চলমান সংবাদ

সম্পাদকীয়

-পরীমনির কান্না ও সমাজের কুৎসিত চেহারা

গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অন লাইন নিউজ পোর্টাল এবং এবং টিভি চ্যানেলগুলোতে পরীমনিকে নিয়ে একটি সংবাদ আবর্তিত হচ্ছে। একি সাথে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন ধরনের মন্তব্যও চোখে পড়ছে। পরীমনি আমাদের দেশের একজন চিত্রাভিনেত্রী। তিনি বেশ কিছু ঢালিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর ছবির আলোচনা এবং সমালোচনা দেখা যায় । এবার তাঁকে নিয়ে যে আলোচনা তা চলচ্চিত্রে অভিনয় নিয়ে নয়, বরং ভিন্ন একটা প্রসঙ্গে। বিভিন্ন চ্যানেল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও পরীমনির সাংবাদিক সম্মেলন থেকে যতটুকু জানা গেছে তা হলো তিনি ঢাকার উত্তরায় এক প্রাইভেট ক্লাবে যান রাতে,সেখানে একজন ব্যবসায়ী এবং রাজনৈতিক দলের সদস্য তাঁকে নেশা দ্রব্য খাইয়ে জোর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং বাঁধা পেয়ে শারীরিক ভাবে লাঞ্চিত করে। অবশ্য তিনি ক্লাবে একা যাননি, তাঁর সাথে একজন পারিবারিক বন্ধু ও তাঁর ম্যাকআপ যিনি করেন তিনি ও সাথে ছিলেন। ঘটনার এখানেই শেষ নয়। পরীমনি ঐদিন গভীর রাতেই থানায় যান অভিযোগ দায়ের করতে কিন্তু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা না থাকায় থানা তাঁর অভিযোগ গ্রহণ করেনি। তিনি এরপর চারদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে তাঁর কর্মক্ষেত্রে যে সমিতি আছে সেখানেও বিষয়টি জানিয়েছেন। কিন্তু সবাই দেখছি, কি করা যায়, জাতীয় সান্ত্বনার বাণী দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছুই করেনি। পরবর্তীতে, পরীমনি অনন্যোপায় হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার প্রার্থনা করে একটি স্ট্যাটাস দেন । এরপর সবার টনক নড়ে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রফতার করে। পরীমনির এই ঘটনা অনেকগুলো প্রশ্নের উদ্রেক করে। কেন চারদিন ধরে তাঁর অভিযোগ গ্রহন করা হলো না? পরীমনি একজন নারী, সেই কারণে? অভিযুক্ত ব্যক্তি একজন পুরুষ এবং পুরুষ মাত্রই ক্ষ্মতার প্রতীক সেই কারণে? নাকি অভিযুক্ত ব্যাক্তি ক্ষমতার সাথে যুক্ত তাই? তা ছাড়া এই ঘটনা আরো একটি বিষয় আমাদের সামনে এনেছে তা হচ্ছে এই সমাজে নারীরা কত অনিরাপদ? পরীমনির মত একজন চিত্রাভিনেত্রীর যদি এই অবস্থা হয় তা হলে আমাদের সাধারণ সেই বোনটি যাকে কেউ চেনে না তার কি অবস্থা হবে? আরো একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করলাম এক শ্রেনীর মানুষ পরীমনি সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করা শুরু করেছেন । যেন সব দোষ তার। অথচ একজন পুরুষ রাতের বেলায় যেখানে খুশি যেতে পারবেন। যাকে পছন্দ হয় তাকে ধর্ষণ করবেন- এগুলো দোষের কিছুই না। পুরুষের জন্য সবই ন্যায্য, সব কিছুই গ্রহণযোগ্য।

পরীমনি একাত্তর টেলিভিশনের সাথে এক সাক্ষাতকারে কাঁদতে কাঁদতে বলেছেন- সবাই বলছে তার দোষ – কেননা সে একজন অভিনেত্রী। পরীমনির এই কান্না আবার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের সমাজপতিদের কুৎসিত, অন্ধকার দিক। এই সমাজ একজন নারীর মর্যাদা দিতে জানে না, এই সমাজ একজন নারীকে নিরাপত্তা তো দিতেই পারেনা বরং তাকে অসম্মান করা হলে তার বিচার করতেও দ্বিধা করে। এরপরও আমরা বিশ্বাস করব আমাদের সমাজে বিবেকবান মানুষ আছেন, রাষ্ট্র-যন্ত্র আছে, আছে তারুন্যের শক্তি। নিশ্চয়ই পরীমনি তাঁর ন্যায্য বিচার পাবেন এবং ভবিষ্যতে যাতে পরীমনির মত কাউকে বিচারের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয়, কাঁদতে না হয়, তার জন্য সবাই সোচ্চার হবেন।