শিল্প সাহিত্য স্বাস্থ্য

কলারঙ্গ

-রতন চৌধুরী

কলা এক প্রকারের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এবং বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপাদান, যথা- আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও দেহে পটাসিয়ামের আদর্শ উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কমে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। আর এই উপকারী পটাশিয়াম কলায় আছে প্রচুর পরিমাণে। গবেষকরা দেখেছেন, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের যোগান দেয়া গেলেই স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
গত কয়েকমাস আগে একজন চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম কিছু শারীরিক সমস্যা নিয়ে। তিনি বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করে বেশ কিছু ঔষধ লিখলেন। পাশাপাশি ব্যায়াম, থেরাপি ও পথ্য বলে দিলেন। পথ্যের মধ্যে ডিম ও পাকা কলা অন্যতম। সেই থেকে ডিম ও কলা খেয়েই যাচ্ছি। চিকিৎসকের ভিজিট ১০০০ টাকা, পরীক্ষানিরীক্ষার খরচ ২০০০০ এর অধিক, ২১ দিন পরে ফলোআপ ভিজিটে আরো ৫০০ টাকা, রিপোর্ট দেখতে প্রতিবার ২০০ টাকা, ঔষধের খরচ উল্লেখ নাইবা করলাম। তবে এটুকু বলা যায়, তা আকাশচুম্বী।
আজকে শুধু কলা নিয়ে কথা বলবো। ছোটোবেলায় গ্রামে নিমন্ত্রণ খেতে গেলে কলাপাতায় খেতে হতো। খনার বচনে আছে, ‘কলা রুয়ে না কেটো পাত, তাতেই কাপড়, তাতেই ভাত’। তখন বোধকরি খনার বচনকে উপেক্ষা করা হতো, আর যার কারণে কলার দাম কম ছিল। কলাচাষীদের কলা আবাদ করে পেটের ভাত জুটতো না। পরে তারা চিন্তা করলো কিভাবে এ সমস্যার সমাধান করা যায়। বহু চিন্তাভাবনা করে শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে উপনিত হলো যে, খনার বচন অক্ষরে অক্ষরে পালন করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। যা আমি এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। ওইদিন এক শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গিয়ে দেখলাম প্লাস্টিকের থালায় খাবার পরিবেশন করতে। বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময়ও মনে মনে ভেবেছি আজ হয়তো কলাপাতায় খেতে হবে। ছোটোবেলার কথা মনে হতেই পুলক অনুভব করেছিলাম। কিন্তু হায়!
কলা নিয়ে লিখতে গিয়ে একটা গল্প মনে পড়লো-
“একদিন – লেবু, কলা আর নারকেল তিনটা একসঙ্গে বসে নিজের নিজের কাহিনী শোনাচ্ছিল-
লেবু – লোকে আমাকে বড় অসহায় ভাবে মাঝবরাবর কাটে আর পুরো চিপে নেয়।
কলা – এটা তো কিছু নয়, নির্লজ্জরা আমাকে নেংটু করে খায়।
নারকেল – নিজের কাহিনী শোনাতে শোনাতে, আরে এটা তো কিছু নয়, এতো জোরে আমাকে পাথরে আছাড় মারে যে আমার সুসু বেরিয়ে যায়। সেটাকে আবার গ্লাসে নিয়ে খায়।”
গল্পটা সম্পূর্ণ রূপক। তবুও অবতারণা করলাম এজন্য যে, বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিশ্বে প্রায় ৫০টির অধিক কলার প্রজাতি পাওয়া যায় বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশে সবরি, অমৃতসাগর, অগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধসাগর, চাম্পা, চিনিচাম্পা, কবরী, চন্দন কবরী, জাবকাঠালী, এটেকলা, ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ, বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা, বিয়েরবাতি প্রভৃতি চাষ হতে দেখা যায়। আবার পার্বত্য এলাকায় বাংলা কলা, বন কলা, মামা কলা ইত্যাদি নামেও কলার কিছু বুনো জাত দেখা যায়। এই কলাগুলো খেতে হলে অবশ্যই ওটার চামড়া/ছিবড়া খুলে বা নেংটু করেই খেতে হবে। কলা হলে কি হবে, লজ্জা আছে না! ওটাকে আর নেংটু করে খেতে চাই না। চামড়াসহ খেতে পারি এমন কলার আবিষ্কার এখন সময়ের দাবী। এতে পুষ্টির পাশাপাশি দামটাও উসুল হবে বৈকি!
ওই যে আর একটি চুটকি মনে পড়লো-
“শিক্ষক: বলো তো Bachelor of Arts অর্থ কি?
ছাত্র: স্যার, Bachelor মানে ‘অবিবাহিত’, আর Arts মানে ‘কলা’। পুরো অর্থ হচ্ছে ‘অবিবাহিত কলা’।”
তো এই কলাগুলো আসলে অবিবাহিত। এজন্য লজ্জাটা একটু বেশিই।
# ড. রতন চৌধুরী ফার্মাসিস্ট, ঢাকা।