চলমান সংবাদ

বাংলার লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ জার্মানির

বাংলার লোকসংস্কৃতি সংরক্ষণের মহৎ উদ্যোগে নিয়েছে জার্মানির বিদেশমন্ত্রণালয়। লুপ্তপ্রায় উপাদানে সমৃদ্ধ হবে ভার্চুয়াল জাদুঘর।

অখণ্ড বাংলার লোকসংস্কৃতির নানা উপাদান ছড়িয়ে আছে জেলায় জেলায়। নাচ, গান, বয়ন, চিত্রন, কথকতা-সহ বিভিন্ন আঙ্গিকে যুগের পর যুগ ধরে শিকড়ের সন্ধান করে গিয়েছে মানুষ। বাংলার সেই শিল্প ও ঐতিহ্যের ধারাকে সংরক্ষণ করে সারা বিশ্বে পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এই উপলক্ষ্যে গত ১৩ মার্চ কলকাতার মধুসূদন মঞ্চে জার্মান উপদূতাবাসের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে মউ চুক্তি সই হয়েছে। ছিলেন জার্মান কনসাল জেনারেল মানফ্রেড আউস্টার। ঝুমুর, রাবণকাটা নাচ, বহুরূপী, সাপুড়িয়া গানের মতো লোকসংস্কৃতির উপাদানকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে কলকাতার সুকৃতি ফাউন্ডেশন।

হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি বাঁচাবে জার্মান সরকার: লোকশিল্প গবেষক

জার্মান উপদূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়ে হয়েছে, “আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলে সংস্কৃতি। জার্মানির বিদেশ মন্ত্রক সে কারণে বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সংরক্ষণে কাজ করে, যা নানা ভাবে ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।”

লোকসংস্কৃতির উপাদানকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে কলকাতার সুকৃতি ফাউন্ডেশন
লোকসংস্কৃতির উপাদানকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়িত করবে কলকাতার সুকৃতি ফাউন্ডেশন

প্রতি বছর বিদেশ মন্ত্রণালয় প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেয়া হয়। সেখানকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্প রূপায়িত হয়। আর্থিক অনুদান জোগায় জার্মান সরকার।

লোকসংস্কৃতির ৬২ রকমের উপাদান শনাক্ত: অভিজিৎ দাশগুপ্ত

‘কলকাতা সুকৃতি ফাউন্ডেশন’-এর প্রাণপুরুষ অভিজিৎ দাশগুপ্ত পাঁচ দশক ধরে লোকসংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছেন। তার স্বপ্নের ভার্চুয়াল জাদুঘর এবার বাস্তবায়িত হতে চলেছে জার্মান বিদেশ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে। কেমন হবে এই জাদুঘর?

অভিজিৎ ডয়চে ভেলেকে বলেন, “লোকসংস্কৃতির ৬২ ধরনের উপাদান শনাক্ত করা হয়েছে। ২৫-৩০টি কমপক্ষে এই মিউজিয়ামে জায়গা পাবে বলে আশা রাখি। বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে এই মিউজিয়াম দেখতে পাওয়া যাবে, শোনার পাশাপাশি তার সম্পর্কে জানাও যাবে।”

গত বছর পৃথিবীব্যাপী প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয় সুকৃতি ফাউন্ডেশন। তাই এই বছর তারা বার্লিনের অনুদান পাচ্ছে। এর সাহায্যে ভার্চুয়াল জাদুঘরের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যাবে বলে জানিয়েছেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত। মিউজিয়ামে লোকশিল্প ও শিল্পীর কথা তুলে ধরা হবে বাংলা, ইংরেজি ও জার্মান ভাষায়।

লোকশিল্পের দীর্ঘদিনের গবেষক শিবব্রত কর্মকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, “১০-১২ বছর আগে সুকৃতি ফাউন্ডেশনকে একটি তালিকা দিই। লোকসংস্কৃতির যে ধারা শুকিয়ে যাচ্ছে, তালিকায় তার উল্লেখ ছিল। সেগুলি ধরে রাখা প্রয়োজন। অবশেষে জার্মান সরকারের সহযোগিতায় সেই কাজ হতে চলেছে।”

ছৌ, ঝুমুর, আলকাপ, গম্ভীরা, কবিগানের মতো লোকশিল্পের চর্চা আজো হচ্ছে বাংলার জেলায় জেলায়। কিন্তু হারিয়ে গিয়েছে এমন বহু উপাদান। যেমন জেলেপাড়ার সঙ। অভিজিৎ বলেন, “জেলেপাড়ার সঙ নাচ আজ আর নেই। সরকারের বিপন্ন তকমা পাওয়া অনেক শিল্প আজ বিলুপ্ত।”

বিভিন্ন ধারার অবলুপ্তির জন্য দায়ী আধুনিক সভ্যতা, জলবায়ু পরিবর্তন, মূলবাসীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসন। এর বিপরীতে ব্যক্তিগত বা অসরকারি উদ্যোগে লোকশিল্পের সংরক্ষণের চেষ্টা তেমন সফল হয়নি। শিবব্রতের ‘ভ্রমরা’ সংগঠন এই লক্ষ্যে ছয় দশক কাজ করছে। তিনি বলেন, “কিছুটা কাজ এগোনোর পর অর্থনৈতিক সমস্যা বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। সংরক্ষণের কাজ থমকে যায় আমাদের।”

এই পরিস্থিতিতে জার্মান সরকারের সহযোগিতায় আশার আলো দেখা যাচ্ছে। শিল্পের সঙ্গে শিল্পীদেরও তুলে ধরবে জাদুঘর। অভিজিৎ বলেন, “লোকসুর ব্যবহার করে বলিউডের ৪০০ গান তৈরি হয়েছে। কিন্তু তার স্রষ্টা-শিল্পীরা যথাযোগ্য স্বীকৃতি পাননি। তাঁদের সম্পর্কেও বিশ্ববাসীকে জানাবে ভার্চুয়াল মিউজিয়াম।”

# পায়েল সামন্ত, ডয়চে ভেলে,  কলকাতা