মতামত

কতিপয় বক ধার্মিকের গল্প

-ফজলুল কবির মিন্টু

-এক-

ফজলুল কবির মিন্টু (ফাইল ছবি)

আমার ছোট বেলার বন্ধু বর্তমানে একটি গ্রুপ অব কোম্পানীর একটি টেক্সটাইল কারখানায় মানব সম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসাবে কর্মরত আছে। আজ সকালে কথা প্রসঙ্গে জানালো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনে তার আমদানী-রপ্তানী সংক্রান্ত সার্টিফিকেট দরকার। এইজন্য সে সার্টিফিকেট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে যথাযথ ব্যক্তির সরনাপন্ন হলো। যথাযথ ব্যক্তিকে প্রথম দর্শনে আমার বন্ধু মুগ্ধ। মাথায় টুপি, মুখে গালভর্তি দাঁড়ী, পরিধানে পায়জামা-পাঞ্জাবী। একেবারে যেন আল্লাহর খাস বান্দা। বন্ধু মনে মনে ভাবলো আর যাই হোক। এই ব্যক্তির কাছ থেকে যথাযথ পরামর্শ পাওয়া যাবে। বন্ধু তাকে সব কিছু বিস্তারিত জানানোর পর উক্ত ব্যক্তি জানালো কোন সমস্যা নাই, সার্টিফিকেট দেওয়া যাবে শুধু সরকারী যত খরচ সব মিটিয়ে তাকে আরো ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। দেখতে এমন একজন চমৎকার মানুষের মুখে এই ধরণের অন্যায় আব্দারের কথা শুনে বন্ধু ভীষণ বিরক্ত হলো। সে ঐ অফিসের পিয়নের কাছে জানতে চাইলো এই কাজ করার মত আর কোন অফিসার আছে কিনা? পিয়ন অন্য আরেকজন লোককে দেখিয়ে দিলেন। মাশ-আল্লাহ ওনাকেও দেখতে আল্লাহর খাসবান্দার মতনই লাগছে। এবার বন্ধু একটু দ্বিধাগ্রস্ত। ঘর পোড়া গরু যেন মেঘ দেখলেও ভয় পায়। দ্বিধা এবং সংকোচ নিয়ে উনার সাথে দেখা করলেন। তার প্রয়োজনের কথা জানালেন। তিনি মনোযোগ দিয়ে তার কথা সব শুনলেন। অতঃপর তিনিও অভয় দিয়ে জানালেন কোন সমস্যা নাই। সার্টিফিকেট করে দেয়া যাবে। কিন্তু এবারের ব্যক্তি যেন আরো এক ডিগ্রী সরস। তিনি জানালেন সরকারী সকল খরচের বাহিরে ১০ হাজার টাকাতো আছেই। কিন্তু তিনি নাকি হজ্ব করতে যাবেন সেজন্য ১০ হাজার টাকার বাইরে তাকে তার হজ্বের খরচ বাবদ আরো কিছু অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে।

মহা ফ্যাসাদে আমার বন্ধু। এরমধ্যে এইসব কথা শুনে আগের অফিসার সাহেব আমার বন্ধুর দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি হাসছে। এরপর বন্ধুর অবস্থা কী হয়েছিল তা জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি। তাকে এই প্রসঙ্গে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করেই অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম ………………। মনে মনে বললাম, ধরনী দ্বিধা হও।

চলবে . . .