চলমান সংবাদ

ফরাসি আশ্রয় আদালতে সবচেয়ে বেশি আপিল আবেদন বাংলাদেশিদের

(প্রতীকী ছবি) ২০২৩ সালে আট হাজার ১২৫ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী সিএনডিএ তে আপিল আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত পেয়েছেন ছয় হাজার ১৬৮ জন ব্যক্তি। ছবি : পিকচার অ্যালায়েন্স

গত বছরের পূর্ণাঙ্গ আশ্রয় পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালত (সিএনডিএ)। ২০২৩ সালে প্রাথমিকভাবে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয় আবেদনের বিপরীতে মোট আট হাজার ১২১ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় আদালতে আপিল দায়ের করেছিলেন বলে জানিয়েছে আদালতের জনসংযোগ বিভাগ।

ফ্রান্সে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা প্রথমে শরণার্থী ও রাষ্ট্রহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য নির্ধারিত ফরাসি দপ্তরে (অফপ্রা) আশ্রয় আবেদন জমা করেন।

তবে অফপ্রা থেকে প্রত্যাখ্যাত হওয়া ব্যক্তিরা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় আশ্রয় আদালতে (সিএনডিএ) আপিল করার সুযোগ পান।

আদালত প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে আশ্রয় আদালতে মোট ৬৪ হাজার ৬৮৫টি আপিল আবেদন জমা হয়েছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বেশি। তবে একই সময়ে আদালত গত বছরের আবেদনসহ মোট ৬৬ হাজার ৩৫৮টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে।

প্রতিটি আপিল শেষ করতে সিএনডিএ গত বছর সময় নিয়েছে গড়ে ছয় মাস।

এত বিপুল সংখ্যক আবেদনের মধ্যে সর্বোচ্চ আট হাজার ১২৫টি আপিল আবেদন জমা করেছেন বাংলাদেশিরা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাত হাজার চারটি আবেদন করেছেন তুরস্কের আশ্রয়প্রার্থীরা। এছাড়া পাঁচ হাজার ৪৯৬টি আবেদন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে আছে আফগান আশ্রয়প্রার্থীরা।

সুরক্ষা পেয়েছেন ২০ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থী

২০২৩ সালে মোট ১৩ হাজার ৬০৬ জন ব্যক্তি জাতীয় আশ্রয় আদালত থেকে শরণার্থী মর্যাদা অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন, যা সিদ্ধান্ত দেওয়া মোট আবেদনের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ।

তাদের মধ্যে নয় হাজার ৪৬২ জন ব্যক্তি জেনেভা কনভেনশনের আওতায় রিফিউজি স্ট্যাটাস বা শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন। বাকি চার হাজার ১৪৪ জন আশ্রয়প্রার্থী ইউরোপীয় কনভেনশন অনুসারে সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন বা অস্থায়ী সুরক্ষা পেয়েছেন।

আদালতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত বা সুরক্ষা পাওয়ার দিক দিয়ে শীর্ষে আছে সিরিয়া, ইরান এবং ইউক্রেন থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীরা।

বাংলাদেশিদের সুরক্ষা পাওয়ার হার ১১%

গত বছর আট হাজার ১২৫ জন বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থী সিএনডিএ তে আপিল আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত পেয়েছেন ছয় হাজার ১৬৮ জন ব্যক্তি।

আর তাদের মধ্যে সুরক্ষা পেয়েছেন ৬৯০ জন আশ্রয়প্রার্থী। অর্থাৎ মাত্র ১১.২ শতাংশ ব্যক্তি রিফিউজি স্ট্যাটাস অথবা সাবসিডিয়ারি প্রটেকশন পেয়েছেন। ২০২২ সালেও এই হার একই ছিল।

বাংলাদেশিদের মধ্যে নারী আশ্রয়প্রার্থীদের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পাওয়ার হার (২০.৫%) এবং পুরুষদের (১০.৭%) প্রায় দ্বিগুণ৷

বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অফপ্রার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করলেও সুরক্ষার দিকে দিয়ে বেশ পিছিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের উপর ফরাসি জাতীয় আশ্রয় আদালতের সর্বশেষ দেশ ভিত্তিক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৫ সালে।

গত বছর থেকে অনেক বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীরা ইনফোমাইগ্রেন্টসের কাছে অভিযোগ করে আসছে অনেক আশ্রয় আবেদন আদালত শুনাই ছাড়াই প্রত্যাখান করে আসছে।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আছে। এছাড়া দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উল্লেখযোগ্য সমস্যা আছে।

রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দূরদর্শী আইকন’ হিসেবে ক্ষমতার মেয়াদ শুরু করলেও ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

করোনা মহামারির পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়। কয়েক বছর আগেও এক ইউরোর বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেটি ১৩০ টাকা ছুঁয়েছে।

এমএইউ/জেডএ