শিল্প সাহিত্য

পানির নীচে শুটিং করার অভিনব স্টুডিও

চলচ্চিত্রের পর্দায় উত্তাল সমুদ্র, পানির নীচে অ্যাকশন দেখলে মনে বেশ রোমাঞ্চ জাগে৷ কিন্তু এমন দৃশ্যের শুটিং মোটেই সহজ নয়৷ বেলজিয়ামে এক অভিনব স্টুডিও সেই কাজ অনেক সহজ করে তুলছে৷

দেখলে সহজ মনে হলেও পানির নীচে ভিডিও তোলা বাস্তবে বেশ কঠিন কাজ৷ এর জন্য বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের প্রয়োজন৷ বেলজিয়ামের অনেক মানুষ পানির উপর বা নীচে ভিডিও ক্যামেরা চালাতে ওস্তাদ৷ এমনকি সেখানেই বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ‘ওয়াটার স্টুডিও’ রয়েছে৷ দশ মিটার গভীর সেই পুলের মেঝে ওঠানামা করা যায়, স্পেশাল এফেক্টের ব্যবস্থাও রয়েছে৷

উপযুক্ত আবহাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে বিরক্ত এক ক্যামেরাম্যান ও ডুবুরি এমন সমাধানসূত্র সৃষ্টি করেছেন৷ স্টুডিওর মালিক ভিম মিশিয়েল্স বলেন, ‘‘কখনো একটি মাত্র এফেক্টের জন্য দিনের পর দিন পানির মধ্যে অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ সঙ্গে আরও ৫০ জনকেও অপেক্ষা করতে হয়েছে৷ তখন মনে হলো, অনেক হয়েছে আর নয়৷ নিশ্চয় আরো ভালো উপায় রয়েছে৷”

সেই চিন্তা থেকেই বেলজিয়ামের ছোট শহর ফিলফোর্ডে শহরে ‘লাইটস স্টুডিও’ সৃষ্টি হলো৷ বাইরে থেকে অবশ্য কিছু বোঝার জো নেই৷

স্টুডিওর পুল প্রযুক্তিতে ভরা৷ ঝড় সৃষ্টি করা যায়৷ কয়েক মিটার উঁচু ঢেউ, মুষলধারে বৃষ্টিও কোনো সমস্যা নয়৷ স্টান্টম্যানরা সেই পরিস্থিতিতে কেরামতি দেখিয়ে শ্রদ্ধার পাত্র হন৷ স্টান্টম্যান হিসেবে জেপি ডে কাম মনে করিয়ে দেন, ‘‘এই ঢেউ কিন্তু মোটেই সহজ নয়৷ মনে হতে পারে, উপরে মাথা তুলে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়৷ কিন্তু তখনই অন্য ঢেউ আছড়ে পড়ে৷ নাকে পানি ঢুকে যায়৷ শান্ত থাকতে হয়, মনে আতঙ্ক এলে চলবে না৷ ঝোড়ো বাতাস, বিকট শব্দ, উঁচু ঢেউয়ের পাশাপাশি বিশাল জলকামান থেকেও পানির ধাক্কা আসে৷ সেই অবস্থায় সাঁতার কাটা আরও কঠিন৷”

স্টান্টম্যান হিসেবে জেপি অত্যন্ত শক্তপোক্ত মানুষ৷ ফলে স্টুডিওর পরিবেশে তাঁকে কতটা চাপ সামলাতে হয়, তা কল্পনা করা কঠিন নয়৷ নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ায় ও অনেক কর্মীর সহায়তায় এফেক্ট যথেষ্ট নিরাপদ করার ব্যবস্থা থাকলেও অলিম্পিকের মাপের পুলে ৬০ লাখ লিটার পানি সামলানো বেশ কঠিন কাজ৷

সৌর প্যানেল ও অন্য পরিবেশবান্ধব উপায়ে পানির তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখা হয়৷ দীর্ঘ শুটিংয়ের জন্য সেই তাপমাত্রা মনোরম হলেও অন্য সমস্যা রয়েছে৷ ডুবুরি ও অভিনেতা ক্রিস্টফ ক্যোনেন বলেন, ‘‘আমরা অভিনেতাদের এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করি৷ উপায় থাকলে প্রোডাকশনের আগেই তা শুরু হয়৷ তাদের নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের কৌশল শেখাই, শান্ত থাকার উপায় বলি এবং পানির নীচে স্কুবা ডাইভিংয়ের সময়ে কীভাবে মুখ দিয়ে বাতাস নেওয়া যায়, তাও শেখাই৷ অভিনেতাদের ভালো করে প্রস্তুত করলে অনেক সময় বাঁচে৷ কারণ এমন পরিবেশে তাদের জন্য এই অভিজ্ঞতা অত্যন্ত কঠিন৷”

এই স্টু়ডিওতে অনেক আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রের শুটিং হয়েছে৷ কলাকুশলীরা কোথায় সেই সব দৃশ্যের শুটিং করেছেন, দর্শকদের সেই ধারণা নেই৷

# সূত্রঃ ডয়চে ভেলে