চলমান সংবাদ

এবার আইসিইউতে ঢুকে ছাত্রলীগ কর্মীর হুমকি!

-চমেক ছাত্রাবাসে ৪ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্ত করবে অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয়ে চিকিৎসাধীন দুই শিক্ষার্থীকে এবার আইসিইউতে ঢুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে ঢুকে এ হুমকি দেয়া হয়। চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার চার শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন জাহিদ হোসেন ওয়াকিল ও সাকিব হোসেন আইসিইউতে রয়েছেন। তাদের গত বৃহস্পতিবার রাতে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

গতকাল দুপুরে কয়েকজন যুবক আইসিইউতে ঢুকে এ দুজনকে শাসায় ও হুমকি–ধমকি দেয়। বিশেষ করে মারধর করেছে এমন কারো নাম না বলতে শাসিয়ে আসে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, একজন যুবক বেডে শুয়ে থাকা সাকিবের খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। সাকিবের গায়ে হাত রেখে বেশ কিছুক্ষণ ধরে কথা বলতে দেখা যায় তাকে। ফুটেজ দেখে ওই যুবকের পরিচয় শনাক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই যুবক চমেকের ৬২তম ব্যাচের সাজু দাশ। সাজু দাশ চমেকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল অনুসারী ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। ২০২১ সালের ২৯ ও ৩০ অক্টোবর চমেক হোস্টেল ও ক্যাম্পাসে সংঘটিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মারামারির ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে ৩১ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃতদের তালিকায় সাজু দাশও ছিলেন। তাকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ রয়েছে।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই সাজু দাশ আইসিইউতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি  দাবি করেন, সাকিবসহ ওরা একই ব্যাচের। আইসিইউতে আছে শুনে তাদের দেখতে যান। সেখানে গিয়ে সাকিবের সাথে নরমাল কথাবার্তা বলেছেন। তবে তিনি দেখতে পান, সাকিব একদম নরমাল ও সুস্থ–স্বাভাবিক। কমলা খাচ্ছেন। একজন সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষকে কিভাবে আইসিইউতে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে তার বিস্তর জিজ্ঞাসা। সাজুর দাবি, তারা দুজন সুস্থ স্বাভাবিক হলেও কলেজ প্রশাসনের প্রপাগান্ডার কারণে হয়তো আইসিইউর মতো স্পর্শকাতর জায়গায় তাদের রাখা হয়েছে। অথচ, আইসিইউতে শয্যা না পেয়ে কত মুমূর্ষু রোগী মারা যাচ্ছে।

সাকিব যে শিবিরের কর্মকাণ্ডে জড়িত তার যথেষ্ট তথ্য–প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে দাবি করে সাজু দাশ বলেন, এসব তথ্য–প্রমাণ আমরা এরই মধ্যে ডিজিএফআই, এনএসআইসসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছি। আর কলেজ প্রশাসনের একটি পক্ষ শিবিরের কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, সেটি না হলে এদের মতো সুস্থ–সবল মানুষকে আইসিইউতে রাখা হতো না।

ছাত্রাবাসে নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাজু দাবি করেন, সবাই যে অভিযোগগুলো করছে, সেগুলোর আসলে কোনো তথ্য–প্রমাণ নেই। আমরা তাদের মারধর করেছি, সেটা কি তারা বলেছে? হয়তো অন্য কেউ মারতে পারে। পরে অবশ্য অন্য কেউ মেরেছে কিনা সেটি তার জানা নেই।

এদিকে, ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আইসিইউতে পুলিশ মোতায়েন করেছে চমেক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ভিডিও ফুটেজও পেয়েছি। ঘটনা জানার পরপরই পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে বলে দেয়া হয়েছে, যাতে সেখানে পুলিশ মোতায়েন থাকে। তদন্ত কমিটিকে ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কমিটি সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবে।

চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসানও সেখানে পুলিশ মোতায়েন করার কথা জানিয়েছেন।

তদন্তের দায়িত্বে ৯ সদস্যের অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটি : ছাত্রশিবিরের কর্মী সন্দেহে ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনায় জরুরি সভা আহ্বান করে চমেক কর্তৃপক্ষ। সকল শিক্ষককে নিয়ে গতকাল সকালে এ সভা হয়। সভায় আলোচনার প্রেক্ষিতে ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনাটি তদন্তে কলেজের নিয়মিত অভিযোগ নিষ্পত্তি কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ৯ সদস্যের এ কমিটির প্রধান চমেক উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. হাফিজুল ইসলাম।

এ তথ্য নিশ্চিত করে চমেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সাহেনা আক্তার বলেন, কমিটিকে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সাথে শনিবার দুপুরে আইসিইউতে গিয়ে হুমকিদানের ঘটনাটিও এই কমিটি তদন্ত করবে। তিনি বলেন, কমিটিকে আমরা ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করেছি। তারা সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলবে। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তীতে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, শিবিরের কর্মী সন্দেহে চট্টেশ্বরী সড়কে চমেক প্রধান ছাত্রাবাসে চার শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহিদ হাসান ওয়াকিল, সাকিব হোসেন, এসএ রায়হান ও মোবাশ্বির হোসেন শুভ্র নামে চার শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের তথ্য পাওয়া যায়। শিক্ষা উপমন্ত্রীর অনুসারী ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের এ অভিযোগ উঠেছে।

নির্যাতনের শিকার চারজনই কলেজের ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে ওয়াকিল ও সাকিবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তারা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। বাকি দুজন নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেছেন। এদের একজনকে বৃহস্পতিবার রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আরেকজনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। তাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছে বলে চমেক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।