রাখাইনে মানবিক করিডোর: বাংলাদেশে বাড়তে পারে নিরাপত্তা ঝুঁকি
রাখাইনে যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশ ‘মানবিক করিডোর’ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি জানিয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই করিডোর বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
রবিবার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, “নীতিগতভাবে আমরা সম্মত হয়েছি। এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে এতে আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, যেগুলো না মানলে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ তিনটি প্রধান শর্তে এই করিডোর বাস্তবায়নে রাজি হয়েছে—
১. সহায়তা দেয়ার এলাকায় সহায়ক পরিবেশ থাকতে হবে, যুদ্ধাবস্থা নয়।
২. সহায়তা হবে বৈষম্যহীন, রোহিঙ্গা হোক বা আরাকানিজ – সবাই সহায়তা পাবে।
৩. সহায়তা হতে হবে শর্তহীন।
তবে করিডোরের নিরাপত্তা ইস্যুতে এখনো রয়েছে বড় ধরণের অনিশ্চয়তা। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক বলেন, “আরাকান আর্মি ও সামরিক জান্তার মধ্যে সমঝোতা না হলে করিডোরটি বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি হয়ে উঠবে। কারণ, তখন মানবিক সহায়তা আসলেই জনগণের কাছে পৌঁছাবে, নাকি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে পড়বে—তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।”
রোহিঙ্গা ও অভিবাসন বিশ্লেষক আসিফ মুনির বলেন, “করিডোর ব্যবস্থাপনায় কারা থাকবে—জাতিসংঘ, মিয়ানমার জান্তা, না আরাকান আর্মি? এই প্রশ্নগুলো এখনো অজানা। আর এতে ভুল সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশকেই মূল্য দিতে হবে।”
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, রাখাইনে ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষে আরাকান আর্মির দখলে আছে প্রায় ৮০% এলাকা এবং সেখানে মিয়ানমার সরকার খাদ্য ও ওষুধ ঢুকতে দিচ্ছে না। জাতিসংঘ আশঙ্কা করছে, যদি সহায়তা পৌঁছানো না যায়, তবে রাখাইনের জনগণ সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করতে পারে।
ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে নতুন করে এক লাখ ১৩ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে, ফলে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৩ লাখ ১৩ হাজারে। এখনই পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হয়ে উঠেছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, “যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় মানবিক করিডোর চালু করতে হলে স্বচ্ছতা, মালিকানা, অংশীদারিত্ব এবং মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। এসবের কোনোটিই এখনো পরিষ্কার নয়।”
পরিস্থিতির উন্নয়ন না হলে এবং সব পক্ষের সম্মতি না মিললে, এই করিডোর বাংলাদেশের জন্য মানবিক দায় তো বটেই, বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিও ডেকে আনতে পারে—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।