চলমান সংবাদ

প্রেক্ষিত : চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, নারীকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে চাই সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারী উন্নয়নে  সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দের আহ্বান জানিয়েছেন নারী  নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে  তারা  আজ এ আহ্বান জানান। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সুফিয়া কামাল ভবনে সংগঠনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। “অন্তর্ভূক্তিমূলক সংগঠন গড়ি, নতুন সমাজ বিনির্মাণ করি”- এই প্রতিপাদ্য নিয়ে  দেশের নারী আন্দোলনের পথিকৃৎ সংগঠন তার ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. মালেকা বানু সংবাদ সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক উম্মে সালমা বেগমের সঞ্চালনায় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যুগ্ম সম্পাদক সীমা মোসলেম।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ড. ফৌজিয়া  মোসলেম বলেন, বৈশ্বিক পরিবর্তন ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব পড়েছে আমাদের জাতীয় জীবনে। এই পরিবর্তনের  চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নারীকে উন্নয়নের মূল ধারায় অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়নে দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ। তিনি বলেন, বিশ্বের পরাক্রমশালী কর্তৃত্ববাদী শক্তি নিজেদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধির জন্য একদিকে যেমন প্রকৃতিকে ধ্বংস করছে, অন্যদিকে যুদ্ধের পেছনে সকল অর্থ ব্যয় করছে। কিন্তু নারীর জন্য কোনো বাজেট নেই। মানবসম্পদ উন্নয়ন ও  জ্ঞান বিস্তারের জন্যও কোন বাজেট নেই। ফলে সমগ্র মানবজাতিই আজ বিপন্ন, প্রতিনিয়তই তারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। তিনি এই চ্যালেঞ্জ  মোকাবেলায় নারীর একক ও সংগঠিত শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন,  নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ  ৫৩ বছর অত্যন্ত গৌরবের সাথে কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে মহিলা পরিষদ নিজস্ব লক্ষ্য বাস্তবায়নে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ  থেকে কর্মসূচি পরিচালনা করে চলেছে। তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় অগ্রগতির সাথে মানবাধিকারের ধারণা, সমতার ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মানুষের ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে সংকুচিত হচ্ছে বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার। তিনি এমন পরিস্থিতিতে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত  ও টেকসই করতে আগামী দিনের  নারী আন্দোলনের করণীয় নির্ধারণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা  মোসলেম  ঘোষণাপত্রে  নারীর অগ্রগতির সামগ্রিক  প্রেক্ষাপট, জাতীয় উন্নয়নে নারীর ভূমিকা, বিভিন্ন শ্রেণীর নারীর অধিকারহীনতা ও বৈষম্য ও বঞ্চনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।   তিনি বলেন, বর্তমান শতাব্দীর নতুন ধারার সমাজ বিকাশে নারীদের জীবনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ,  নতুন চাহিদা এবং নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নারীদের পরিবর্তিত চাহিদা ও সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে, নতুন ধারার শক্তিশালী নারী আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

ঘোষণাপত্রে প্রযুক্তিতে নারীর  সমঅংশগ্রহণ ও সমসক্ষমতা নিশ্চিত করতে নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। পাশাপাশি প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার, সামাজিক বিদ্বেষ ও ঘৃণার জন্ম দিচ্ছে,  যা সমাজকে বিভক্ত করছে। ঘোষণাপত্রে পেশাজীবীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের অধিকার আন্দোলনের কর্মীদের স্ব স্ব দাবিভিত্তিক আন্দোলনের পাশাপাশি মূলধারার নারী আন্দোলনে সকলকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পুুরো সমাজকে যুক্ত করতে হবে। তবেই নারীর মানবাধিকার আদায়ে নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারী আন্দোলন শক্তিশালী  ভূমিকা রাখতে পারবে। এসডিজির লক্ষ্য অর্জনে মানবিক সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ার জন্য সকলকে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় যুক্ত করার পথরেখা তৈরিতে সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, নারী-পুরুষের সমতাপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক মানবিক যুক্তিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে কবি সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে ১৯৭০ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। পরে সংগঠনের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মী, সংগঠনের  কেন্দ্র ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, সংগঠনের কর্মকর্তাসহ প্রায় শতাধিক জন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, আজ সকালে সংগঠন কার্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি উদ্বোধন করেন।

# ঢাকা, ৪ এপ্রিল ২০২৩