বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১২৭): পাঠ্যসূচী

– বিজন সাহা

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

বেশ কিছুদিন হয় ফেসবুকে পাঠ্যসূচী নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে। প্রথম দিকে সব গেল সব গেল রব উঠলেও পরবর্তীতে দেখা গেল সব কিছু এখনও যায়নি, বরং নতুন কিছু পাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রশ্নটি রাজনীতির দুর্গম পথ পেরিয়ে বিশেষজ্ঞদের কাছে ভিন্ন ব্যাখ্যা পেয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত শুনলাম এই পাঠ্যসূচী আপাতত চালু করা হবে না। তবে আমার এই জানা শুধু ফেসবুকের বিভিন্ন মানুষের আলোচনা থেকে, যাদের অনেকেই আমার কাছে বিশ্বাসভাজন মনে হয় তাদের দীর্ঘ দিনের লেখালেখি থেকে, কারণ তাদের লেখায় রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকে না, থাকে বিষয় বস্তুর নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ। আমি শুধু দূর থেকে এ নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে পারব, কারণ মতামত দেবার জন্য যে ধরণের সম্পৃক্ততা থাকা দরকার সেটা আমার নেই। সত্যি বলতে কি নতুন পাঠ্যসূচী বা বই আমি নিজের চোখে দেখিনি, যা জানি শুধু ফেসবুকে অন্যান্যদের লেখালেখি থেকে। আর যেহেতু অধিকাংশ লেখাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণীত তাই সেই জানার ভিত্তিতে কোন মন্তব্য কতটুকু নিরপেক্ষ হবে সেটাও ভাবার বিষয়।

প্রথমেই যেটা চোখে পড়েছিল তা হল অনেকগুলো ছোট ছোট ভিডিও যেখানে বিদেশে শিক্ষকগণ কিভাবে খেলাচ্ছলে বাচ্চাদের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা দেন তার বর্ণনা। সেগুলো নিঃসন্দেহে উপকারী তাতে সন্দেহ নেই। তবে যেটা আমি বরাবর বলি, সব কিছুই হতে হবে স্থান কাল ও পাত্র অনুযায়ী। বিভিন্ন দেশের আর্থসামাজিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি বিভিন্ন রকমের। তাই যেকোনো কাজের সঠিক ফলাফল পেতে হলে এই ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। আমি অনেককেই দেখেছি যারা বাবামার ইচ্ছায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত কিছুই হতে পারেনি, যদিও অন্যান্য অনেক বিষয়ে তাদের জন্মগত প্রতিভা ছিল। বিষয়টাকে গণিতের লজিকে এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। গণিতে অনেক সমীকরণ আছে যার সাধারণ সমাধান আছে। কিন্তু সেটাকে আমরা যখনই পদার্থবিদ্যায় কাজে লাগাতে যাব, তখন স্থান কাল পাত্রের বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। মানে যদিও গণিত পদার্থবিদ্যার ভাষা তারপরেও সব গাণিতিক সমাধান পদার্থবিদ্যার ক্ষেত্রে কার্যকর নাও হতে পারে। কারণ পদার্থবিদ্যায় সেসব সমীকরণের সাথে উপযুক্ত ইনিশিয়াল ও বাউন্ডারি কন্ডিশন যোগ করতে হবে, যা একটি ঘটনা থেকে আরেকটি ঘটনাকে আলাদা করে। এটা এভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। যেমন শরীর ঢাকার জন্য শার্ট দরকার। শরীর ঢাকার জন্য এটা সাধারণ সমাধান। কিন্তু যখন কোন নির্দিষ্ট ব্যাক্তির কথা আসবে তার জন্য বিশেষ মাপের শার্ট লাগবে। এই মাপটাকে বলা যায় বাউন্ডারি কন্ডিশন কারণ এটা সাইজের উপর নির্ভর করে। তাই শার্ট সাধারণ সমাধান হলেও যেকোন শার্ট সবার জন্য সামাধান নয়। আবার ধরুন যখন বাচ্চাদের জন্য জামাকাপড় কেনা হয় বাবা মা এক সাইজ বড় কেনে, কারণ শিশু বড় হয়। তাই এমনভাবে কিনতে হয় যাতে এখনও কাজে লাগে আবার কয়েক মাস পরে বাচ্চা যখন আকারে বড় হবে তখনও যেন ব্যবহার করা যায় সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এটাকে বলা যায় ইনিশিয়াল কন্ডিশন। একজন মানুষের জন্য সাধারণ পোশাক কিনতে যেখানে তার শারীরিক/মানসিক অবস্থা বিচার করতে হয় একটা দেশের ক্ষেত্রে সেটা কীভাবে এড়িয়ে চলা যায়? যাকিছু বিদেশী বা যা অন্য দেশে ভালো ফল দেয় সেটা আমাদের দেশেও কার্যকরী হবে এটা ভাবার কারণ নেই। আর এজন্যেই দরকার স্থানীয় বিশেষত্ব বিচারে আনা।

কিছুদিন আগে প্রগতির যাত্রীতেই লিখেছিলাম ব্রেইন ড্রেইন নিয়ে। লিখেছিলাম যদিও আমরা অনবরত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার পিন্ডি চটকাই, কিন্তু এদেশের ছেলেমেয়েরাই বিভিন্ন পর্যায়ে ইউরোপ আমেরিকায় গিয়ে কৃতিত্বের সাথে কাজ করে। এর অর্থ আমাদের দেশে মেধার অভাব নেই,  আছে সেই মেধার লালন পালনের অভাব। আমরা প্রায়ই দেখি জিপিও ৫ এ পাওয়া ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান বা অন্যান্য বিষয়ে ভালো করলেও নিজের দেশের ইতিহাস ঠিক জানে না, নিজের ভাষা, সংস্কৃতি সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞান রাখে না। কারণ ইউরোপ আমেরিকায় যেতে ভাষা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস না জানলেও চলে, যেটা দরকার সেটা টেকনিক্যাল বিষয়ে ভাল জ্ঞান। আর এটাই মনে হয় সবচেয়ে চিন্তার ব্যাপার।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানি আর এখন বিদেশেও স্বীকৃত যে সোভিয়েত শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা ব্যবস্থার একটি। পুরাতন জার্মান শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত্তিতে নিজ দেশের বিশেষজ্ঞের অভাব মেটাতে সেটা প্রণয়ন করা হয়েছিল। মূল কথা ছিল সার্বজনীন শিক্ষা। তবে শুধু তাত্ত্বিক শিক্ষা নয়, সাথে সাথে শিক্ষার প্রায়োগিক ব্যবহার যাতে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসে তারা দেশ গঠনে অবদান রাখতে পারে। সোভিয়েত আমলে তৃতীয় বিশ্ব থেকে যে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এখানে পড়াশুনা করার সুযোগ পেয়েছে তাদেরও সেভাবেই গড়ে তোলা হয়েছিল। এরা এখানে পড়াশুনা করে বিশেষজ্ঞ হয়ে দেশে ফিরে কাজ করবে। মূল কথা ছিল দেশপ্রেম। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর দেশ ভাঙার মূল কলাকুশলীরা প্রথমেই শিল্প ধ্বংস করে। জলের দামে কলকারখানা বিক্রি করে সেগুলো অচল করে রাখে। তারপর ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন করে এই বলে যে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পশ্চিমা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সে সময় জর্জ সোরস প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। লেখা হয় নতুন ইতিহাস যেখানে হিটলারের পাশাপাশি স্তালিনকেও একই ভাবে দোষ দেয়া হয়। যুব সমাজের মধ্যে এক ধরণের ভ্রান্ত ধারণা দেয়া হয় সোভিয়েত আমল সম্পর্কে। সেখানে যে ভুল ছিল না তা নয়, কিন্তু শুধু ভুলটাকেই সামনে আনা হয় আর পশ্চিমা ব্যবস্থাকে রঙিন আলোয় দেখানো হয়। ফলে বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের ভালো ভালো ছাত্ররা শেষ করার আগেই বিভিন্ন পশ্চিমা কোম্পানির সাথে জড়িয়ে পড়ে। এভাবেই শুরু হয় মগজ পাচার। আমি তিরিশ বছর গবেষণার সাথে জড়িত থাকলেও পড়াই মাত্র ছয় বছর। সেখানে কিছু জিনিস খেয়াল করলাম। আমাদের সময় এদেশের ছাত্রছাত্রীরা, বিশেষ করে যারা ফিজিক্সে পড়ত, খুব মেধাবী ছিল আর যুক্তি দিয়ে বুঝতে বা বোঝাতে পারত। এখন তেমনটা চোখে পড়ে না। এটা ঠিক সে সময় সেরা ছাত্রছাত্রীরা ফিজিক্স, ম্যাথেম্যাটিক্সে পড়াশুনা করতে আসত। এখন ওরা যায় ইকনমিক্স, কম্পিউটার সাইন্স এসব বিষয়ে পড়তে। কিন্তু আমার মনে হয় এটাই একমাত্র কারণ নয়। আগে স্কুলে রচনা লিখতে হত। এখন তার জায়গায় কুইজ, মানে ছোট ছোট প্রশ্নের উত্তর। এ জন্যে চিন্তা করতে হয়না, উত্তর মুখস্ত করলেই হয়। এটা অনেকটা মালিকের প্রশ্নের উত্তর দেবার মত, যার ব্যাখ্যা শোনার সময় নেই। আমাদের দেশেও এই কুইজ সিস্টেম চালু আছে। কুইজ কি? মনে হতে পারে সেখানেও তো কয়েকটি উত্তর থেকে একটি উত্তর বেছে নিতে হয়, তার মানে আমার বাছার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা বেছে নেই অন্যের দেয়া উত্তর থেকে একটি আর সেখেন একটি মাত্র উত্তরই সঠিক। যদি ব্যাখ্যার সুযোগ থাকত তাহলে হয়তো একজন উত্তর ভুল লিখলেও সেটার পেছনে যুক্তি দিতে পারত, মানে সে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারত। কুইজে সেটা হয় না। এভাবেই মানুষকে চিন্তাশীল মানুষ থেকে রবোটে পরিণত করা হয় যে কোন প্রশ্ন না করে অনেক কাজ করতে পারে, মালিকের জন্য অনেক মুনাফা তৈরি করতে পারে। এভাবেই তৈরি হয় দাসত্বের মনোভাব। হয়তো কোন কোন বিষয়ে এটা দিয়ে কাজ চালানো যায় কিন্তু ফিজিক্সে মুখস্ত নয়, বোঝাটাই আসল। আমি প্রায়ই এই বোধটাই ওদের কাছে খুঁজে পাইনা। এটাও মনে হয় বিশ্বব্যাপী নিজেদের জন্য উচ্চশিক্ষিত দাস তৈরির পশ্চিমা চাল। কেননা এসব হয়েছে ওদের রিকমেন্ডেশনে। এমন শিক্ষা দাও যাতে এরা শুধু কাজ করবে, প্রশ্ন করবে না, বিদ্রোহ করবে না। পশ্চিমা বিশ্ব বলতে গেলে বিনা মূল্যে রেডিমেড বিশেষজ্ঞ পেয়ে যায়। বর্তমানে পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন স্যাঙ্কশনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়াতেও শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। বিশেষ করে ইতিহাস যেন দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলে সেদিকে খেয়াল করা হচ্ছে। তবে দেশ হল বিশাল রেলগাড়ির মত। ইঞ্জিন চলতে শুরু করার বেশ খানিক পরে শেষ ওয়াগন চলতে আরম্ভ করে। আবার থামার ক্ষেত্রেও একই কথা। হুট করে থামিয়ে দিলে ইনারশিয়ার কারণে পেছনের বগিগুলো হুড়মুড় করে ধাক্কা দিয়ে গাড়িটাকেই লাইনচ্যুত করে ফেলতে পারে। তাই শিক্ষাক্রমের মত বিষয় যে এক দিনেই পরিবর্তন করা যাবে না সেটা বুঝতে হবে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১২৬): নির্বাচন – বিজন সাহা

এবার আসি দেশের কথায়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের লেখা পড়ে মনে হয়েছে আমাদের আর খারাপ হবার কোন সুযোগ নেই, যেকোন পরিবর্তনই ভালোর দিকে যাবে। আমার ছোটবেলায় আমিও দুধের সাথে জল মেশানোর অংক কষেছি। এখন দেখছি এর সাথে আসছে সাম্প্রদায়িকতা। কিন্তু শিক্ষার মূল কাজই তো ঐক্য গড়ে তোলা। কী অংক, কী বিজ্ঞান, কী অন্য কোন বিষয় – সমস্ত উদাহরণই হতে হবে গঠনমূলক যা শিশুদের ভালবাসতে শেখায়, ঘৃণা করতে নয়। আমরা যদি প্রতিবেশীকে ভালবাসতে শেখাতে না পারি, দেশকে ভালবাসতে শেখাব কী করে?

এখানে অনেক কথা হয়েছে বিজ্ঞান বই নিয়ে। সেটা প্রচণ্ড রকম সময়োপযোগী সেটাও বলা হয়েছে। তবে যেটা বলা হয়নি তা হল বাংলাভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে, ইতিহাস নিয়ে। কয়েক বছর আগে পাঠ্যসূচী থেকে রবীন্দ্রনাথ সহ বাংলা সাহিত্যের বেশ কিছু দিকপালের লেখা উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের জাতীয়তার মূলে রয়েছে ভাষা। সেই বাংলা ভাষার যারা স্থপতি, যাদের লেখার উপর দাঁড়িয়ে আছে এই ভাষা তাদের লেখা বাদ দিয়ে আমরা বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতি কীভাবে শিখব? ধর্মের দোহাই দিয়ে শুধু এদের লেখাই বাদ দেব না, পয়লা বৈশাখ সহ বিভিন্ন উৎসব, জারি গান, কবি গান, বাউল সঙ্গীত এসব ধীরে ধীর বিলুপ্ত করে কোন দেশ আমরা গড়ব? আজ যে দেশের প্রতিটি ছেলেমেয়ে পাশ করার আগেই ইউরোপ আমেরিকায় নিজেদের জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখে, সেখানে চলে যেতে চায়, চলে যায় – এর সাথে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের, শিক্ষাক্রমের কী সম্পর্ক? হিন্দু মুসলমান বিতর্কে আমরা বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি ত্যাগ করছি। এই বিতর্কে আমরা আমাদের ইতিহাস থেকে অনেক কিছুই বাদ দিয়েছি, দিচ্ছি। যতদূর জানি এমনকি খ্রিষ্টের জন্মের আগে থেকেও এই অঞ্চল সমৃদ্ধশালী ছিল। তাম্রলিপ্ত ছিল তাম্র যুগের বিখ্যাত বন্দর। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমাদের অতীতকেই বিসর্জন দিয়ে বসে আছি। অতীতকে অস্বীকার করে কোন ভবিষ্যৎ আমরা গড়ব? তাই আমার তো মনে হয় বিজ্ঞানের আগে আমাদের উচিৎ ছেলেমেয়েদের এ দেশের হাজার বছরের সঠিক ইতিহাস শেখানো, বিভিন্ন সময়ের বাংলার মানুষ যে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে সেটা জানানো, দরকার ভাষা আন্দোলনের কথা বলা, দরকার একাত্তরের সঠিক ইতিহাস শেখানো। কারণ একমাত্র তখনই আমরা দেশপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তুলতে পারব। তা না হলে যে শিক্ষাক্রমই চালু করা হোক না কেন সেটা হবে জনগণের টাকায় ইউরোপ আমেরিকার জন্য দক্ষ ক্রীতিদাস তৈরি করার কারখানা।

ফিরে আসি কুইজের কথায়। যতদূর শুনেছি আমেরিকার সাধারণ মানুষের বহির্বিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞান তেমন নেই। নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের ভালোমন্দ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে তারা খুব একটা আগ্রহী নয়। এমনকি ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন উচ্চপদস্থ লোকজনের ভূগোল জ্ঞান দেখলে ভড়কে যেতে হয়। এসবই কি এই কুইজ জাতীয় শিক্ষার ফল? কয়েকটি অপশন থেকে সঠিক উত্তর বেছে নেয়ার শিক্ষার ফল? আমার তো মনে হয় দেশে দেশে আজ যে রাজনতিক অসহিষ্ণুতা তার পেছনেও এই শিক্ষা ব্যবস্থার হাত আছে।

তবে এ সবের বাইরেও বড় সমস্যা মনে হয় অন্যত্র। আমাদের অধিকাংশ বাবা মা ছেলেমেয়েদের তৈরি করে ইউরোপ আমেরিকার বড় বড় কোম্পানির চাকুরে হিসেবে। সরকারি শিক্ষাক্রম থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইংরেজি ও সেই সব বিষয় যা এই চাকরি নামক চাঁদ হাতে ধরিয়ে দিতে পারে। যতক্ষণ না অভিভাবকগন নিজ দেশের সাথে সন্তানদের ভবিষ্যৎ মেলাতে পারবেন ততদিন কোন শিক্ষাক্রমই কাজে আসবে না। তবে সেটা যাতে সম্ভব হয় এজন্যে শিক্ষার সাথে সাথে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। কী সরকার, কী অভিভাবক – উভয় পক্ষের মানসিকতার পরিবর্তন এক্ষেত্রে একান্ত আবশ্যক।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো