চলমান সংবাদ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীলঙ্কার সাফল্য, নেমেছে এক অঙ্কের ঘরে

গত বছর শ্রীলঙ্কা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়ে। কয়েক মাস ধরে চলে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট।
গত বছর শ্রীলঙ্কা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক দুর্দশার মুখে পড়ে। কয়েক মাস ধরে চলে খাবার, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট। রয়টার্স

অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার গত দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেশটির মূল্যস্ফীতি ছিল ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের জুলাই মাসে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার এখন বাংলাদেশের চেয়ে কম। জুনে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ।

দ্য ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুনেও শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশ। সেখান থেকে এক মাসের মধ্যে তা ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের বেশি কমেছে। শ্রীলঙ্কার পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে ছিল—৫ দশমিক ৮ শতাংশ।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, জুলাই মাসে দেশটিতে খাদ্যের দাম কমেছে। জুনে দেশটির খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ; জুলাই মাসে তা ১ দশমিক ৪ শতাংশ ঋণাত্মক হয়ে যায়। খাদ্যবহির্ভূত অন্যান্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৫।

এমন নয় যে নিম্ন ভিত্তির কারণে জুলাই মাসে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার কমেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬৭ দশমিক ৪০। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ৯৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।\

উচ্চ হারের মূল্যস্ফীতি থেকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসা বিশেষ ঘটনাই বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে শ্রীলঙ্কা সরকার মূল্যস্ফীতির ভিত্তিবছর ২০১৩ সাল বদলে ২০২১ সাল করেছে।

শ্রীলঙ্কার ব্রোকারেজ হাউস অ্যাকুইটি স্টক ব্রোকারের গবেষণাপ্রধান শিহান কুরে দ্য ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির হার প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুতগতিতে কমছে। অংশত এর কারণ হচ্ছে শ্রীলঙ্কার রুপির দরবৃদ্ধি, যে কারণে আমদানি ব্যয় কমেছে।’

শিহান কুরে আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, মূল্যস্ফীতির হার এভাবে কমতে থাকবে এবং বছরের শেষ নাগাদ তা ৫ শতাংশের ঘরে নেমে আসবে।’

এ বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে ২৯০ কোটি ডলারের ঋণ পেয়েছে। এরপর দেশটির অর্থনৈতিক দুর্দশা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। রিজার্ভ বৃদ্ধির কারণে মুদ্রার দর ১০ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির হার কমার পেছনে ভিত্তিবছর পরিবর্তনের প্রভাব আছে সত্য; সেই সঙ্গে শস্যের ভালো ফলন ও শক্তিশালী মুদ্রারও ভূমিকা আছে। মুদ্রা শক্তিশালী হওয়ার কারণে খাদ্য, জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যয় কমেছে।

তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসা সত্ত্বেও সরকারি হিসাবেই চলতি বছর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ২ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। গত বছর সংকুচিত হয়েছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।