ক্ষমতায় গেলে ব্যাপক প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানকি সংস্কারের ঘোষণ বিএনপির
ক্ষমতায় গেলে ব্যাপক প্রশাসনিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানকি সংস্কারের ঘোষণা বিএনপির।

বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি বলেছে, আওয়ামী লীগ গত এক দশকে যে “রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংকট” তৈরি করেছে তা থেকে উত্তরণে বাংলাদেশের এখন – তাদের ভাষায় – “মেরামত” প্রয়োজন।

কীভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ‘মেরামত’ তারা করতে চায় তার জানাতে বিএনপি সোমবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তাদের ‘রাষ্ট্র সংস্কারের রূপরেখা’ ঘোষণা করেছে।

দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন তাদের ২৭ দফার রূপরেখা ঘোষণা করেন। সেখানে কার্যত বলা হয়েছে দল ক্ষমতায় গেলে তাদের প্রধান করনীয় কি হবে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য থেকে সংযুক্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

এই রূপরেখার প্রথমেই বলা হয়েছে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি, একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করবে যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সরকারের নেয়া সব সাংবিধানিক সংশোধনী এবং পরিবর্তনকে ”স্থগিত বা সংশোধন” করা হবে।

সাধু ভাষায় লিখিত এক বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিগত এক দশকের অধিক কাল-ব্যাপী আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করিয়া রাখার হীন উদ্দেশ্যে অনেক অযৌক্তিক মৌলিক সাংবিধানিক সংশোধনী আনয়ন করিয়াছে। একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করিয়া সকল বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ পর্যালোচনা করিয়া এইসব রহিত বা সংশোধন করা হইবে।”

সংবিধান ছাড়াও আরও পাঁচটি ক্ষেত্রে – আইন ও বিচার, জাতীয় আপোষ-মীমাংসা, গণমাধ্যম, প্রশাসন এবং অর্থনীতি – সংস্কারের উদ্দেশ্যে পৃথক পৃথক কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বিতর্কিত আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬ এর প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৮ বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি।

চট্টগ্রামে বিএনপির জনসভা
বিএনপি বলেছে, বর্তমানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের সাথে যেসব রাজনৈতিক দল থাকবে, তাদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে

প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা দু-দফার বেশি নয় -বিএনপি

এছাড়া, বিএনপির রূপরেখায় নির্বাচন-কালীন দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনার কথা বলা হয়েছে।

সেই সাথে, বাংলাদেশে বর্তমান ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার মেয়াদে সংস্কার আনারও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। বিএনপি বলছে পরপর দুই দফার বেশি কেউ যাতে রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী থাকতে না পারেন তা নিশ্চিত করা হবে।

মি. হোসেন বলেন, “প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি, সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনয়ন করা হইবে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের ক্ষমতা, দায়িত্ব ও কর্তব্যের সু-সমন্বয় করা হইবে। পরপর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করিতে পারিবেন না।”

এই রূপরেখায় সংসদীয় ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে দুই-কক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে সংসদে একটি উচ্চ-কক্ষ থাকবে।

সেই সাথে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২২ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।

‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে’

বিএনপি বলেছে, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিএনপি জিতলে বর্তমানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে তাদের সাথে যেসব রাজনৈতিক দল থাকবে, তাদের নিয়ে একটি জাতীয় ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে, এবং সেই জাতীয় সরকার এসব সংস্কার বাস্তবায়ন করবে।

বিএনপির রূপরেখায় রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক এবং অন্যান্য সব সরকারি প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইন বাতিল করা, এবং গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আবিষ্কার ও আহরণে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে বিএনপি।

সরকারি চাকরির বয়স-সীমা বাড়ানো এবং বেকারদের এক বছর পর্যন্ত বা চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত বেকার ভাতা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিএনপি।

যুক্তরাজ্যের এনএইচএসের আদলে সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রবর্তন করার কথা বলছে তারা। এছাড়া, নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করার কথা বলা হয়েছে।