বিজ্ঞান প্রযুক্তি

বিজ্ঞান ভাবনা (১০৫): ন্যাটো সম্মেলন ও সমসাময়িক ঘটনাবলী

– বিজন সাহা    

বিজন সাহা (ফাইল ছবি)

আমেরিকা ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা সরবরাহ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু রাশিয়াই নয় ন্যাটোর অনেক দেশই আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। তার মূল কারণ ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার বেসামরিক লোকদের জন্যও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এবার জানা যাক ক্লাস্টার বোমা কী? ক্লাস্টার মিউনিশন হল এক ধরণের এয়ার টু গ্রাউন্ড বা গ্রাউন্ড টু গ্রাউন্ড যুদ্ধাস্ত্র। ক্লাস্টার বোমার ভেতরে ছোট ছোট অনেক গোলাবারুদ থাকে। ক্লাস্টার বোমা বিস্ফোরণের সময় এসব সাবমিউনিশন বা ছোট ছোট গোলাবারুদ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সাধারণত সেনাবাহিনী ও যানবাহন ধ্বংস করতে এই বোমা ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া রানওয়ে ও বৈদ্যুতিক লাইন ধ্বংস করতে, রাসায়নিক ও জৈবিক অস্ত্র স্প্রে করতেও ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ক্লাস্টার বোমার ভেতরের ছোট ছোট গোলাবারুদ যেমন নিয়ন্ত্রিত হতে পারে, তেমনি অনিয়ন্ত্রিতও হতে পারে। ক্লাস্টার বোমা ফিউজের অসম্পূর্ণতার কারণে এ ধরণের অস্ত্রের বিস্ফোরণ না হবার সম্ভাবনা খুব বেশি।  তাই ক্লাস্টার বোমার ভেতরে থাকা ছোট ছোট গোলাবারুদের একটা অংশ সাথে সাথে বিস্ফোরিত হয় না, মাইন আকারে এদিক সেদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। ফলে শুধু যুদ্ধের সময়ই নয়, যুদ্ধের পরেও দীর্ঘ দিন বেসামরিক লোকজনের জীবনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেয়। এতে করে অনেক বেসামরিক মানুষ যেমন নিহত হয় তেমনি আহত হয়ে সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া যুদ্ধের পরে এসব বোমা খুঁজে বের করে ধ্বংস করা খুবই ব্যয়বহুল। এসব কারণে ২০০৮ সালে ক্লাস্টার বোমা প্রস্তুত ও তার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে এক আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় যা ক্লাস্টার বোমার উপর কনভেনশন নামে পরিচিত। ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২৩ দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।

প্রথম ক্লাস্টার বোমা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত প্রজাপতি-বোমা নামে পরিচিত জার্মানির এসডি-২। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে কম করে হলেও ২৩ দেশ ৪১ টি দেশে এই বোমা ব্যবহার করেছে। আমেরিকা ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দশকে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায়, ১৯৯০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়ায় ও একবিংশ শতকে আফগানিস্তান ও ইরাকে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে ও রাশিয়া চেচনিয়ার যুদ্ধে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ৩৪ টি দেশে বিভিন্ন ধরণের ক্লাস্টার বোমা তৈরি করা হয়। ২০১০ সালের মধ্যে ২১০ ধরণের ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয় – এদের মধ্যে ছিল গ্রেনেড, রিয়াক্টিভ গোলাবারুদ, বোমা, রকেট ও ক্লাস্টার ক্ষেপণাস্ত্র। প্রায় ৮৭ দেশের অস্ত্রাগারে ক্লাস্টার বোমা মজুত ছিল।  ২০১০ সালের পরে আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, ইয়েমেন ও ইউক্রেনে ক্লাস্টার বোমা  ব্যবহৃত হয়েছে। ২০২১ সালের জরীপ অনুযায়ী ১৬ দেশ ক্লাস্টার যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করে বা করার পরিকল্পনা করছিল। আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, ব্রাজিল, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল সহ ৭৪ দেশ এখনও ক্লাস্টার বোমা নিষিদ্ধকরণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি। রাশিয়া ও চীন নতুন ধরণের ক্লাস্টার বোমা তৈরি করার পরিকল্পনা করছে বলে জানা যায়।

ক্লাস্টার বোমার ব্যবহার যেহেতু আন্তর্জাতিক আইন দ্বারা নিষিদ্ধ তাই অনেকের মতে আমেরিকা ও ইউক্রেন উভয় দেশই আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত বছর হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র প্সাকিকে  এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন রাশিয়া বা অন্য কোন দেশ যদি এই বোমা ব্যবহার করে সেটা হবে দ্বন্দ্বনীয় অপরাধ। কারণ আন্তর্জাতিক আইন শুধু ক্লাস্টার বোমা তৈরিই নয় এর ব্যবহারও নিষিদ্ধ। পেন্টাগনের মুখপাত্র কিরবি অবশ্য বলেছেন আমেরিকান ক্লাস্টার বোমা ততটা ধ্বংসাত্মক নয় যতটা রাশিয়ান ক্লাস্টার বোমা, তাই তিনি ইউক্রেন কর্তৃক এর ব্যবহারে তেমন কোন সমস্যা দেখেন না। তার ভাষ্যমতে আমেরিকান ক্লাস্টার বোমা প্রায় পুরোটাই বিস্ফোরিত হয়, ১-২% যেটা হয় না সেটা সাধারণ মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। তাই রাশিয়া যদি ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করা হবে সেটা হবে অপরাধ, আমেরিকান বোমার ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য নয়। তবে মার্কিন সাংবাদিকদের মতে আমেরিকান ক্লাস্টার বোমার প্রায় ১৪% অবিস্ফোরিত থেকে যায়। এ ব্যাপারে ব্রিটেন, জার্মানি, স্পেন অনেক দেশই বলেছে তারা কোন মতেই আন্তর্জাতিক চুক্তি ভাঙবে না। ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেয়া তাই তারা সমর্থন করে না। আমেরিকা অবশ্য বলেছে জেলেনস্কি তাদের আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়ান টেরিটোরিতে ও সিভিল এলাকায় এই বোমা ব্যবহার করবে না। তবে কে না জানে জেলেনস্কি কখনই কথা রাখে না। ইউক্রেন সেনারা যতটা না রুশ সেনাদের উপর আক্রমণ করে তারচেয়ে  বেশি আক্রমণ করে বেসামরিক নাগরিকদের উপর। এটা বলার কারণ মনে হয় এ নিয়ে কোন সমস্যা হলে সেটা যাতে জেলেনস্কি বা ইউক্রেনের নেতৃত্বের উপর চাপিয়ে দেয়া যায় সেই পথ পরিস্কার করা। তবে শুধু ইউরোপেই নয় আমেরিকায়ও ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেবার সিদ্ধান্ত বিতর্কের ঝড় তুলেছে। এমনকি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির অনেকেই এর বিরোধিতা করছে কেননা তাদের মতে আমেরিকা যে মানবিক রাজনীতির কথা বলে এটা তার সাথে যায় না। তবে ভিলনুসে ন্যাটোর সম্মেলনে আমেরিকা অন্যদের সম্মতি আদায় করতে সমর্থ হয়েছে। তাই ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দেয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। রাশিয়া বলেছে সে নিজেও প্রয়োজনে ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করার বিষয়টা খোলা রাখবে। ফলে বেসামরিক লোকজনদের মাঝে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলেই অনেকের ধারণা। তবে এখানে অনেক বিশেষজ্ঞই আমেরিকার এই কাজে বিস্মিত হননি। তাদের কথায় আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে অ্যাংলো-স্যাক্সরা তাদের বাইরে সকল জাতির প্রতিই চরম রকমের অনৈতিক। এটা বলা যায় তাদের সারবত্তা বা এসেন্স। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে তারা এটা দেখিয়েছে। আমেরিকান ইন্ডিয়ান, অস্ট্রেলীয় আদিবাসী, আফ্রিকান, এমনকি ভারত উপমহাদেশের মানুষদের প্রতি তাদের ব্যবহার কখনই মানবিক ছিল না। নিজেদের জন্য যে সাম্য বা গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা তারা বলে অন্যদের ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও তারা দেখায় না। এমন কোন অপরাধ বা দুর্নীতি নেই যা তারা নিজেদের স্বার্থে এসব দেশে করেনি, করে না। এমনকি এখনও কোন দেশ নিজেদের জাতীয় স্বার্থে রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখলে বা পশ্চিমা বিশ্বের কথামত না চললে তাদের উপর বিভিন্ন ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন দেশে সরকার বদলাতে বা এসব দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে এতটুকু দ্বিধা বোধ করে না। যাদের সভ্যতার ভিত্তিই অন্যদের উপর জুলুম আর লুটপাট, নিজেদের স্বার্থে যেকোনো পন্থা অবলম্বন তাদের কাছ থেকে কোন ধরণের নৈতিকতা আশা করা আসলে নিজেকে প্রতারণা করা। সেদিক থেকে এরা স্ট্যালিনবাদী – «লক্ষ্য অর্জনে সমস্ত উপায়ই ভাল। »

পড়ুন:  বিজ্ঞান ভাবনা (১০৬):বইয়ের পাতা থেকে-বিজন সাহা

ইউক্রেনের অনেক আশা ছিল ভিলনুসে তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লে ছিঁড়তেও পারে। সে আশার গুঁড়ে বালি। রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে না জিতলে কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পারবে কি তারা অসাধ্য সাধন করতে? যত দিন যাচ্ছে ইউক্রেন জনবল হারাচ্ছে। এভাবে চললে কিছুদিন পরে যুদ্ধ করার কেউ থাকবে না। আর রাশিয়া? রাশিয়াও হারাচ্ছে কিন্তু অর্জন করছে অমূল্য অভিজ্ঞতা যা তাদের ন্যাটোর সাথে যুদ্ধে সাহায্য করবে। না, রাশিয়া ন্যাটোর সাথে লড়াইয়ে নামতে চায় না, তবে ভিলনুসে ন্যাটো নেতাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় তারা রাশিয়াকে ন্যাটোর সাথে যুদ্ধে না নামিয়ে ক্ষান্ত হবে না। আর তাই যদি হয় যুদ্ধে অভিজ্ঞ রাশিয়ান সেনারা এগিয়ে থাকবে। যদিও মনে করা হত বর্তমানে কন্টাক্ট ওয়ারের দিন শেষ কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধ দেখাল সেটা শেষ নয় বরং নতুন মাত্রা পেয়েছে। এতদিন পর্যন্ত ন্যাটো যদি রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চাইত এখন তারা রাশিয়াকে প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। বাড়ছে সামরিক বাজেট। তবে ন্যাটো এখনও পর্যন্ত চাইছে নিজেদের সৈন্য ব্যবহার না করে ইউক্রেনের হাত দিয়ে রাশিয়াকে পরাজিত করতে। কিন্তু সেটা প্রায় অসম্ভব। অনেকেই অবাক হয় এই ভেবে যে পশ্চিমা বিশ্বের শেষ ইউক্রেনিয়ান পর্যন্ত যুদ্ধ করার এই খায়েশ দেখে ইউক্রেনবাসী কেন প্রতিবাদ করে না। কিভাবে করবে? আজ এই যুদ্ধের কারণে শুধু ইউক্রেন নয় সারা বিশ্ব তো বটেই এমনকি ইউরোপ ও আমেরিকার মত ধনী দেশগুলোর জনগণের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। কিন্তু কয়জন এই যুদ্ধের বিরোধিতা করছে? তাদের সামনে এখন একটাই মূলা ঝুলছে – রাশিয়া হঠাও। যতক্ষণ পর্যন্ত রাশিয়া আছে ততক্ষণ পর্যন্ত শান্তি নেই। সেটা ঠিক। কারণ পশ্চিমা বিশ্বের একচ্ছত্র আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে একমাত্র রাশিয়া। তাই একবার যদি রাশিয়াকে নাই করে দেয়া যায় সারা বিশ্ব তাদের পদানত। সুতরাং যুদ্ধ চলবেই।

গত মাসের শেষের দিকে সিআইএর প্রধান বার্নস রাশিয়ার এক্সটারনাল গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান নারিশকিনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। অজুহাত ছিল ২৪ জুনের ভাগনার বিদ্রোহ। তবে কথা হয়েছে ইউক্রেন নিয়ে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন পশ্চিমা পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন ধরণের খবর আসছে। কেউ কেউ বলছে ইসরাইলের মত সমাধান, মানে ইউক্রেনকে এতটাই শক্তিশালী করা যেন রাশিয়া যুদ্ধ চালিয়ে যেতে না পারে। সবাই জানে ইসরাইলের শক্তির মূলে অনেক কিছুর সাথে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র। ইউক্রেন এর আগে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির ইচ্ছে জানিয়েছে। পশ্চিমা বিশ্ব সেটাতে রাজী হলেও রাশিয়া কি রাজী হবে? তাই এই প্ল্যান কতটুকু কার্যকরী হবে সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। কেউ বলছে জার্মানি টাইপের সমাধান। যখন জার্মানি দুই ভাগে বিভক্ত ছিল তখন পশ্চিম জার্মানি ন্যাটোর সদস্য ছিল আর পূর্ব জার্মানি ওয়ার্স জোটের। মানে ইউক্রেনকে আংশিক ভাবে ন্যাটোতে নেয়া। এর মানে  দনবাস, হেরশন, জাপারোঝিয়ার উপর দাবি ত্যাগ করা। তবে অধিকাংশ রাশানই মনে করে ইউক্রেনে কোন মতেই কোন পশ্চিমা ঘাঁটি করতে দেয়া ঠিক হবে না, সেটা সব সময়ই রাশিয়ার জন্য হুমকির কারণ হবে। তাই ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব বিভিন্ন ভাবে যুদ্ধ বিরতির চেষ্টা করলেও রাশিয়া সেটা করবে কিনা কে জানে। তাছাড়া আগামী বছর আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাটদের যুদ্ধ খুবই প্রয়োজনীয় অস্ত্র হতে পারে।

ভ্লাদিমির পুতিনের প্রেস সেক্রেটারি পেস্কভ জানিয়েছেন যে তিনি জুনের ২৯ তারিখে মানে ব্যর্থ ক্যুর চার দিন পরে প্রিগঝিন সহ ভাগনারের চারজন উচ্চপদস্থ কম্যান্ডারের সাথে দেখা করেছেন। তারা রাশিয়া ও প্রেসিডেন্টের প্রতি সম্পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখান থেকে অনেকের মনেই প্রশ্ন – প্রেসিডেন্ট ভাগনারের সাথে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরোধের পুরো চিত্রটা আগে জানতেন কি না। হয়তো তাঁকে সময় মত সবকিছু জানানো হয়নি। ফলে এই বিদ্রোহ। বর্তমানে তুরস্ক সহ বিভিন্ন দেশের কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউ-টার্ন সেই বিদ্রোহের ফল বলেই অনেকের ধারণা। কারণ এটাকে বাইরের সবাই রাশিয়ার দুর্বলতা বলে ধরে নিয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে যে ২৪ জুনের ঘটনার পরে এদের বিশ্বাস করা উচিৎ কি না? কিন্তু এরা সবাই নিজেদের রক্ত দিয়ে প্রমাণ করেছে যে এরা আসলেই দেশপ্রেমিক। হয়তো আগেই সেটাকে অন্যভাবে মিটিয়ে ফেলা দরকার ছিল। কিন্তু তাই বলে এই বিশাল সংখ্যক দক্ষ সেনার সেবা থেকে দেশকে বঞ্চিত করার সৌখিনতা করার অবস্থা কি এখন রাশিয়ার আছে। বরং এরা যদি সত্যি সত্যি যুদ্ধ করতে চায়, এদের সেই সুযোগ দেওয়া উচিৎ। এতে করে দেশ যে এখনও ঐক্যবদ্ধ সেটাই প্রমাণ হবে। তবে তারা মনে হয় যুদ্ধ করবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীনে। কারণ ইতিমধ্যেই ভাগনারের সব অস্ত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে জি-৭ দেশগুলো ইউক্রেনের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা ঘোষণা করবে বলে জানা যাচ্ছে। এর উপর মন্তব্য করতে গিয়ে পেস্কভ বলেছেন এটা সমস্যাকে আরও জটিল করবে। রাশিয়ার নিরাপত্তাকে বাইপাস করে ইউক্রেনের নিরাপত্তার কথা বলা অর্থহীন। তিনি বলেন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের ইচ্ছার কারণেই আজকের এই স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন।

যত ভালো আইডিয়াই হোক না কেন তা যদি কখনও কারো কুক্ষিগত হয়ে যায় সেটা আর সমাজের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না, কোন বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করে। লিবারেল আইডিয়া তেমনই একটা। একসময় লিবারেল আইডিয়া সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে সরকারকে অন্যায় থেকে দূরে রাখত বা অন্তত রাখার চেষ্টা করত। কিন্তু আজ সেই আইডিয়া মূলত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির কুক্ষিগত। ফলে সেটা আজ অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সারা বিশ্বের বিরুদ্ধে। এটা অনেকটা আওয়ামী লীগের একাত্তরের চেতনাকে দলীয় সম্পদ করার মত। আমেরিকার এলিট শ্রেণির একটা বিরাট অংশের পূর্বসূরিরা ছিল দাস প্রভূ। বর্তমানে মুখে মুখে জনদরদী হবার কথা বললেও মনেপ্রাণে তারা প্রভূই রয়ে গেছে। আর মালিকেরা দাসদের ততদিনই আদরযত্ন করে যতদিন দাসেরা তাদের কাজে আসে, তাদের হুকুমে ওঠবস করে। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে তাদের দাম টিস্যু পেপারের চেয়েও কম। হোসনী মোবারক, কারজাই – এমন উদাহরণ ভুরি ভুরি। তাই আজকের ইউক্রেন, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের এলিট – যারা আমেরিকার কথায় ওঠবস করছে একদিন সেটাই তাদের জন্য যে কাল হয়ে দাঁড়াবে না সেটা কে বলেবে?

গবেষক, জয়েন্ট ইনস্টিটিউট ফর নিউক্লিয়ার রিসার্চ
শিক্ষক, রাশিয়ান পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি, মস্কো