চলমান সংবাদ

ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে টিইউসির মানববন্ধন ও সমাবেশ

আজ সকাল ১০টায় চেরাগী পাহাড় মোড়ে বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র চট্টগ্রাম জেলা কমিটির উদ্যোগে ঈদের আগে সকল শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তপন দত্তের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন টিইউসি কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু, বেসরকারী স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মিজান, কমিউনিটি সেন্টার এবং ডেকোরেটার্স শ্রমিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ পারভেজ, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ হানিফ এবং সাধারন সম্পাদক মোঃ নুরুল আলম, ইমারত নির্মান শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ আব্দুর শুক্কুর,  সাধারণ সম্পাদক মহিন উদ্দিন, পাঁচলাইশ থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে তপন দত্ত বলেন, এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের প্রত্যাশা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে কোন শোষণ-বঞ্চনা  এবং বৈষম্য থাকবে না। সকল শ্রেণি পেশার মানুষের ন্যুনতম মৌলিক চাহিদাগুলো পূরন হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে,  স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আমাদের মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শ্রমিকদেরকে আজও তাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার বেতন-বোনাসের দাবিতে রাস্তায় মানববন্ধন ও মিছিল করতে হচ্ছে। শিল্প পুলিশের তথ্য অনুযায়ী চার শতাধিক পোশাক কারখানা বোনাস দিতে না পারার শংকা রয়েছে। অন্যদিকে পোশাক কারখানার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন এই সংখ্যা আরো বেশী হতে পারে। শিল্প পুলিশের তথ্য এবং পোশাক কারখানার মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের বক্তব্য দুইই দেশের শ্রম খাতের জন্য অশুভ বার্তা দিচ্ছে –যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

শ্রমিকনেতা তপনদত্ত আরো বলেন, দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী পোশাক শিল্প খাতের যদি এমন দৈন্যদশা হয় তাহলে বলতে দ্বিধা নেই অন্য খাতগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। তিনি প্রত্যেক বছরের মত এবারও দেশের সিংহভাগ শ্রমিক বেতন-বোনাস থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বারবার ২০ রমজানের মধ্যে সকল শ্রমিকদের বেতন-বোনাস প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী এখনও কোন কলকারখানায় শ্রমিকদের ঈদ বোনাস দেয়া হয়নি।  তিনি সকল শ্রমিকেরা যাতে ঈদের পূর্বেই অন্তত ২৫ রোজার মধ্যে বেতন-বোনাস পায় তারজন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরকে যথাযথ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, ঈদ বোনাসতো বহু দুরের বিষয়, রমজান আসলেই দেশের হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এবং কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটার্স খাতের সিংহভাগ শ্রমিকদের কোন কাজ থাকেনা।

ফলে পুরো রমজান মাস তারা আয়-রোজগারহীন থাকে। ফলে এই দুই সেক্টরের শ্রমিকেরা আদৌ ঈদ উদযাপন করতে পারবে কিনা সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তারা প্রয়োজনে এই দুই সেক্টরের শ্রমিকদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রনোদনা দেয়ার দাবি জানান।

শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, একদিকে শ্রমিকেরা আয়-রোজগারহীন অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের উর্ধ্বগতি শ্রমিকদের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত দেখা দিয়েছে। তারা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনের আহ্বান জানান এবং একই সাথে সকল শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা যাতে ন্যায্যমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারে তারজন্য অবিলম্বে স্থায়ী রেশনিং ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি জানান।

সভায় অবিলম্বে জাতীয় নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করে জাতীয় নিম্নতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধন শেষে এক বিক্ষোভ মিছিল নগরীর মূল মূল সড়ক সমূহ প্রদক্ষিণ করে।