চলমান সংবাদ

বরগুনায় কৃষকরা পরীক্ষামূলকভাবে নতুন-নতুন জাতের ধান চাষ করে সফলতা পাচ্ছেন

জেলার কৃষকরা সফলতার সঙ্গে ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ ও ‘ভিয়েতনামি ব্লাক’ ও ‘ফাতেমা’ নামের নতুন জাতের ধান চাষে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি তারা পরীক্ষামূলকভাবে লবন সহিষ্ণু নতুন জাতের ধান চাষ করেও সফল হচ্ছেন। কৃষকদের এই নতুন-নতুন জাতের ধান চাষের সাফল্য বরগুনাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে বলে কৃষিবিদরা আশা প্রকাশ করছেন।
জেলার আমতলী উপজেলার চাওড়া কালীবাড়ি গ্রামে মোহাম্মাদ কাওসার হাওলাদারসহ কয়েকজন কৃষক নতুন জাতের ধান ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ ও ‘ভিয়েতনামি ব্লাক’ ‘ফাতেমা’ পরীক্ষামূলক চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। ইউটিউবের চাষাবাদ সংক্রান্ত ভিডিও দেখে নতুন এ ধান চাষে তিনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কাওসার জানান, ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি তিনি ৩০ মন ধান আশা করছেন। তিনি আরও জানান এ জাতগুলোতে বালাই নেই বললেই চলে। এ জাতগুলোতে ধানের ব্লাস্ট রোগ ধরে না। ‘ভিয়েতনামি ব্লাক’ চাল ডায়াবেটিস রোগের জন্য উপকারি। এ চাল বিক্রি হয় কেজি প্রতি ৬০০ টাকায়। আমতলী উপজেলায় ৭ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো এই জাতগুলো চাষ করা হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এসএম বদরুল আলম জানান, ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধুর শতবার্ষিকীতে উদ্ভাবন হওয়া ধানের জাতটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু ১০০’ রাখা হয়। এ ধান আকারে বড় এবং চিকন। বালাইমুক্ত অধিক ফলনশীল জাতটির প্রতি কৃষকদের আগ্রহ লক্ষ্যনীয়। পরিবেশ প্রতিবেশের সাথে খাপ-খাওয়া উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাতের ধান চাষ করা হলে আমাদের কোন খাদ্য ঘাটতি থাকবে না।
এছাড়াও অপরদিকে জেলার পরিত্যাক্ত লবনাক্ত জমিতে পরীক্ষামূলক লবন সহিষ্ণু ধান চাষ করেও সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা। যে সকল জমিতে ফসলই হতো না, সেখানে বিঘা প্রতি ২৩ থেকে ২৫ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন তারা।
উপকূলীয় এ অঞ্চলের কৃষকরা লবণাক্ততার কারণে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের কৃষিজমিতে ফসল ফলাতে পারেন না। অনেক জমিতেই বছরে একবার ধান চাষ করলেও তা লবণের কারণে নষ্ট হয়ে যেতো। প্রতি বছরই কৃষকদের লোকসানের ঘানি টানতে হতো। লবণাক্ত অঞ্চল খ্যাত উপকূলীয় বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার মধ্যে অন্যতম কালমেঘা ইউনিয়নের আমড়াতলা গ্রামে ফসল ফলানোই যেখানে কষ্টসাধ্য ব্যাপার, সেখানে পরীক্ষামূলক লবণ সহনশীল ও উচ্চ ফলনশীল ধান ব্রি ৬৭, ৭৪ ও ৯৭ জাতের আবাদ করে ভালো ফলন পেয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বিঘা প্রতি ২৩ থেকে ২৫ মণ ধান পাবেন বলেও আশা করছেন তারা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর পরামর্শে প্রথমবারের মতো ২০২২-২৩ বোরো মৌসুমে তারা ১০ বিঘা জমিতে ব্রি ধান ৬৭, ব্রি ধান ৭৪ ও ব্রি ধান ৯৭ জাতগুলো চাষ করেন। সবগুলো জাতের ফলনই অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এতে কৃষকরা খুশি।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর জানান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট লবণ সহনশীল অনেকগুলো জাত উদ্ভাবন করেছে। তার মধ্যে ব্রি ধান ৬৭ ও ব্রি ধান ৯৭ অন্যতম। এই জাতগুলো ৮ থেকে ১২ মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে এবং জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন। তিনি আরও বলেন, বরগুনা জেলার মতো উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলগুলোতে উন্নত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই জাতটি চাষ করতে পারলে কোনো জমি আর পতিত থাকবে না এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তায বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
জেলার পাথরঘাটার উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারজানা তাসমিন বলেন, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় লবণাক্ত জমি বেশি। এ অঞ্চলের কৃষকদের এই ধান চাষে উদ্বুদ্ধ করতে এবং আগ্রহী করতে হবে।

# বরগুনা, ১ মে, ২০২৩