১৫ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে মাত্র ৩৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে অথচ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পরিচলন ব্যায় বেড়েছে ৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উন্নয়ন ব্যায় বৃদ্ধির পরিবর্তে ৩৪ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দের ধরণ থেখে এই প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে অর্থমন্ত্রী কি শিল্প মালিকদের মতই শ্রম আইন বাস্তবায়নের পরিবর্তে শ্রম অধিকার সংকুচিত করতে চাচ্ছেন?

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমুল্যের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য শ্রমিক কর্মচারীসহ নি¤œআয়ের মানুষের জন্য রেশন ব্যবস্থা, বিনামূল্যে চিকিৎসা ও সুলভ মূল্যে আবাসন ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে দূর্ঘটনায় আহত হলে চিকিৎসা, ক্ষতিপুরণ ও পূনর্বাসনসহ সামাজিক বেষ্টনির ব্যবস্থা, বাজেটে পাট-চিনি শিল্প পূনরুদ্ধার ও রক্ষা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তা সামজিক সুরক্ষায় শিল্পঘন এলাকায় শ্রমজীবী হাসপাতাল, শিশু যতœ কেন্দ্র স্থাপন, শ্রমজীবীদের জন্য সার্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা, করোনায় কর্মহীন ও ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সহায়তা, ফিরে আসা প্রবাসী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ করাসহ ৯ দফা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকারের কাছে দাখিল করা হয়েছে। বাজেট পাশের পূর্বে স্কপের দাখিলকৃত প্রস্তাবসমূহ বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে এই আশাবাদ ব্যাক্ত করে নেতৃঋন্দ বলেন, ইতিমধ্যে এটা প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশের শিল্প মালিক, ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ ঋণ খেলাপী, অর্থ পাচারকারী। ন্যায্য মজুরি, শ্রম আইনের শ্রমিক স্বার্থ রক্ষাকারী ধারাসমূহ উপেক্ষা করে, রাষ্ট্র কে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে যারা শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা করা যায়না উল্লেখ করে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন বাজেটে শ্রমিকদের জন্য সুস্পষ্ট বরাদ্দ ঘোষণা করতে হবে। যারা সুষ্ঠ শিল্প সম্পর্কের মধ্যে দিয়ে দেশে শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী বিকাশ, কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধির পরিবর্তে শ্রমিকদের বঞ্চিত করে, প্রবঞ্চনার মাধ্যমে অল্পসময়ে অগাধ সম্পদের মালিক হয়েছে তাদের কর ছাড় দিয়ে, প্রণোদনা দিয়ে শ্রমজীবী মানুষের কাছে চুঁইয়ে পড়া সুবিধা পৌঁছানো যাবেনা। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নয়, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত আয়ের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারলে, বিদ্যমান বৈষম্য কমাতে পারলেই কেবলমাত্র দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন দীর্ঘস্থায়ী হবে। এই সত্য উপলব্ধি ধারণ করার জন্য স্কপ নেতৃবৃন্দ অর্থমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান।