মতামত

মন্দের ভালো নিয়ে আর কতকাল?

-মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

শাসনক্ষমতায় ‘মন্দের ভালো’র পেছনে ছুটে বেড়িয়ে ৯৫ শতাংশ মানুষের ভাগ্যের যে তেমন একটা এদিক-সেদিক করা সম্ভব হচ্ছে না, এই উপলব্ধি আমজনতার মাঝে ক্রমাগতভাবে প্রসারিত হচ্ছে। চতুর্দিকে বিরাজ করতে থাকা ভয়াবহ রুগ্নতার মাঝে সম্ভবত এটিই হলো দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কারণ।
সরকারি মহল থেকে ‘উন্নয়নের’ ফিরিস্তির কোনো শেষ নেই। কিন্তু আমজনতার সন্তুষ্টি উন্নয়নের পরিসংখ্যান দ্বারা সৃষ্টি হয় না। তা সৃষ্টি হয় তাদের চতুর্দিকে ঘটতে থাকা ঘটনাবলির অভিজ্ঞতা থেকে। তার আলোকেই নির্ধারিত হয় ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তারা কতটা আশাবাদী হতে পারছে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটি কী?

আশাজাগানিয়া কোনো কিছুই যে দেশে ঘটছে না, এমন কথা বলাটা নিশ্চয়ই ভুল হবে। তথাপি ‘দেশে এখন কৃষ্ণপক্ষ চলছে’ মর্মে কবি শামসুর রাহমান যে উচ্চারণ করেছিলেন, তার সে কথাও অসত্য নয়। অনেক ক্ষেত্রে কৃষ্ণপক্ষের আঁধার বরং আরও ঘনীভূত হয়েছে। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শবোধ, মানবিকতা, নারীর মর্যাদা, সামাজিক অপরাধ প্রবণতা, দুর্বৃত্তদের দৌরাত্ম্য, ঘুষ-দুর্নীতি, শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনা, প্রতারণা, লুটপাট, কালোটাকা, দমনপীড়ন, গণতন্ত্রহীনতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নৈরাজ্য – এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপই হচ্ছে। নানা কারণে জনমনে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গভীর আশঙ্কা বিরাজ করছে।

সমাজে এসব রুগ্নতা জন্ম নেওয়ার কারণ কী? কী-ই বা তার উৎসমূল? এসব মৌলিক প্রশ্নের জবাব নিহিত রয়েছে দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে। আমাদের দেশ বহুদিন ধরে ‘অবাধ পুঁজিবাদ ও মুক্তবাজার অর্থনীতি’র নীতি-দর্শন ব্যবস্থার ভিত্তিতেই পরিচালিত হচ্ছে। পঁচাত্তরের পর খুনি মোশতাকের দ্বারা সূচিত এই ব্যবস্থার ভিত্তিতেই দেশ চালিয়েছে জিয়া, সাত্তার, এরশাদ, খালেদা, হাসিনা, খালেদা-নিজামী, ফখরুদ্দীন প্রমুখের নেতৃত্বাধীন সরকার। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারও একই আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থাগত কাঠামো অনুসরণ করে দেশ চালাচ্ছে।

এই ব্যবস্থার কতগুলো বৈশিষ্ট্য হলো –

(ক) বাজারব্যবস্থা তথা ‘চাহিদা-সরবরাহ’ দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত অবাধ পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থার স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়াকর্মের ওপর নির্ভরতা।
(খ) অর্থনৈতিক কর্মকা-ে সরকারের কোনোরকম সরাসরি অংশগ্রহণ অথবা প্রত্যক্ষ ভূমিকা পরিহার করা।
(গ) অভ্যন্তরীণ বাজারকে বিদেশি পুঁজি ও পণ্যপ্রবাহের জন্য অবারিত করে দেওয়া।
(ঘ) ঢালাও বিরাষ্ট্রীয়করণ ও ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের ওপর চূড়ান্ত নির্ভরতা।
(ঙ) ব্যক্তিগত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদারীকরণ ও বিনিয়ন্ত্রণ।
(চ) অর্থনৈতিক কর্মকা- তো বটেই, স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা ও সামাজিক কার্যক্রম থেকে রাষ্ট্রের ভূমিকা অপসারণ বা হ্রাস ইত্যাদি।

এগুলো সবই হলো বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, ডব্লিউটিও এবং সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থরক্ষাকারী সংস্থাগুলোর সনাতন প্রেসক্রিপশন। এই ধারারই নানা উনিশ-বিশ সংস্করণ অনুসরণ করে গত বিভিন্ন সরকার দেশ পরিচালনা করেছে। আসলে মোটা দাগে বিবেচনা করলে আমাদের দেশ, সেই আইয়ুব-মোনায়েমি আমলসহ গোটা পাকিস্তান যুগে, এই একই আর্থ-সামাজিকব্যবস্থায় পরিচালিত হয়েছে। সুদীর্ঘ ৭ দশক ধরে চলতে থাকা সেই ধারা হলো ‘সাম্রাজ্যবাদনির্ভর লুটেরা পুঁজিবাদী ধারা।’

প্রশ্ন হলো, এতদিন ধরে পরিচালিত ‘সাম্রাজ্যবাদনির্ভর লুটেরা পুঁজিবাদী ধারা’র কাঠামোর মধ্যে থেকে, মডেলের কিছু এদিক-সেদিক করে দেশে চলতে থাকা রুগ্নতার এই বিষময় প্রবণতা দূর করা কি সম্ভব হবে। নির্মলধারায় জাতীয় পুনর্গঠন-পুনরুজ্জীবন ঘটানো কি সম্ভব হবে। না, তা সম্ভব নয়। কারণ এই ধারা অনুসরণের ফলে –

(১) পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের অন্তর্নিহিত স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত গতিশক্তি (ফুহধসরপং) আমাদের দেশের প্রান্তস্থিত অবস্থানকেই আরও প্রশস্তভাবে পুনরুৎপাদিত করতে থাকবে। আন্তঃরাষ্ট্রীয় বৈষম্যের মানদ-ে আমাদের সামগ্রিক অধঃগতি প্রসারিত হতে থাকবে।
(২) অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদেশি পণ্যের অবাধ প্রবেশাধিকার জাতীয় অর্থনীতির দৃঢ় ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও তার বিকাশকে ক্ষুন্ন করবে।
(৩) এর সঙ্গে বিদেশি পুঁজির অবাধ প্রবেশের সুযোগ যুক্ত হওয়ায় তা গোটা জাতীয় অর্থনীতিকে বিদেশনির্ভর (সাম্রাজ্যবাদী বিদেশি পুঁজিনির্ভর) করে তুলবে।
(৪) দেশে উৎপাদনশীল বিনিয়োগের তুলনায় ফটকাবাজি, পরগাছাবৃত্তি, তদবিরবাণিজ্য, বিদেশি পুঁজির কমিশন এজেন্ট হওয়া ইত্যাদি প্রবণতাই প্রধান হয়ে উঠবে।
(৫) বেপরোয়া ঘুষ-দুর্নীতি-লুটপাটের প্রবণতাগুলো অর্থনৈতিক প্রণোদনা পাবে। সমাজ ও অর্থনীতিতে অপরাধবৃত্তি বৃদ্ধি পাবে।
(৬) মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে বিপুল সম্পদের পাহাড় কেন্দ্রীভূত হতে থাকবে। বিত্তবানদের সংখ্যা ও বিত্তবৈভব বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু সেই বিত্ত বিনিয়োজিত হয়ে ‘পুঁজি’তে পরিণত হবে না।
(৭) সমাজে ধনবৈষম্য, শ্রেণিবৈষম্য বৃদ্ধি পাবে। সামাজিক নৈরাজ্যের বাস্তব উৎস ও উপাদানগুলো আরও স্ফীত হবে।
(৮) সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়ায় ‘অভ্যন্তরীণ বাজারের’ (domestic market) সম্প্রসারণ ঘটবে না
(৯) লুটপাটের অর্থনীতি থেকে জন্ম নেবে স্থূল বাণিজ্যিক বিবেচনা, যার কাছে নিঃশেষিত হতে থাকবে সমাজের যাবতীয় নীতি-নৈতিকতাবোধ।
(১০) দেশে চোখ ধাঁধানো চাকচিক্য ও মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের অকল্পনীয় ধন স্ফীতি ঘটলেও জনগণের দুয়ারে কেবল তার চুইয়ে পড়া ছিটেফোঁটা এসে পৌঁছবে।

এ অবস্থার অবসান ঘটাতে হলে তা হলে কী করতে হবে? এ প্রশ্নের জবাবে প্রথমেই যে কথা বলা যেতে পারে তা হলো – যে অর্থনৈতিক নীতি-দর্শন অনুসরণের ফলে দেশ আজ ঘোর কৃষ্ণপক্ষে আটকা পড়ে আছে, সেই ‘সাম্রাজ্যবাদনির্ভর লুটেরা পুঁজিবাদী ধারা’ থেকে দেশকে বের করে আনতে হবে। তার জায়গায় বিকল্প প্রগতিশীল নীতিব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। সেই বিকল্প নীতিব্যবস্থা কী হবে, তা নিয়ে বিতর্কের বিশেষ কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ সে বিতর্ক ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে নিষ্পন্ন হয়ে গেছে। তাই এ ক্ষেত্রে যা করণীয় তা হলো দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তথা ‘জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা’র নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

প্রচলিত অর্থনৈতিক নীতিব্যবস্থার আমূল রূপান্তরের কাজটি যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের ধারায় জাতীয় পুনরুজ্জীবনের পূর্বশর্ত, তাই জাতীয় পুনরুজ্জীবনের বিষয়টি একটি র‌্যাডিক্যাল কর্তব্যের বিষয়। এর সঙ্গে সমাজ বিপ্লবের বিষয়টি জড়িত। জাতীয় পুনরুজ্জীবনের কাজটি সম্পাদনের জন্য তাই আমূল পরিবর্তনের র‌্যাডিক্যাল দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশের সব শক্তিকে জাগিয়ে তোলা আবশ্যক। এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, চার মূলনীতির ভিত্তিতে জাতীয় পুনরুজ্জীবনের এই কাজটিকে এগিয়ে নিতে গেলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিক্রিয়াশীল শোষকশ্রেণি ও শক্তির স্বার্থকে সরাসরি ক্ষুন্ন করবে। সাম্রাজ্যবাদ, সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ, দেশীয় লুটেরা ধনিকগোষ্ঠী, তাদের দ্বারা পরিপুষ্ট গ্রাম ও শহরের কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠী এবং এদের সবার স্বার্থরক্ষাকারী রাজনৈতিক, সামাজিক, আদর্শগত শক্তির আধার – এসব শক্তির বিরুদ্ধে সে ক্ষেত্রে সরাসরি লড়াই অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠবে।

উল্লিখিত শ্রেণি ও শক্তিগুলোর বাইরে, সমাজের অন্যান্য সব শ্রেণির মানুষের কোনো না কোনো মাত্রায় স্বার্থ রয়েছে ‘জাতীয় পুনরুজ্জীবনের’ এই কাজে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে যেমন নানা দ্বন্দ্ব-বিরোধ আছে, তেমনি আছে স্বার্থের অনেক মিল ও ঐক্য। দেশের শ্রমিক, ক্ষেতমজুর, কৃষক, অন্যান্য মেহনতি মানুষ, মধ্যবিত্ত, পেশাজীবী, বিনিয়োগে আগ্রহী পুঁজিপতি, জাতীয় বুর্জোয়া প্রভৃতি শ্রেণি এই বিস্তৃত পরিধির অন্তর্গত। অবশ্য এদের পরস্পরের মধ্যে শ্রেণি স্বার্থগত নানা পার্থক্য ও বিরোধ আছে। কিন্তু একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের প্রক্রিয়ায় ও সাধারণ স্বার্থে তাদের একত্রিত হওয়ার বাস্তবতাও বিরাজ করে।

শ্রেণিস্বার্থের বিভিন্নতাকে অস্বীকার করে নয়, বরং তাকে উপযুক্তভাবে বিবেচনায় নিয়েই জাতীয় পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সমঝোতা, শক্তি-সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে। প্রচলিত ব্যবস্থার সুবিধাপ্রাপ্তদের মাঝে বা তাদের সঙ্গে সমঝোতা ও ঐক্য নয়। ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এসব সুবিধাপ্রাপ্ত শক্তির বিরুদ্ধে, বিদ্যমান ব্যবস্থার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত, বিভিন্ন শ্রেণির তথা পনেরো আনা দেশবাসীর মধ্যে।
জাতীয় পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে সমঝোতা ও ঐক্যের কর্মসূচিগত ভিত্তি কী হতে পারে? এটা নির্ধারণ সঠিকভাবে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য থাকতে হবে ভবিষ্যতের জন্য সুনিদির্ষ্ট ‘বিকল্প কর্মসূচি’। তবে সেই বিকল্প কর্মসূচি অনড়-অচল হবে না। চলার পথে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সেই কর্মসূচির উপাদানকে সৃজনশীলভাবে ক্রমাগত সমৃদ্ধ করতে হবে।

তার পরও বলা যায়, এসব উপাদানের প্রধান কয়েকটি হতে হবে –

(১) শ্রমশক্তি, মেধাপ্রতিভা, পুঁজি, জমিসম্পদ ইত্যাদি যা কিছু দেশবাসীর আছে, জাতির সার্বিক বিকাশের স্বার্থে তার সবকিছুকে উৎপাদনশীল ও সৃজনমূলক কাজে নিয়োজিত করার ব্যবস্থা করা। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমগ্র দেশবাসীকে সম্পৃক্ত করে এক ব্যাপক কর্মযজ্ঞের অভিযান পরিচালনা করা।
(২) তৃণমূল থেকে পরিকল্পনা রচনা করে এবং তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মহাপরিকল্পনার সমন্বয় ঘটিয়ে পাঁচসালা ভিত্তিতে ধাপে ধাপে দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প বাস্তবায়ন করা
(৩) সমগ্র কর্মকা-ে রাষ্ট্রীয় খাত, সমবায় খাত ও ব্যক্তি খাতের ইতিবাচক অবদান কাজে লাগানো। মনে রাখা প্রয়োজন, আমাদের দেশে বর্তমানে প্রধান দ্বন্দ্বটা রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক খাত বনাম ব্যক্তি খাতের মধ্যে নয়, প্রধান দ্বন্দ্বটা হলো উৎপাদনশীল প্রবণতা ও লুটপাটের প্রবণতার মধ্যে। এই দুরকম প্রবণতা উভয় খাতেই বিরাজ করে। উভয় খাতেই লুটপাটের ধারা কঠোরভাবে নিবৃত্ত করতে হবে এবং উৎপাদন ও বিনিয়োগমুখী ধারাকে উৎসাহ ও মদদ দিতে হবে।
৪) অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক খাতকে মূল ও চালিকাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
(৫) ভূমি সংস্কারসহ গ্রামীণ জীবন ও কৃষি অর্থনীতির আমূল ও বিপ্লবী পুনর্গঠন কাজ সম্পন্ন করা।
(৬) সমাজ, রাষ্ট্র ও প্রশাসনের গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ সুসম্পন্ন করা।
(৭) শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গৃহায়ন প্রভৃতি কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার প্রদান করা এবং এসব কার্যক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যাপক গণউদ্যোগ-কার্যক্রম সংগঠিত করা।
(৮) দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারায় ফিরিয়ে আনা। ’৭২-এর সংবিধানের মূলভিত্তি অবিকৃতভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
(৯) জনগণের সচেতনায়ন ও আত্মশক্তির জাগরণ ঘটানোর জন্য বহুমুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা। দেশে একটি প্রগতিশীল ও সামগ্রিক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা করা।
(১০) সাম্রাজ্যবাদী নিয়ন্ত্রণ, হস্তক্ষেপ ও চাপ থেকে মুক্ত থাকার ব্যবস্থা করা। জাতির স্বাধীন সত্তা ও আত্মবিকাশের জন্য আত্মশক্তির ওপর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র (বিশেষত প্রতিবেশী দেশগুলো ও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে) প্রসারিত করা।
(১১) সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনের সব ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অব্যাহত অগ্রগতি ও বিস্তৃতিকরণ নিশ্চিত করা।
(১২) জাতীয় সম্পদ ও সেবাসুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবা ও সম্পদের অধিকতর সুষম বণ্টনের নিশ্চয়তাসম্পন্ন সমন্বিত সামগ্রিক কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।
(১৩) এসবের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলকভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি কর্তব্য দৃঢ়তার সঙ্গে সম্পন্ন করা।

১৯৪৭-এর পর পার হয়ে আসা ৭০ বছরের প্রায় সমগ্র সময়কালে এ দেশের অর্থনৈতিক-সামাজিক ব্যবস্থা লুটেরা পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদনির্ভরতার ‘মন্দ পথ’ ধরেই চলেছে। এর ফলেই জন্ম নিয়েছে সমস্যা-সংকট ও অবক্ষয়-অধঃগতির অব্যাহত ধারা। এই ধারায় আটকে থাকলে ‘মন্দের ভালো’ খুঁজে বেড়ানো ছাড়া জনগণের আর অতিরিক্ত বেশি কিছু পাওয়ার থাকবে না। এই অবস্থা থেকে সত্যিকার ‘ভালো’ একটি জাতীয় পরিস্থিতিতে উত্তরণ করতে হলে প্রচলিত ‘মন্দ’ অর্থনৈতিক-সামাজিকব্যবস্থার গ-ি ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে। সে কাজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে কম কঠিন নয়।

(লেখাটি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের ফেসবুক পোষ্ট থেকে সংগৃহীত )