বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১২৫): নিরাপত্তা

-বিজন সাহা

কয়েকদিন আগে পরিচিত এক জন আমার সাথে দেখা করতে চাইল। অনেক আগে একবার দেখা হয়েছিল, তবে ফেসবুকে মাঝে মধ্যে দেখি। জিজ্ঞেস করলাম টেলিফোনে কাজ সারা যায় কি না।
– দেখা করলে ভালো হয়।
– ঠিক আছে। আমি রাতে একটু ছবি তুলব ভাবছি মস্কো নদীর তীরে। ওখানে চলে এস, ঘোরাও  হবে, কথা বলাও হবে।

আসলে টেলিফোনে মাঝেমধ্যে অনেকের সাথে বাংলায় কথা হলেও সামনাসামনি খুব একটা হয় না। আর চিন্তাভাবনা শুধু লেখার মধ্যে শেয়ার করলে ফিডব্যাক তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই সুযোগ পেলে আমি দেশের মানুষের সাথে দেখা করার চেষ্টা করি, যারা দেশের পরিস্থিতি জানে, দেশ নিয়ে যাদের নিজস্ব ভাবনা আছে, যাদের সাথে কথা বলে নিজের জানাটা একটু ঝালাই করে নেওয়া যায়।

নির্দিষ্ট সময়ে আমাদের দেখা হল। ও নিজেই কথা শুরু করল। আসলে আমি নিজেও ঠিক আশা করিনি শুরুটা এমন হবে। আমি জানি অনেকেই বিভিন্ন জায়গায় আমার লেখা পড়ে, তবে সেখানে কোন সাড়াশব্দ না দেয়ায় বুঝতে পারি না। ব্যক্তিগত কথাবার্তার সময় অনেকেই সেটা বলে। তবে যার কথা বলছি আমাদের পরিচয় বা যোগাযোগের ভিত্তিতে সেটা মনে হয়নি। আমি জানতাম ও নিজে ছবি তোলে আর আমার ছবি মাঝেমধ্যে দেখে। সাক্ষাতে জানালো যে ও আমার প্রগতির যাত্রীর লেখাগুলো পড়ে। সবগুল পড়া হয়নি, তবে পড়ছে। কিছুদিন আগে জুমে আমার আর বিশ্বরূপের কথা শুনেছে। তাই নিয়ে কিছু প্রশ্ন। তবে শুধু এটাই নয়। নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও আমার সাথে কথা বলতে চায়। যখনই কেউ নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আমার মতামত জানতে চায় আমি সাগরে পড়ি। কারণ আমি শুধু আমার অভিজ্ঞতা থেকেই কোন কথা বলতে পারব। সেদিক থেকে আমার অভিজ্ঞতা খুবই কম, কারণ জীবনে সব কিছুই স্মুথ ছিল এই অর্থে যে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এসব ভালোভাবেই শেষ করেছি আর তারপরেই গবেষণার কাজে ঢুকেছি। এটা ঠিক বিভিন্ন সময়ে অনেক সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়েছে তবে সেটা কাজের কারণে নয়, এদেশের অর্থনৈতিক কারণে। নব্বুইয়ের দশকে বেঁচে থাকাই ছিল বড় ধরণের কৃতিত্ব। তবে কাজের আনন্দে দিন কেটে গেছে খেয়ে না খেয়ে। তাই অধিকাংশ মানুষ যাদের জন্য কাজ শুধু আনন্দের জন্য নয়, জীবনধারণের বা বলা চলে স্বচ্ছল জীবনের চাবিকাঠি তাদের উপদেশ দেয়া খুব কঠিন। আমি তাই নিজের সন্তানদেরও উপদেশ দেই না। জিজ্ঞেস করলে বলি আমি কি করেছি আর সেই অভিজ্ঞতা থেকে কী করতাম। সিদ্ধান্ত যেন ওরা নিজেরাই নেয়। তবে যেহেতু বিশ্ব পরস্থিতি সম্পর্কে কমবেশি জানি, তাই রাজী হলাম আমার চিন্তাভাবনা ওর সাথে শেয়ার করতে।

তাই জিজ্ঞেস করলাম ওর নিজের প্ল্যান কী। জানালো যে পারিবারিক কারণে আরও বেশ কয়েক বছর ওকে এখানেই থেকে যেতে হবে। তাই আমার পক্ষে কথা বলা সহজ হল। বললাম, যেহেতু বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে কমবেশি ভাবি, খবর রাখি, যদি পারমাণবিক যুদ্ধ পর্যন্ত না যায় রাশিয়া থাকার জন্য মোটেই খারাপ জায়গা নয়। হয়তো পশ্চিমা বিশ্বের মত অনেক রোজগার করা যায় না, তবে সেটাই তো শেষ কথা নয়।

কোনটা শেষ কথা?

দেখ, আমরা জীবনে যা কিছু করি – তা কমবেশি নিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য। সোভিয়েত আমলে অধিকাংশ মানুষকে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে যেতে দেখে অবাক হতাম। এখন বুঝি অনেক না থাকার মধ্যেও তাদের কিছু কিছু মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা ছিল। আর সেটাই তাদের প্রশান্তি দিত। এই যে আমরা পড়াশুনা করি, বিভিন্ন ধরণের কাজকর্ম করি – সে সবই নিজেদের ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তাই নিরাপত্তা ব্যাপারটা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে নিরাপত্তা মানে শুধু শারীরিক নিরাপত্তা নয়, শুধু অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নয়, ভাব প্রকাশের নিরাপত্তা, নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবার নিরাপত্তা। আমাদের দেশ থেকে অনেকেই আজকাল পশ্চিমা বিশ্বে চলে যাচ্ছে। এদের অনেকেই কী সামাজিক ভাবে, কী অর্থনৈতিক ভাবে খুব ভালো অবস্থানে ছিল। তবুও যাচ্ছে। এক অর্থে নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই। কারণ দেশে এরা যে সামাজিক মর্যাদায় অধিষ্ঠিত ছিল, সেটা তারা ওখানে আর কখনই ফিরে পাবে না। না, আমি সবে মাত্র পাশ করা তরুণ প্রজন্মের কথা বলছি না, বলছি সেই সমস্ত প্রতিষ্ঠিত মানুষের কথা, যারা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে চাকরি জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হ্যাঁ, পশ্চিমা বিশ্বে তো সবাই যেতে চায়, তাহলে এতে সমস্যা কোথায়?

আমি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়, এখানকার টেলিভিশনে পশ্চিমা বিশ্বের খবরাখবর পাই। এসবের মধ্যে লিঙ্গ সংক্রান্ত যেসব ঘটনা আজকাল ঘটছে সেটা ভয়াবহ মনে হয়। অনেক সময় সেসব এদের প্রোপ্যাগান্ডা বলে মনে হয়েছে। তবে কিছুদিন আগে একজনের একটা স্ট্যাটাস দেখে নতুন করে ভাবলাম। তাকে আর যাই বলি না কেন কেন, রাশিয়ার সমর্থক বলা চলে না। ফেসবুকে যোগাযোগ, লেখালেখি করে, তাই মাঝে মধ্যে ওর লেখা পড়ি। কিছুদিন আগে ও কিছু ঘটনার কথা লিখল। এক বাচ্চা ছেলে স্কুল থেকে বাসায় ফিরে মাকে প্রশ্ন করছে সে ছেলে না মেয়ে? মা তো অবাক। হঠাৎ এই প্রশ্ন। আসলে স্কুলে এখন বাচ্চাদের মনে এ ধরণের সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। অথবা বলা চলে লিঙ্গ নিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে বাধ্য হচ্ছে, অন্যথায় সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার কেউ কেউ নিজেদের ফ্লুইড বলে ঘোষণা করছে। মানে একদিন সে ছেলে, আরেকদিন মেয়ে, আর বাচ্চারা সেভাবেই তাকে হি, শি, ইট ইত্যাদি ভাবে সম্বোধন করতে বাধ্য হচ্ছে। এটাও কিন্তু এক বাড়তি মানসিক চাপ। আমার এক কলিগ যে আমেরিকায় বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছে একদিন বলল, কোন ছাত্রীর দিকে যদি কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাক তাহলেও কেস খেয়ে যেতে পার। অর্থাৎ স্বাধীন বিশ্ব বলে পরিচিত সমাজে তোমাকে প্রতি পদে পদে নিজেকে কঠিন নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হচ্ছে, যেটা আসলে ভীতির পর্যায়ে পড়ে। কেউ কেউ নিজেকে কুকুর, বেড়াল এসব বলেও চালিয়ে দিচ্ছে। শিশুদের শেখানো হচ্ছে যে ছেলে মেয়ের বাইরেও বিভিন্ন লিঙ্গ আছে। এখন চিন্তা করে দেখ যে শিশু প্রাইমারি স্কুলে পড়ে আর সেখানে গিয়ে শোনে তার বাবা মা এতদিন যেটা বলে এসেছে সেটা মিথ্যা – তার প্রতিক্রিয়া। এই ছোট্ট একটা ঘটনাই কিন্তু একটা শিশুকে মানসিক ভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিতে যথেষ্ট। প্রশ্ন – যে সন্তানের নিরাপত্তার কথা ভেবে একদিন সে ভালো চাকরি, প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে পরবাসী হল – সেই সন্তান এখন কতটুকু নিরাপদ। সেই সন্তান মানসিক ভাবে কতটুকু সুস্থ হয়ে বেড়ে উঠবে।
কিন্তু বাবা মা তো চাইলেই ছেলেকে বুঝিয়ে বলতে পারে। তাই না?
সমস্যা এখানেই। বাবা মা চাইলেই পারে না, বরং স্কুল থেকে যা শেখানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে বলার জন্য আইনি ব্যবস্থার আওতায় আসতে পারে। অন্তত ইউরোপের অনেক দেশেই এমন হচ্ছে বলে শুনেছি। সেখানে বিভিন্ন লোকের কমেন্ট থেকেও বুঝেছি ঘটনার সত্যতা, কেননা অনেকেই ভুক্তভোগী, অনেকেই চিন্তিত। আসলে আমার কেন যেন মনে হয় এসবের মধ্য দিয়ে কোন কোন গোষ্ঠী উল্টা লিঙ্গ সমস্যা টিকিয়ে রাখতে চায়। বিএলএম-এর কথাই ধর। যদি বর্ণবাদী সমস্যা দূর করার মহৎ উদ্দেশ্য থেকেই এসব করা হত, তাহলে কোন রেসকে প্রাধান্য দিয়ে এই সমস্যা টিকিয়ে রাখত না। রেসিয়াল সমস্যা সমাধানের জন্য এক রেসকে অন্য রেসের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া বোকামি, এ জন্য দরকার ধীরে ধীরে অসাম্য দূর করা। কী নারী, কী পরিবেশ, কী অন্যান্য সব বিষয় – সেসব সমাধান করার চেয়ে আন্দোলন গড়ে তোলাই যেন মূল উদ্দেশ্য। আর এর পেছনে যে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে সেটা বলাই বাহুল্য।  এক সময় এরা “ডিভাইড অ্যান্ড রুল” তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে আমাদের সব দেশ শাসন ও শোষণ করেছে, এখন এসব তারা করছে নিজেদের জনগণের উপরে। আমার তো মনে হয় ওসব দেশ এখন নিহিলিস্টদের অধিকারে। যা কিছু সত্য বলে জানা ছিল, যা ছিল গত প্রায় পাঁচ শ বছরের অভিজ্ঞতার ফসল, ভালো মন্দ সব মিলিয়ে যা এক সভ্যতা গড়ে তুলেছিল – সেই সবকিছু অস্বীকার করাই যেন আজ পশ্চিমা এলিটদের এক বড় অংশের ধ্যান জ্ঞান। আর এ কারণেই সেখানে আজ আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এত তীব্র। তাই সেসব দিক ভাবলে রাশিয়ায় থেকে যাওয়া একেবারেই খারাপ অপশন নয়, তবে যেহেতু তোমাকে এমনিতেই আরও বেশ কয়েক বছর এখানে থেকে যেতেই হবে – ইতিমধ্যে তুমি সেই সমাজের আরও পরিষ্কার চিত্র পাবে বলেই মনে হয়। তখন তুমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। না, আমি তোমাকে ওদিকে যেতে মানা করছি না। বলছি ভবিষ্যৎ শুধু আগামীকাল বা পরশু নয়, শুধু পাঁচ বছর পরে নিজের জীবন নয়, ভবিষ্যৎ মানে ছেলেমেয়ে, তাদের পরবর্তী জেনারেশন। তাই আর্থিক দিকটা দেখার সাথে সাথে সেখানকার সামাজিক দিকটাও দেখা দরকার। আমাদের দেশের ধর্মীয় উন্মাদনাও যেমন খারাপ, তেমনি খারাপ আজ পশ্চিমা বিশ্বের সব কিছু অস্বীকার করার প্রবনতা। সার্বিক ভাবে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে যদি সিদ্ধান্ত নাও – দেখবে নিজেই এর উত্তর পেয়ে যাবে।

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১২৪): বিশ্বকাপ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ-বিজন সাহা

একথা ঠিক সেই লেখায় শিক্ষক স্কুলে কি ধরণের প্রশ্ন করেছিলেন তা জানানো হয়নি। তবে ধারণা করে নিতে পারি (ভুল হতে পারে) যে তাকে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয় আর সে নিজেকে ছেলে বলায় হয়তো বা তার উত্তরে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। সেটা না হলে সেই ছেলের মায়ের কাছে এ নিয়ে প্রশ্ন করার অবকাশ থাকত না। কিন্তু খেয়াল করার ব্যাপার, যে নিজেকে ফ্লুইড বা বেড়াল বলে পরিচয় দিচ্ছে তাকে কিন্তু এই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না। এর মানে সমান অধিকারের কথা বলা হলেও এখন স্বাভাবিক ভাবে যারা চিন্তা করে তারা আর সমান অধিকার উপভোগ করছে না। কয়েক দিন আগে পিতেরবুরগে আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে যুদ্ধ চললেও রাশিয়ায় প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ইত্যাদি ফোরাম হচ্ছে। প্রচুর বিদেশী সেখানে অংশগ্রহণ করছে। যাহোক, রাশিয়া লিঙ্গ প্রশ্নে বরাবরই কনজারভেটিভ। কেউ সমকামী হতে চাইলে কেউ মানা করে না, এ নিয়ে কেউ চাকরি ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ে না। সোভিয়েত আমলে দেখেছি, এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর নন-ট্র্যাডিশনাল অরিয়েন্টেশনের লোকজন কাজ করে। তবে তাদের প্রোপ্যাগান্ডা করা নিষিদ্ধ। এই ফোরামে ভ্লাদিমির পুতিন একটা নতুন কথা বললেন। এটা অবশ্য নতুন কিছু নয়, তবে প্রকাশ্যে আগে বলেছেন বলে শুনিনি। বললেন, “অবশ্যই অন্যান্য অরিয়েন্টেশনে বিশ্বাসী যারা তাদেরও অধিকার আছে সমাজের সব কাজে অংশ নেবার, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠিত হবার, কিন্তু এমন যেন না হয় যে শুধু তাদেরই অধিকার আছে, অন্যদের নেই।” কথাটা ফেলে দেবার মত নয়। ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটার এর জায়গায় অল লাইভ ম্যাটার বলে আমেরিকায় অনেক নামীদামী মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সদ্য সমাপ্ত ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্বেত বর্ণবাদের ক্ষতির মাসুল দিয়েছে বর্তমানের দক্ষিণ আফ্রিকা দল নির্বাচনে। নতুন ভুল দিয়ে পুরানো ভুল শোধরানো যায় না, তাতে শুধু ভুলের আয়ু বাড়ানো হয় আর শাসক ও শোষিতের স্থান পরিবর্তন ঘটে।

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো