চলমান সংবাদ

অভিবাসী পাচার নিয়ে ইইউর প্রতিবেদন: ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ইটালির ভূমিকা যথেষ্ট নয়

মানব পাচারের শিকার অভিবাসীদের পাশে দাঁড়াতে ইটালির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। ছবি: রয়টার্স/জোহানা জেরন

সম্প্রতি প্রকাশিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইটালিতে পাচার হওয়া অভিবাসীদের সাহায্যে ইটালির ভূমিকা যথেষ্ট নয়৷ ইটালিতে শ্রম শোষণের শিকার অভিবাসীরা প্রধানত নাইজেরিয়া, আইভরি কোস্ট, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং মরক্কোর নাগরিক বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে৷

ইটালিতে যৌন, অর্থনৈতিক এবং শ্রম শোষণের শিকার অনিয়মিত অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল৷

২৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, পাচারের শিকার ব্যক্তিদের রক্ষায় রোম যথেষ্ট ব্যবস্থা নিচ্ছে না৷ কৃষি, টেক্সটাইল এবং গার্হস্থ্য পরিষেবার মতো খাতগুলো শোষণের উচ্চ-ঝুঁকিতে রয়েছে৷

প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে মানবপাচার প্রতিরোধ সম্পর্কিত কাউন্সিল অব ইউরোপের এক্সপার্ট গ্রুপ (গ্রেটা)৷ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ইটালিতে প্রতি বছর আনুমানিক দুই হাজার ১০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ লোক পাচারের শিকার হন৷ তাদের বেশিরভাগই অনিয়মিত অভিবাসী বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইটালির অভিবাসী বিরোধী নীতি মানবপাচারকে উৎসাহিত করে৷ কারণ এটি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে এবং অভিযোগ দায়ের করতে নিরুৎসাহিত করে৷

প্রতিবেদনে ইটালির জাতীয় মানব পাচার বিরোধী দপ্তরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ইটালিতে বর্তমানে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ মানব পাচারের ঝুঁকিতে রয়েছে৷ কিন্তু ভুক্তভোগীদের শনাক্তকরণের জন্য প্রণীত পদ্ধতির অপর্যাপ্ততা এবং বহিষ্কৃত হওয়ার ভয়ে তাদের অভিযোগের হার কম৷

এছাড়া অভিবাসী যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ ২০১৮ সালে যৌন নিপীড়নের শিকার অভিবাসীদের হার ছিল ৮৪ শতাংশ এবং ২০২২ সালে সেটি কমে হয়েছে ৫৯ শতাংশ৷ ওই সময়ে কোভিড-১৯ মহামারি কারণে এই হার কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে

এরপরেই আছে শ্রম শোষণ৷ ২০১৮ সালে যেটি ছিল ১০ শতাংশ৷ ২০২২ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ শতাংশে৷ অপরদিকে, জোরপূর্বক ভিক্ষাবৃত্তি, দাসত্ব, জোরপূর্বক বিয়ে এবং জোরপূর্বক অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের হার এক থেকে দুই শতাংশ৷

ইটালিতে আসা অভিবাসীদের মধ্যে মানবপাচারে জড়িত শোষণের শিকার হয়েছেন নাইজেরীয় অভিবাসীরা। এর পরিমাণ ৬৮.৪ শতাংশ৷ দ্বিতীয় অবস্থানে আছে আইভরি কোস্ট (৩.৫%), তৃতীয় পাকিস্তান (৩%), চতুর্থ বাংলাদেশ (২.৯%) এবং শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে সবশেষ আছে মরক্কো (২.২%) থেকে আসা মানুষেরা৷

ইটালীয় কর্তৃপক্ষের মতে, নাইজেরিয়ান মাফিয়া দেশটিতে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত৷ তারা একটি বড় পতিতাবৃত্তির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলছে৷ এই নেটওয়ার্কগুলোর অন্যতম হোতা ওমোরুয় ক্রিটি, যিনি মামি ছদ্মনামেও বেশ পরিচিত৷ তাকে ২০২৩ সালে আটক করে নাইজেরিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়৷

ইটালীয় পুলিশ জানিয়েছে, তিনি নাইজেরিয়া থেকে তরুণীদের পাচার করে ইটালিতে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রধান সংগঠকের ভূমিকা পালন করছিলেন৷

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ‘‘লাম্পেদুসা সংকট’’ শুরুর পর ইটালীয় সরকার অভিবাসীদের আগমনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন ব্যবস্থা নিয়েছে৷ বিশেষ করে, কর্তৃপক্ষ অভিবাসীদের আটকের সর্বোচ্চ মেয়াদ ১৮ মাস বাড়িয়েছে এবং আরও ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করেছে৷

ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, “ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসীরা একটি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সংস্পর্শে আসার সাথে সাথে তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে যেন জানাতে পারে সেটি নিশ্চিত করার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত৷’’

প্রতিবেদন অনুসারে,মানবপাচার বিষয়ক মামলায় তদন্ত, রায় এবং দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সংখ্যাও কমেছে৷ রোমের উচিত মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ‘কার্যকর নিষেধাজ্ঞা’ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

এদিকে, ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে ইইউর মানবাধিকার কমিশনার দুনিয়া মিয়াতোভিচ সদস্য দেশগুলোকে অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা এনজিও এবং ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘নিপীড়ন’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন৷

এমএইউ/টিএম (ইনফোমাইগ্রেন্টস)