মতামত

পুতিনের মিউজিশিয়ানস আর্মিঃ ওয়াগনার পিএমসি

-রবি শংকর সেন নিশান

মূললেখা

দ্যা অর্কেস্ট্রা (The Orchestra)

“We know..

We are all going to hell.

But.. in hell.. we are the best..

We are the just.. best in hell..”

– জনৈক ওয়াগনার সৈন্য

We know . . we are going to hell . .

ইউক্রেনের বাখমুত ফ্রন্টে মোতায়েন হওয়ার পূর্বে সিরিয়ান সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিরিয়াতে মোতায়েন থাকা এক ওয়াগনার সেনা কর্মকর্তার খুবই সংক্ষিপ্ত অডিও ক্লিপের বক্তব্য ছিলো এটি। পরে এই ক্লিপ সরিয়ে ফেলা হয়। কথাটা কতটুকু সত্য তা তো এখন বাস্তবে প্রমাণ হয়েই গেলো। বাখমুত নামক শতাব্দীর সেরা মনুষ্যসৃষ্ট নরক এখন তারা দখল করে, রাশিয়া-কে বুঝিয়ে দিয়েছে।

ওয়াগনার প্রাইভেট মিলিটারী কোম্পানি সংক্ষেপে ওয়াগনার পিএমসি বর্তমানে পৃথিবীর খুবই চর্চিত নাম। যেকোনো মিশন বা যুদ্ধ জয়ের পর বেহালা, গিটার সহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে জয়োৎসব করে বলে তাদের দ্য অর্কেস্ট্রা সোলজার বা পুতিন’স মিউজিশিয়ানস আর্মি নামেও সম্বোধন করা হয়।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনারের চমকপ্রদ সাফল্য সবাইকে বিস্মিত করেছে।  রক্তক্ষয়ী বাখমুত মহাসমরে জয়লাভের পর ওয়াগনার নিয়ে তাই সকলেরই কমবেশি কৌতুহল আছে।

এর আরেকটি কারণ, সাড়ে নয় মাস ব্যাপী সংগঠিত বাখমুত শহরের তুমুল যুদ্ধে মানব ইতিহাসে এই প্রথম বারের মতো আমরা সম্মুখ সমরে একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন আধাসামরিক বাহিনীর কাছে বহুজাতিক বাহিনীর প্রযুক্তি দ্বারা সজ্জিত একটি রাষ্ট্রীয় পূর্ণাঙ্গ বাহিনীকে পরাজিত হওয়ার একটি বিরলতম ঘটনা ঘটতে দেখছি। এই ঘটনা আর ঘটার সম্ভাবনা কম।

ধ্বংস স্তুপে পরিনত হওয়া বাখমুত নগরী

ওয়াগনার নিয়ে সাধারণ মানুষ সাম্প্রতিক সময়ে জানলেও সামরিক পর্যবেক্ষক মহলে ওয়াগনার পিএমসি নতুন নাম নয়। রাশিয়ার সিরিয়া অভিযানের সময় থেকেই ওয়াগনার অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে। বিশেষ করে সিরিয়ায় পশ্চিমা সমর্থিত আসাদ বিরোধী বাহিনী বিস্তীর্ণ অঞ্চল দখল করে যখন রাজধানী দামেস্ক শহরের দ্বারপ্রান্তে এসে উপস্থিত হয় ঠিক তখনই দৃশ্যপটে হাজির হয় দুইটি রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী – ওয়াগনার পিএমসি এবং স্লোভানিক কর্পস। রাতারাতি পাল্টে যায় যুদ্ধ পরিস্থিতি। আসাদ সরকার রক্ষা পায়। তবে সেই যুদ্ধগুলো সম্পর্কে তেমন একটা জানা যায় না। তবে সিরিয়ান যুদ্ধে দুই ভাড়াটে বাহিনী সহ মোট চার হাজার রাশিয়ান সৈন্য অংশ নিয়েছিলো এবং যুদ্ধের ফলাফল রাশিয়ার পক্ষেই এসেছে।

ওয়াগনারকে নিয়ে কোনো সামরিক ওয়েবসাইটগুলোতে কয়েক মাস আগেও তেমন কোনো তথ্য ছিল না। আবার সামান্য যেসকল তথ্য পাওয়া গিয়েছিল তার অধিকাংশই পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হয়। বিশেষত সামরিক সক্ষমতার বিষয়ে সবাই অন্ধকারেই ছিলো। প্রকৃতপক্ষে সেভেরোদোনেৎস্কের অ্যাজট ক্যামিকেল প্লান্ট অভিযানের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ন্যাটো নিজেও ওয়াগনারকে নিয়ে গভীরভাবে  ভাবেনি। রাশিয়ান হাইকমান্ড যখন সবাইকে বিস্মিত করে বাখমুত দখলের জন্য রাশিয়ান নিয়মিত বাহিনীকে লিশিচান্সক নামক শহরে দাঁড় করিয়ে ওয়াগনারকে সামনে এগিয়ে দিয়ে দেয় তখনই ওয়াগনার বাহিনী নিয়ে নতুন করে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়। এবার অনেক তথ্যই জানা যায়। বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক বিস্ময়কর তথ্য।

কেজিবি’র রুশ প্রতিদ্বন্দ্বীঃ দ্য জিআরইউ (GRU)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি জোসেফ স্টালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন বহির্ভূত রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা, সামরিক এবং রাষ্ট্রীয় তথ্য সংগ্রহ করেই সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সোভিয়েত ব্লকের বাইরের দেশসমূহকে মার্কিন প্রভাবমুক্ত রাখা এবং সেসকল দেশসমূহে প্রয়োজনে বিশেষ সামরিক অভিযান চালানোর গুরুত্বও অনুভব করেন। ১৯৪২ সালে তাঁর সিদ্ধান্তে গঠিত হয় বিশেষ সংস্থা Main Intelligence Directorate, রুশ ভাষায় যার নাম “গ্লেভনয়ে রাজভেড্যাভাতিলিনয়ে উপ্রাভলেনিয়ে” (Glavnoye Razvedyvatel’noye Upravleniye) বা সংক্ষেপে GRU (জিআরইউ) নামক উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শতভাগ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা। সংস্থাটি সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলোতে নিজেদের এজেন্ট তৈরী করে সোভিয়েত স্বার্থ রক্ষায় কাজ করতো। ষাটের দশকে ব্রিটেনের প্রফুমো বিতর্ক এবং কিউবায় সোভিয়েত পারমাণবিক মিসাইল স্থাপনের ঘটনায় “জিআরইউ” সক্রিয় ছিলো। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর পরাজয়ের পিছনে এই গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করেছে। মূলত তাদের শিখিয়ে দেয়া সামরিক কৌশলের কাছেই মার্কিন বাহিনী পরাজিত হয়। ১৯৫৪ সালে “জিআরইউ” বাদে সোভিয়েতে সক্রিয় অপরাপর ছয়টি গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয় কেজিবি। কেজিবি সৃষ্টি হওয়ার পর থেকেই “জিআরইউ”-এর সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। কারণ “জিআরইউ” সোভিয়েত ইউনিয়ন রক্ষায় নিজেদের অবস্থান কেজিবির চেয়েও উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো। সোভিয়েত প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকলেও বলা যায় একদমই স্বাধীনভাবে নিজেদের কাজ পরিচালনা করতো। তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ছিলো স্বতন্ত্র। তারা সবাইকে সন্দেহের চোখে দেখতো। এমনকি সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সর্বোচ্চ নেতাকেও “জিআরইউ” হেড কোয়ার্টারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নানা শক্ত প্রটোকলের সম্মুখীন হতে হতো। এমনকি প্রবেশাধিকার বাতিলের ক্ষমতাও তারা সংরক্ষণ করতো। জিআরইউ’র এসকল ক্ষমতা স্টালিন স্বয়ং নিশ্চিত করেছিলেন। এই সংস্থা সৃষ্টির পর স্টালিন নিজেকেই তদন্ত বা যাচাইয়ের (স্কুটিনি) মুখে ফেলেছিলেন। কেজিবি’র প্রচন্ড বিরোধিতার কারণে এক পর্যায়ে এই সংস্থাটি তাদের সাথে বিশেষ বিশেষ কার্যক্রম সমন্বয় করতে বাধ্য হয়। কিন্তু এরপরও “জিআরইউ” নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ধরে রাখতে সমর্থ হয়। উভয় সংগঠনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং রেষারেষি অত্যন্ত বেশী ছিল।

শতাব্দীর সেরা নগর যুদ্ধে জয়লাভের পর উচ্ছ্বশিত অয়াগ্নার সৈন্য

১৯৯২ সালে সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ-এর সহকর্মী স্ট্যানিসল্যাভ নুলেভ-কে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা গ্রেফতার করে। নুলেভ “জিআরইউ”র উচ্চপদস্থ এজেন্ট ছিলেন। নুলেভের স্বীকারোক্তির মাধ্যমেই পশ্চিমা বিশ্ব প্রথমবারের মতো “জিআরইউ” সম্পর্কে জানতে পারে। নুলেভ পরে স্বপক্ষ ত্যাগ করে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে “জিআরইউ”র উপর গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। নুলেভ ধরা পরার আগ পর্যন্ত পঞ্চাশ বছর ধরে পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা সবাইকেই ঢালাওভাবে কেজিবি এজেন্ট সম্বোধন করতো। শুধু পশ্চিমা বিশ্ব নয়, সমগ্র বিশ্ব একমাত্র কেজিবি-কেই চিনতো।
গরভাচেভের আমলে যখন সোভিয়েত ভাঙন শুরু হয় তখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমরেড গেন্নাডী ইয়ান্নায়েভের নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ১৯শে আগস্ট সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির একটি অংশ এবং কেজিবি যৌথ উদ্যোগে একটি ক্যু ঘটিয়ে গরভাচেভকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ইতিহাসে এটি আগস্ট ক্যু নামেই পরিচিত। তিনদিন ধরে চলতে থাকা এই ক্যু শেষতক সফল হয়নি। পরে গরভাচেভ এক আদেশ বলে ৩রা ডিসেম্বর কেজিবি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। কেজিবি বিলীন হলেও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গোয়েন্দা সংস্থা “জিআরইউ” নিজেদের কার্যক্রম চলমান রাখে। তারা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা কেজিবি এবং জিআরইউ এজেন্টদের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত করে। আট বছরের নীরব প্রস্তুতি শেষে এই নতুন সংগঠিত সদস্যরাই ১৯৯৯ সালে আরেকটি ক্যু ঘটিয়ে ইয়েৎসেলিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে তাদের পক্ষ থেকে তৎকালীন রাশিয়ান নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখ্যসচিব পুতিনকে ক্ষমতায় বসায়। জিআরইউ এবং এফএসবি (সাবেক কেজিবি) মিলে সমগ্র রাশিয়ার উপর পুতিন এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন বলয়ের নিরঙ্কুশ প্রভাব নিশ্চিত করে। তারা চেচেন সংকট সমাধান করে নেয়। এরপর আশে বহির্বিশ্বের পালা। ২০০৩ সাল হতে রাশিয়ান হাইকমান্ড এফএসবি’র পাশাপাশি এই সংস্থাটিকে প্রচুর অর্থ খরচ করে ঢেলে সাজায়। “জিআরইউ” পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। সংস্থাটির ক্ষমতা এবং কাজের পরিধি আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

জিআরইউ, কেজিবি এবং ওয়াগনার পিএমসি

ওয়াগনার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা এবং অধিনায়ক “লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিমিত্রি ভালিরিভিচ উটকিন” ১৯৯১ সাল হতে পুনরায় সংগঠিত হওয়া এই সংস্থাটিরই একজন সদস্য। পঞ্চাশোর্ধ উটকিন চেচেন যুদ্ধের একজন সফল দলপতি। উটকিনের সামরিক নাম (Callsign) “ওয়াগনার”। অর্থাৎ উটকিনের নামেই এই বাহিনী। উটকিন এখন পর্যন্ত রাশিয়ার চার বার রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা। অথচ জাতিগত ভাবে উটকিন একজন ইউক্রেনীয়। উটকিনের চৌকস নেতৃত্বই ওয়াগনার বাহিনীকে এযাবৎ সকল সফলতা এনে দিয়েছে।
ওয়াগনার বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ষাট হাজারেরও অধিক। বিশ হাজারের মতো পেশাদার সৈন্য যেমন সাবেক কেজিবি প্রশিক্ষিত রুশ সামরিক কর্মকর্তা, সাবেক সোভিয়েত ভুক্ত রাষ্ট্রের সাবেক সেনাসদস্য, বিভিন্ন দেশে কর্মরত সাবেক কেজিবি এজেন্ট, সাবেক রুশ সেনাসদস্য এবং চল্লিশ হাজারের মতো রাশিয়ার বিভিন্ন জেল থেকে সংগ্রহ করা অপরাধীদের সমন্বয়ে বাহিনীটি গঠন করা হয়েছে। বাহিনীর প্রধান স্বত্বাধিকারী প্রিগোঝিন একজন সাবেক কেজিবি সদস্য। সোভিয়েত পতনের পর থেকে মূলত নানা সরকারি দপ্তরে খাদ্য সরবরাহের ব্যবসা করতেন। একইসাথে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে আফ্রিকান রাষ্ট্র সেন্ট্রাল আফ্রিকা’য় সমগ্র বিশ্বের অলক্ষ্যে এই বাহিনী গড়ে তোলেন।

“জিআরইউ” সদস্যরা ২০০৩ সালে শুরু হওয়া নতুন কর্মসূচীর আওতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওয়াগনার বাহিনী সহ এরকম আরো চারটি বাহিনী তৈরী করেন। অর্থাৎ ওয়াগনার সহ পুতিনের মোট পাঁচটি ভাড়াটে অনুগত বাহিনী রয়েছে।

২০১৬ সালে এই বাহিনী সেন্ট্রাল আফ্রিকা সংকটের সময় সবার সামনে আসে। এছাড়া আফ্রিকার রাষ্ট্র চাঁদ, মালি, সুদান, তানজানিয়া, লিবিয়া এবং ভেনিজুয়েলাতে বিভিন্ন সফল মিশন তারা পরিচালনা করেছে। এছাড়া সিরিয়াতে সম্মুখ সমরেও তারা দক্ষতার প্রমাণ রেখেছে। এই সবগুলোই রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র।

পরিশিষ্ট
যুদ্ধ শুরুর ছয় মাসের মধ্যেই ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চৌকস বাহিনী নব্য নাৎসি আদর্শে উজ্জীবীত অ্যাজভ ব্যাটালিয়ন মারিওপোলে চেচেন বাহিনীর কাছে পরাস্ত হয়েছিলো। মারিওপোলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ন্যাটো সৈন্যও ছিলো।
এবার গোটা ইউক্রেন বাহিনী ও তাদের মিত্র ন্যাটোর স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ বাখমুতে ওয়াগনার বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়েছে।
পুতিন ইউক্রেন অভিযানে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ শহর মারিওপোল এবং বাখমুতে নিজ দেশের মূল সেনাবাহিনী মোতায়েন না করে কেন ওয়াগনার বা চেচেন বাহিনীর মতো আধাসামরিক বিশেষ বাহিনীর উপর নির্ভর করেছে তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মূলত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্যই। সামরিক মহলে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে ন্যাটো সমরাস্ত্র, ন্যাটো প্রশিক্ষিত বাহিনী, ইউক্রেনের নিয়মিত বাহিনী, স্বেচ্ছাসেবীর ছদ্মবেশে সরাসরি ন্যাটো সৈন্য – কমান্ডো পুতিনের আধাসামরিক বাহিনীর সাথেও সমকক্ষ নয়। অনেক জায়গায় তারা ডোনেস্ক (DPR) আর লুহানস্কের (LPR) নবগঠিত মিলিশিয়া বাহিনীর কাছেও পরাজিত হয়েছে। ইউক্রেনীয় পক্ষত্যাগী রুশ ভাষী পুলিশ- নিরাপত্তা রক্ষী- স্থল ও নৌ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে মিলিশিয়া বাহিনীদ্বয় গঠিত হয়েছে। ইউক্রেনীয় দখলীকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদই এই বাহিনী দুইটির প্রধান অবলম্বন।
রাশিয়া গত ১০০ বছরে আমাদের সামনে যেমন সমাজতান্ত্রিক মডেলে গণবাহিনী এনেছে, তেমনি কর্পোরেট পুঁজিবাদী মডেল অনুসরণ করে মার্সেনারিজ বাহিনীও এনেছে। পাশাপাশি এনেছে সামন্তীয় ঐতিহ্যবাহী কাজাখ বাহিনী, সেই সাথে জাতিগত যুদ্ধোন্মাদ চেচেন বাহিনী। এধরণের বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে পারা তো বিস্ময়কর বৈকি!
রাশিয়া ন্যাটো বা পশ্চিমা বিশ্বকে সবক্ষেত্রে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। যুদ্ধের ময়দান থেকে, অর্থনীতি হয়ে পররাষ্ট্রনীতি সবক্ষেত্রেই রাশিয়া এখনো পর্যন্ত জিতে চলেছে।
রাশিয়ার এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি শাসিত রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের শক্তিশালী সামরিক – সামাজিক – অর্থনৈতিক অবকাঠামো। পুতিন এবং তাঁর মিত্ররা এই অবকাঠামো সমূহের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পেরেছেন। এখানেই তাঁদের সফলতা। তবে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টি’র কথা না বললেও নয়। একটি রাজনৈতিক দল পঞ্চাশ বছর পূর্বেও কতটুকু পরিমাণ অগ্রসর এবং বৈচিত্র্যময় চিন্তার অধিকারী ছিলো তা আসলেই বিস্ময়কর বটে।
বাংলাদেশে এরকম অগ্রসর-সামর্থ্যবান-প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তির উত্থান কখনো কি হবে?? হয়তো সময় এবং জনগণের উপরই উত্তরটা নির্ভর করবে।
কারণ সময় হচ্ছে সকল প্রশ্নের সঠিক এবং একমাত্র উত্তরদাতা। একতাবদ্ধ জনগণ’ই নিজেদের ইতিহাসের সফল নির্মাতা।

লেখক পরিচিতঃ
রবি শংকর সেন নিশান
তথ্য, গবেষনা এবং প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম জেলা।