মতামত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ও রাজনীতির হালচাল

— রবীন গুহ

রবীন গুহ (ফাইল ছবি)

কদিন ধরেই বাজারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশংকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জোর আলোচনা চলছিল। সরকার বিরোধী পক্ষ যেন এর জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়! যেন প্রচন্ড দাবদাহে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা! যদিও তা সরকারের পাশাপাশি জনগণের জন্যও ভোগান্তির কারণ হতে পারে, অর্থনীতিসহ মানুষের জীবেনযাত্রাতেও ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এসবই একটা দেশ ও জাতির জন্য অশুভ আলামত। তবে সরকার বিরোধী রাজনীতিবিদরা তাদের জন্য সরকার বদলের লক্ষে বড় রকমের সুযোগ হিসেবেও দেখছেন। মাঠের আন্দোলন সংগ্রামেও  এর আঁচ বোঝা যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্হানে রাষ্ট্রের পুলিশের সাথে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ লিপ্ত হওয়া বা প্রধানমন্ত্রীকে কবরে পাঠানোর মত উগ্র বাক্য প্রয়োগের মত উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃস্টি হয়েছে।

এরই ভেতরে বুধবার বাংলাদেশ সময় মধ্যরাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি জে ব্লিংকেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের অধীনে কেবলমাত্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ধরণের  ভিসা নীতি জারি করার ঘোষণা দেন। যাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করে গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্তকারী ব্যক্তি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের বিরুদ্ধে ভিসায় বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। নতুন ভিসা নীতির আওতায় বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পড়বেন। এখানে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় সে ব্যাপারও পরিস্কার ধারণা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে ভোট জালিয়াতি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনগণকে স্বাধীনভাবে সভা-সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণভাবে জমায়েত হওয়ার অধিকার থেকে বিরত রাখতে বল-প্রয়োগ বা সহিংসতা। এছাড়া আছে রাজনৈতিক দল, ভোটার, নাগরিক সমাজ এবং মিডিয়ার স্বাধীন মত প্রকাশে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরির যে কোনো পদক্ষেপও। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এটা  বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার জন্য  তাদের  পক্ষ থেকে একটি সিগন্যাল।

বিগত ২০১৪ ও ২০১৮ এর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর নাগরিক সমাজ ও সাধারণ জনগণের মধ্যেও দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা নিয়ে একটা উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে, আগামী বছরের নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয় সে প্রত্যাশা সবারই। তবে, এব্যাপারে বিদেশী কোন রাস্ট্রের এত বেশি আগ্রহ বা নতুন ভিসা নীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে  সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ একটা সার্বভৌম রাস্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল। অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, পশ্চিমাদের এসব মাতব্বরী দেশে দেশে ভাল কিছুই  বয়ে আনেনি! বিরোধী দলেরও এক্ষেত্রে বিদেশি শক্তির উপর ভর করে সরকার বদলের চেস্টা একদিকে যেমন নিজেদের  দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়, অন্যদিকে জনগনের শক্তির প্রতি আস্হাহীনতারও ইঙ্গিত দেয়। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলিকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লড়াই এদেশের জনগণকে সাথে নিয়ে জনগণের শক্তিতে বলীয়ান হয়েই করতে হবে। নচেৎ, অদূর ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরণের বিপর্যয়ের মুখেমুখি হতে পারে।