মতামত

তৃষ্ণা দেবীর টাকা দ্রুত পরিশোধ করুন

-ফজলুল কবির মিন্টু

আজিম গ্রুপের পরিচালনাধীন অর্কিড সোয়েটার কর্তৃপক্ষের প্রতি সবিনয় অনুরোধ দ্রুত তৃষ্ণা দেবীর টাকা পরিশোধ করুন।

জানা গেছে তৃষ্ণা দেবী ২০০৫ সালের ৫ মার্চ আপনাদের প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। ২০২১ সালের  ২৩ ডিসেম্বর ইস্তফা দেয়। আপনাদের প্রতিষ্ঠানে তার সাকুল্যে চাকরির বয়স ১৬ বছর ৯ মাস ১৯ দিন –অর্থাৎ প্রায় ১৭ বছর।

১৭ বছর চাকরি করলেও তৃষ্ণা দেবী জানেনা তার মোট মজুরি এবং মূল মজুরি কত? যদি তার মোট মজুরি ১০ হাজার টাকা হয় তাহলে মূল মজুরি হবে ৫৪৩৩ টাকা। ১৭ বছর চাকরির জন্য সে ১৭ মাসের মূল মজুরি বাবদ ৯২,৩৬১ টাকা এবং তার সাথে অব্যায়িত অর্জিত ছুটির টাকা পাবে। এখানে আমাদের সরকার বাহাদুররা ইতিমধ্যে আপনাদের বেশ সুবিধা দিয়ে রেখেছেন। তৃষ্ণা দেবী যদি ১৭ বছরে ১দিনও অর্জিত ছুটি ভোগ না করে থাকে তাহলেও সে ৪০ দিনের বেশি অর্জিত ছুটির টাকা পাবেনা। বাকী তার হিসাবে যত ছুটিই থাকুক সেগুলি পঁচে যাবে। আইন আপনাদের সেই সুযোগ দিয়েছে। তাই সেই ব্যাপারে আমরা বিশেষ কিছু বলতে চাইনা।

মাননীয় অর্কিড কর্তৃপক্ষ, আমরা জেনেছি আপনারা নাকি হাতিয়ায় ব্যাপক দান খয়রাত করেন। আপনাদের এই অঢেল সম্পত্তির উৎস জনাব আজিম সাহেব। উনার ইতিহাসতো আমরা চট্টগ্রামের মানুষেরা ভাল করেই জানি। উনি এবং সানম্যান গ্রুপের মালিক মান্নান সাহেব মিলে আজিম মান্নান গার্মেন্টস নামে একটি মাত্র গার্মেন্টস এর মাধ্যমে ব্যবসা করে এখন মাশআল্লাহ দুইজন দুইটি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক হয়েছেন।

আপনারা যদি মোটামুটি যোগ-বিয়োগ জানেন তাহলেই বুঝবেন, মাত্র একটা গার্মেন্টস থেকে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া আপনাদের মালিকদের মেধা হয়তো আছে। কিংবা আল্লাহর রহমতও হয়তো আছে। কিন্তু একটা বিষয় হলফ করে বলতে পারি শুধু মেধা এবং আল্লাহর রহমত দিয়ে কেউ এত অঢেল সম্পদের মালিক হতে পারে না যদি এর সাথে হাজার হাজার তৃষ্ণা দেবীদের মতন হতভাগ্য শ্রমিকদের শ্রম, ঘাম ও রক্ত যুক্ত না থাকে।

তাই আপনাদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ হতভাগ্য তৃষ্ণা দেবীকে দয়া করে আর হয়রানী করবেন না। শ্রম আইনে আছে চাকরি শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত পাওনা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। এই আইনতো আপনাদেরই তৈরি। আইন সভায়তো তৃষ্ণা দেবীদের মতন গরীবদের কোন স্থান নাই। গরীবের পক্ষে কথা বলারতো কেউ নাই। আপনাদের তৈরি আইনও যদি আপনারা না মানেন তাহলে তৃষ্ণারা যাবে কোথায়?

তৃষ্ণা দেবীর মোট পাওনা ১ লক্ষ টাকার মতন হতে পারে। ডলারে হিসাব করলে মাত্র ১ হাজার ডলারের কম। আপনারা নাকি এলাকায় প্রচুর দান খয়রাত করেন। আশা করি সেই তুলনায় তৃষ্ণার পাওনা টাকার পরিমান খুবই তুচ্ছ। এই তুচ্ছ পরিমান টাকা দিতে এত গড়িমছি কেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছেনা। প্রয়োজনে দান-খয়রাত কমান। কারন শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ না করে কোন দানই গ্রহণযোগ্য হবেনা

পবিত্র হাদিস শরীফে আছে শ্রমিকের ঘাম শুকাইবার আগে মজুরি পরিশোধ করতে হবে এখন তৃষ্ণা দেবীর ঘাম শুকিয়ে রক্ত পর্যন্ত শুকিয়ে যাচ্ছে।

অনেক বিলম্ব করেছেন। দয়া করে আর বিলম্ব করিয়েন না। আপনাদের কাছে চট্টগ্রামের শ্রমজীবী মানুষদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি হতভাগ্য তৃষ্ণা দেবীর টাকা দ্রুত পরিশোধ করুন।

লেখকঃ ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক ও কলামিস্ট