চলমান সংবাদ

ইউরোপীয় নির্বাচন: ফরাসি কট্টর ডান দলের প্রচারণায় অভিবাসন

আরএন দলের সাবেক সভাপতি মারিন লো পেনের সাথে বর্তমান সভাপতি জর্দান বার্দেলা।  ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস
আরএন দলের সাবেক সভাপতি মারিন লো পেনের সাথে বর্তমান সভাপতি জর্দান বার্দেলা। ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস

চলতি বছরের ৯ জুন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এবারের নির্বাচনে কট্টর ডানদের আসন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বেশ কয়েকটি জনমত জরিপে উঠে এসেছে।

ফ্রান্সে অভিবাসী বিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল র‍্যালি (আরএন) দলটির সভাপতি ও তরুণ নেতা জর্দান বার্দেলাকে সামনে রেখে প্রার্থী তালিকা ও আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছে।

দক্ষিণ ফ্রান্সের আলোচিত বন্দর নগরী মার্সেইয়ে রোববার প্রথম নির্বাচনী সভা করে আরএন।

জর্দান বার্দেলা বলেন, “এটি পরিষ্কার যে ৯ জুনের নির্বাচন হবে অভিবাসীতে নিমজ্জিত হওয়ার বিরুদ্ধে গণভোট।”

সমাবেশে প্রচারণার সময় তিনি যেই ব্যানারের সামনে তার সমাপনী ভাষণ দেন সেখানে লেখা ছিল, কারা ফ্রান্সে প্রবেশ করতে পারবেন এবং কারা পারবেন না সেটি ফরাসি জনগণের উপর নির্ভর করে। আমাদের দল ফ্রান্সের সীমান্ত রক্ষা করবে।”

তিনি বলেন, “ফ্রান্স আবারো নেতৃত্বে ফিরে এসেছে। ইউরোপীয়রাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে।”

ফরাসি জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর ইনসে অনুসারে, ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী ফ্রান্সে বসবাসকারী ১০ শতাংশ মানুষ বিদেশি। ১৯৪৬ সালে এই সংখ্যাটি ছিল পাঁচ শতাংশ এবং ২০১০ সালে ছিল ৮.৫ শতাংশ৷ এই অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ ফরাসি নাগরিকত্ব লাভ করেছে।

উল্লেখ্য এই পরিসংখ্যানে বিদেশি বলতে যারা ফ্রান্সের বাইরে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের বোঝানো হয়েছে। কারণ ফ্রান্সে ১৯৭৮ সাল থেকে জাতিগত পরিসংখ্যান আইনিভাবে নিষিদ্ধ।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফরাসি সাংবিধানিক কাউন্সিল ডান প্রভাবিত অভিবাসন বিলের বৃহৎ অংশগুলো বাদ দিয়ে সংশোধিত সংস্করণের অনুমতি দিয়েছিল। ডান ও কট্টর ডানপন্থিরা অভিবাসীদের জন্য নিবেদিত সামাজিক সুবিধার সীমিত এবং কোটা ব্যবস্থার প্রস্তাব করেছিল।

কট্টর ডান আরএন দল ক্রমেই ফ্রান্সের মূলধারার দলগুলোর কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর বিপরীতে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছিল দলটি।

মার্সের শহরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জর্দান বার্দেলা। ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস
মার্সের শহরে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জর্দান বার্দেলা। ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস

ইউরোপের অন্য দেশগুলোর মতো ফ্রান্সেও কট্টর ডানপন্থিরা জীবনযাত্রার ব্যয়, উচ্চ কর এবং অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলমান কৃষক বিক্ষোভের মতো বিষয়গুলো থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পেয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রতি সাধারণর মানুষের অসন্তোষ থেকেও তারা লাভবান হয়েছে।

আরএন দলের প্রতিষ্ঠাতা জঁ মারি লো পেনের কন্যা এবং দলটির সাবেক সভাপতি মারিন লো পেন ইউরোপীয় নির্বাচন নিয়ে বলেছেন, তিনি জাতীয় পর্যায়ে দলের নেতৃত্ব দেয়ায় ইউরোপীয় নির্বাচনের ঘোষিত তালিকায় প্রতীকী হিসেবে প্রার্থী তালিকার শেষে তার নাম রাখতে সম্মত হয়েছে। তিনি মার্সেই শহরের সমাবেশ থেকে এমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ করে কড়া বক্তব্য দেন।

মারিন লো পেন বলেন, ‘‘এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মূলত একটি রাজনৈতিক অবরোধের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন। গত সপ্তাহে প্যারিসে বার্ষিক কৃষি মেলায় কৃষকরা তাকে কিভাবে স্বাগত জানিয়েছেন সেটি আমরা দেখেছি। তার অজনপ্রিয় সংস্কারগুলোর বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে।’’

২৮ বছর বয়সি জর্দান বার্দেলা এবারের ইউরোপীয় নির্বাচনে আরএন দলের নেতৃত্ব দিবেন। ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস
২৮ বছর বয়সি জর্দান বার্দেলা এবারের ইউরোপীয় নির্বাচনে আরএন দলের নেতৃত্ব দিবেন। ছবি: রয়টার্স/গঞ্জালো ফুয়েন্তেস

তিনি ইউক্রেন নিয়ে ম্যাক্রোঁর সাম্প্রতিক মন্তব্যেরও সমালোচনা করেছেন। লো পেন বলেন, ‘‘ইউক্রেনে ইউরোপীয় সৈন্য মোতায়েনের বিষয়ে ম্যাক্রোঁ সরাসরি অস্বীকৃতি জানান নি। প্রেসিডেন্ট মনে করছেন যুদ্ধের মনোভাব দেখিয়ে তিনি পার পেয়ে যাবেন। এটি ফরাসি জনগণকে বিস্মিত করেছে।”

এমএইউ/এআই (রেডিও ফ্রান্স ইন্টান্যাশনাল)